বিধানসভা ভোটে কোথায় কী ঘটছে, তা জানতে কেবল ভোটকর্মীদের ভরসাতেই আর বসে থাকতে চায় না নির্বাচন কমিশন। সাধারণ মানুষও যাতে সহজেই তাঁদের খবর পৌঁছে দিতে পারেন, তার জন্য একটি মোবাইল অ্যাপ এনেছে তারা। অ্যাপের নাম ‘সমাধান’। ঠিক একইরকম ভাবে বীরভূম জেলা নির্বাচন কমিশনও নির্বিঘ্নে ভোটে করতে এ বার এনেছে অ্যাপস— ‘ভরসা’! ভোটের দিন যতো এগিয়ে আসছে, সেই ‘ভরসা’-ই ভরসা হয়ে উঠছে তাঁদের। তাই হাওয়ায় ঘুরছে কমিশনের ক্যাচলাইন— ‘‘ভোট আমার অধিকার। আমি ভোট দেব নির্ভয়ে বিবেচনার সাথে!’’
আদতে কোথাও গোলমাল দেখলে যে কেউ ‘সমাধান’ অ্যাপ-এর সাহায্যে কমিশন অফিসে ছবিও পাঠিয়ে দিতে পারবেন। এর ফলে পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। যিনি খবর বা ছবি পাঠালেন, তাঁর পরিচয় গোপন রাখবে কমিশন। কমিশন মনে করছে, এ রাজ্যে অবাধ ও নিরপেক্ষ ভাবে ভোট করাতে বিশেষ এই মোবাইল অ্যাপ-এর সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে কী আছে ‘ভরসা’ অ্যাপসে?
জেলা নির্বাচন দফতরের আধিকারিকেরা বলছেন, এটা মূলত জি টু জি (গভঃ টু গভঃ) সফটওয়্যার বা রিমোটিং টুল। ভোট সংক্রান্ত কাজে যে সব আধিকারিকেরা ফিল্ডে কাজ করছেন, যেমন সেক্টর অফিসার, ম্যাজিষ্ট্রেট, এফএসটি বা ফ্লাইং স্কোয়াডের সদস্যদরা— তাঁদের সঙ্গে জেলা নির্বাচন দফতরের সুসংহত যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতেই এই অ্যাপস। স্পট থেকেই ওই আধিকারিক বা দলের সদস্যরা দ্রুততার সঙ্গে প্রয়োজনীয় তথ্য, ভিডিও, ছবি ও রিপোর্ট জেলা নির্বাচন দফতরে পাঠাতে পারবেন। তার ভিত্তিতেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বা উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবে জেলা নির্বাচন দফতর। গত একমাসের বেশি ধরে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহৃত হচ্ছে। মূলত, ভোটারদের উৎসাহিত করতেই এই অ্যাপস এবং এবার জেলা নির্বাচন দফতরের এই ক্যাচলাইন!
কী ভাবে কাজ করবে ‘ভরসা’?
জেলা নির্বাচন দফতর জানিয়েছে, ফিল্ডে নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে যুক্ত সকল আধিকারিক ও দলের সদস্যের স্মার্টফোন বা ট্যাবে কাছে ওই অ্যাপস রয়েছে। অ্যাপস কাজ করবে ইন্টারনেট কানেকশন যুক্ত অ্যানড্রয়েড সেট বা ট্যাবে। যিনি ব্যবহার করবেন তাঁকে পাসওয়ার্ড দিয়ে অ্যাপস কার্যকর করতে হবে। অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষার জন্যই এই ব্যবস্থা। অ্যাপস ব্যবহারে প্রথম উদ্দেশ্য, এর মধ্যে দিয়ে জিআইএস সিস্টেম উন্নত করা। এর ফলে নির্বাচনের যে কোনও পর্যায়ে কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে সেটা জেলা নির্বাচন দফতরে বসেই সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সহজ। জেলায় রয়েছে ২৫২টি সেক্টর এবং দু’হাজারেরও বেশি বুথ।
জেলায় এখন প্রতিটি এলাকা ঘুরে স্পর্শকাতর এলাকা ও ব্যাক্তি চিহ্নিত করণের কাজ চলছে। কিন্তু অত্যন্ত সন্তর্পনে। কী ভাবে?
একজন সেক্টর অফিসার বলছেন, ধরা যাক কোনও এলাকায় গিয়েছি জানতে, সেই এলাকার ভোট দিতে গিয়ে কোনও সমস্যা আছে কিনা। ওই এলাকার কোনও ভোটার হয়তো বললেন যে তাঁর ভয় রয়েছে। কেন না গতবার তিনি ভোট দিতে পারেননি। প্রথমত তাঁরা নাম, বুথ নম্বর, এলাকা সব জানার পর, জানতে হবে কে বা কারা তাঁকে ভয় দেখিয়েছেন। বা কোনও ভোটার হয়তো অভিযোগ করলেন তাঁকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রলোভন দেখানো হয়েছে। যে তথ্য পাওয়া গেল সেটা রিপোর্ট আকারে পাঠানো যাবে ‘ভরসা’ অ্যাপসের মধ্যেমেই। যদি কোনও কারণে ইন্টারনেট কানেকশন বা নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে পরে পাঠানো যাবে। যখনই কোনও সেক্টর অফিসার নিজের ফোন থেকে ওই রিপোর্ট পাঠালেন সেটা ভোগলিক অবস্থান-সহ জেলা নির্বাচন দফতরে নথিভুক্ত হল। এতে জেলার মানচিত্রে একটি স্পট হিসাবে চিহ্নিত হল ওই জায়গাটি। এইভাবে সম্পূর্ণ কাজের শেষে কোন এলাকা স্পর্শকাতর, কোন বুথ স্পর্শকাতর, কোন ব্যক্তি সন্দেহজনক বা কে দুষ্কৃতী সেটাও জানা যাবে। বা নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন নিয়ে কোনও অভিযোগ করেছেন কোনও রাজনৈতিক দল, কোথায় কার বিরুদ্ধে অভিযোগ সবই রিপোর্ট আকারে পাঠানো যাবে সঙ্গে সঙ্গেই।
জেলা নির্বাচন দফতর বলছে, অ্যাপসের অনেক পর্যায় রয়েছে। যে ভাবে নির্বাচন এগিয়ে আসবে তখন অ্যাপসের সেই দিকগুলিও খুলে যাবে। যেমন কোথায় বাহিনী নিয়োগ করতে হবে, সেটা এখন জরুরি নয়। এখন জিআইএসই বলবে কোথায় কোথায় কেমন নিরাপত্তা প্রয়োজন। ওসি ইলেকশন বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। মোবাইল ট্রাকিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। কেউ কোনও বিপদে পড়লে ‘এসওওস বটন’ রয়েছে। এমনকী ক্যামেরা অ্যাক্টিভেট করা যাবে জেলা নির্বাচন দফতর থেকেই। পর্যায়ক্রমে কোনও অভিযোগের জন্য কোথায় বাহিনী প্রয়োজন তার সিদ্ধান্তও এতে নেওয়া অনেক সহজ হবে।
জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক পি মোহন গাঁধী বলছেন, ‘‘প্রতি নির্বাচনেই স্পর্শকাতর এলাকা ও হিংসাত্মক গতিবিধি সম্পন্ন ব্যাক্তি চিহ্নিত করার জন্য, কেন্দ্রীয়বাহিনীর গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য স্ট্যাটিক সারভিলিয়েন্স ও অভিযোগ নেওয়ার জন্য পৃথক পৃথক ব্যবস্থা থাকে। এই অ্যাপসের মাধ্যমে সকলকেই এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা হবে। সব রিপোর্ট ও তথ্য কম্পাইল করে তারপর চিত্র পাওয়া যেত, এবার তাতে প্রতিমূহূর্তে আমরা আপডেট থাকতে পারছি।’’