তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন হৃদয়

তিনি আর কেউ নন বোলপুর লাগোয়া বাঁধনবগ্রামের সেই প্রতিবাদী যুবক হৃদয় ঘোষ। যিনি কিছুকাল আগেও অনুব্রতর পয়লা নম্বরের শত্রু হিসেবে রাজ্যে পরিচিত ছিলেন। রবিবার তাঁকেই দেখা গেল নিজের গ্রামে তৃণমূলের পক্ষে ভোট করাচ্ছেন। আর তাঁকে ওই দায়িত্ব দিয়েছেন অনুব্রত ওরফে কেষ্টদাই।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

পাড়ুই শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৩৮
Share:

বাঁ দিকে, ভোটের দিনে হৃদয় ঘোষ। ছবি: রণজিৎ নন্দী। ডান দিকে, সাহায্যের হাত। খয়রাশোলে দয়াল সেনগুপ্তের তোলা ছবি।

অতীত ‘ভুলে’ অনুব্রত মণ্ডলের ‘সাগরেদ’ হিসেবে ভোটের কাজ করছেন তিনি!

Advertisement

তিনি আর কেউ নন বোলপুর লাগোয়া বাঁধনবগ্রামের সেই প্রতিবাদী যুবক হৃদয় ঘোষ। যিনি কিছুকাল আগেও অনুব্রতর পয়লা নম্বরের শত্রু হিসেবে রাজ্যে পরিচিত ছিলেন। রবিবার তাঁকেই দেখা গেল নিজের গ্রামে তৃণমূলের পক্ষে ভোট করাচ্ছেন। আর তাঁকে ওই দায়িত্ব দিয়েছেন অনুব্রত ওরফে কেষ্টদাই।

কোন অতীত ভুলে যেতে চান তিনি? সেই অতীত, যা তাঁকে পিতৃহারা করেছিল। খুন হয়েছিলেন হৃদয়ের বাবা সাগর ঘোষ।

Advertisement

সাগরবাবুকে খুনের পিছনে অনুব্রত মণ্ডল জড়িত বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন হৃদয়ের পরিবার। সেই অতীত। শাসক দলের একজন কর্মী হয়েও কোনও সাহারা পাননি দলের উপর মহলের। তবুও প্রতিবাদে দৃঢ় ছিলেন। এবং বাবার হত্যার বিচার চাইতে ছুটে গিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টেও। লড়াই করেছেন বছর দুয়েক। সেই হৃদয় এখন অনুব্রত’র নির্দেশে ভোটে তৃণমূলকে জেতাতে মরিয়া।

ভুলতে বিবেকের সায় সায় মিলছে কী? ‘‘বললাম তো ও সব ভুলে গিয়েছি। এখন কেষ্টদা বলেছেন দলকে জেতাতে। সেই কাজেই এখন ব্যস্ত’’— বলছেন হৃদয়।

২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের সময়ের সেই ঘটনা আজও বাঁধনবগ্রামের বাসিন্দারা ভুলতে পারেননি। ভোটের আগে পাড়ুইয়ের কসবা পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচারে এসে অনুব্রত মণ্ডলের নির্দল প্রার্থী (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) ও পুলিশকে বোমা মারার সেই আহ্বান আজও মনে রয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের। দলের টিকিট না পেয়ে (শোনা যায়, বাগড়া দিয়েছিলেন অনুব্রত) নির্দল হয়ে পঞ্চায়েতে প্রার্থী হয়েছিলেন হৃদয়রা। অভিযোগ, সেই ‘অপরাধে’ই হামলা চালানো হয় হৃদয়ের পরিবারের উপরে। চলে গুলিও। তাতেই গুরুতর আহত হয়ে বর্ধমান হাসপাতালে মারা যান হৃদয়ের বাবা সাগরবাবু। পরে পুলিশের কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। সেই তালিকায় প্রথম নামই ছিল অনুব্রত মণ্ডলের। তারপর থেকে এককাট্টা হয়ে কেষ্টদার বিরুদ্ধে সরব ছিলেন তিনি। পরে যোগ দেন বিজেপি-তেও।

সেই তিনি-ই এখন ‘কেষ্টদা’র ঘরের ছেলে হয়েছেন। যাঁর বিরুদ্ধে এত লড়াই, দেশের সবোর্চ্চ আদালত পর্যন্ত অভিযোগ জানিয়েছিলেন। সেই অনুব্রতকেই নেতা হিসেবে মানছেন?

এক কথায় জবাব, সে সব আর মনে রাখতে চান না। বর্তমানে নানুর বিধানসভার কসবা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের দায়িত্ব পেয়ে সে কাজ সামলাতেই ব্যস্ত তিনি। কথা বলতে বলতেই বেশ কয়েক বার বেজে উঠল মোবাইল। কথার ফাঁকেই ফোন ধরে কাউকে বললেন, ‘‘বেশি বাড়াবাড়ি করিস না। কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে।’’ আরেকবার কাকে যেন বললেন, ‘‘বুথের কাছেই থাক। নজর রাখ।’’ কখনও বাঁধনবগ্রাম, কখনও কেন্দ্রডাঙ্গাল, কখনও কসবার বুথে যাচ্ছেন। এক কর্মীর কথায়, ‘‘দাদাই তো ভাট করাচ্ছেন।’’

বিবেকের জ্বালা নিয়ে তাঁর দেওয়া জবাব যে মনোঃপুত হয়নি ভেবেই হয়তো নিজের হৃদয় পরিবর্তনের একটা যুক্তিও খাড়া করার চেষ্টা করলেন হৃদয়। বললেন, ‘‘ওই লড়াই চালাতে গিয়ে দেখেছি পরিবার ও গ্রামে অশান্তি বাড়ছে। গাঁয়ে শান্তি বজায় রাখতেই সে সব ভুলে যেতে হয়েছে।’’ যোগ করলেন, ‘‘ওই জন্য গ্রামের উন্নয়নও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। এলাকার মানুষের কথা ভেবেই বাবার হত্যার প্রতিবাদে লড়াই বন্ধ রাখতে হয়েছে।’’ তা হলে এটা কী সাময়িক?

সে কথার কোনও জবাব আর দিতে চাননি। প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলেন, ‘‘এই পঞ্চায়েতে প্রায় ১২ হাজার ভোট। কেষ্টদাকে জানিয়ে দিয়েছি দলকে এখান থেকে হাজারেরও বেশি ভোটে জেতাব।’’

তবে ছেলের যে বদলই হোক না কেন, সেই ঘটনার পর থেকে রাজনীতিতে আর শ্রদ্ধা নেই হৃদয়ের মায়েরও। ছেলে এলাকায় ভোটযুদ্ধের হোতা। তবুও মা সরস্বতীদেবী ভোট দিতে যাননি। নীরব থেকেছেন হৃদয়ের হৃদয় এই ‘আকষ্মিক বদল’ নিয়েও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement