অনীহা ঝেড়ে শহরে রোড শো-য় বুদ্ধ

উনিশে এপ্রিল। ঋতুপর্ণ ঘোষের ছায়াছবি নয়! বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের রোড শো-র তারিখ। পাঁচ বছর আগে যে পথে তিনি রোড শো করেছিলেন, আবার সেই পথে। তখন ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫৫
Share:

উনিশে এপ্রিল। ঋতুপর্ণ ঘোষের ছায়াছবি নয়! বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের রোড শো-র তারিখ। পাঁচ বছর আগে যে পথে তিনি রোড শো করেছিলেন, আবার সেই পথে। তখন ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন সামনে জুড়েছে ‘প্রাক্তন’ শব্দ। তবু বুদ্ধবাবুর এই পথে নামার সিদ্ধান্ত চৈত্রের শেষ দিনে রীতিমতো স্বস্তির হাওয়া বয়ে নিয়ে এসেছে সিপিএমের অন্দরে!

Advertisement

ভোট-পর্বে আলিমুদ্দিনের অন্দরমহল ছেড়ে এই প্রথম বুদ্ধবাবু পথে নামছেন। কলকাতার উত্তর ও মধ্যাংশে ভোট ২১ এপ্রিল। সেই অংশের প্রচার যে দিন শেষ হবে, সে দিনই বিকালে দক্ষিণ কলকাতার রাস্তায় দেখা যাওয়ার কথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। ওই ১৯ তারিখ বিকালে ঢাকুরিয়া থেকে শুরু হবে বুদ্ধবাবুর রোড শো। শেষ হবে গড়িয়ায়। পথে পড়বে তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র। কসবা, যাদবপুর এবং টালিগঞ্জ। বুদ্ধবাবুর পুরনো কেন্দ্র যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী গত বার মুখ্যমন্ত্রীর রোড শো-র পুরো ভাগে শুধু নন, একই গাড়িতে ছিলেন। বুদ্ধবাবুকে নানা ভাবে বুঝিয়ে এ বারও রোড-শো-য় রাজি করানোর পিছনে তাঁর ভূমিকা রয়েছে।

দক্ষিণবঙ্গের সব জেলা থেকেই বুদ্ধবাবুকে প্রচারে চেয়ে লাগাতার আর্জি জমা পড়েছিল আলিমুদ্দিনে। দলের সিদ্ধান্ত ও নীতি নির্ধারণে সক্রিয় ভূমিকায় থাকলেও এ বার রাস্তায় বেরিয়ে ভোটের প্রচারে যেতে রাজি হচ্ছিলেন না প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। শেষ পর্যন্ত কলকাতার মধ্যেই দলের প্রার্থীদের সমর্থনে রোড শো-য় সম্মতি মিলেছে তাঁর। সুজনবাবুর কথায়, ‘‘বুদ্ধদা এই বাম, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা। শারীরিক কারণে তিনি এ বার প্রচারে বেরোতে বা জনসভা করতে পারছেন না। কিন্তু এই রোড শো-র মাধ্যমে সাধারণ মানুষও বুঝতে পারবেন, বুদ্ধদা জোটের পিছনে সক্রিয় ভূমিকাতেই রয়েছেন।’’

Advertisement

সুজনবাবুদের ধারণা, বুদ্ধবাবু অল্প সময় পথে নামলেও ভোটারদের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে। গত বার বুদ্ধবাবু যে মণীশ গুপ্তের কাছে হেরেছিলেন, এ বারও তিনিই তৃণমূল প্রার্থী। সুজনবাবুর দাবি, ‘‘মানুষ যে মণীশবাবুকে ভুল করে ভোট দিয়েছিলেন, বুদ্ধবাবুকে সামনে রেখে আমরা সেটাই বোঝাতে চাই।’’ একই কথা কসবার সিপিএম প্রার্থী শতরূপ ঘোষেরও। গত ভোটে বুদ্ধবাবু তাঁর কেন্দ্রে চারটি জনসভা ও রোড শো করেছিলেন জানিয়ে শতরূপ বলেন, ‘‘জোট সরকার গঠিত হলে শিল্পায়ন নিয়ে তাঁর অসমাপ্ত কাজগুলি যে পূরণ হবে, বুদ্ধদা পথে নামলেই মানুষ তা বুঝতে পারবেন।’’

বুদ্ধবাবুর রোড শো শেষ হওয়ার কথা গড়িয়ায়। এলাকাটি টালিগঞ্জ কেন্দ্রের মধ্যে পড়ছে। সুজন, শতরূপের পাশপাশি টালিগঞ্জের সিপিএম প্রার্থী মধুজা সেনও একই প্রচার গাড়িতে থাকবেন।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পথে নামার আগেই সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি অবশ্য দক্ষিণবঙ্গে তাঁর প্রচার কর্মসূচি শুরু করে দিয়েছেন। মধ্য হাওড়ায় জেডিইউ প্রার্থী অমিতাভ দত্ত এবং বালিতে সিপিএম প্রার্থী সৌমেন্দ্রনাথ (অঞ্জন) বেরার সমর্থনে বুধবার সন্ধ্যায় জোড়া সভায় এসেছিলেন তিনি।
মধ্য হাওড়ার সভায় ছিলেন জেডিইউয়ের সর্বভারতীয় নেতা শরদ যাদবও। দক্ষিণবঙ্গে প্রচার শুরু করে ইয়েচুরি ফের দিল্লির দাদা ও কলকাতার দিদির গড়াপেটার
প্রসঙ্গ বোঝাতে নারদ-কাণ্ডে কেন্দ্রের তদন্ত না হওয়ার কথা বলেছেন। পাশাপাশিই তাঁর মন্তব্য, ‘‘মানুষের জোটে তৃণমূল ভয় পেয়েছে। এখানে ভোটের দিন পিস্তল নিয়ে লোকজন বুথে চলে যায়! আর নির্বাচন কমিশনের সিইও-র দফতর থেকে বলা হয়, শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে!’’ বাংলার জনতার কাছে এ দিন ইয়েচুরির আবেদন, ‘‘নিজের ভোট নিজে দিন। গণতন্ত্রকে রক্ষা করুন, সাম্প্রদায়িকতা হন। বিনা লড়াইয়ে কিছুই হয় না! ভাল পশ্চিমবাংলা নিয়ে আমরা ফিরে আসব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement