চেহারাটা তেমন বদলায়নি— গ্রামের তে-মাথার মোড়ে পুরনো বটগাছের ছায়ায় সেই মনিহারি দোকান, বাঁশের মাচা, সবুজ পানা ঢাকা পুকুর নিয়ে চৌমুহা আগের মতোই রয়ে গিয়েছে।
বছর দুয়েক আগে, যে বটতলায় তাঁর হুডখোলা জিপ দাঁড় করিয়ে সিপিএম কর্মীদের হুঙ্কার দেগে গিয়েছিলেন তাপস পাল— ‘বাড়িতে ছেলে ঢুকিয়ে রেপ করিয়ে দেব!’ স্থানীয় সাংসদের সৌজন্যে যে বটতলা তার নামটাই হারিয়ে ফেলেছিল। গ্রামবাসীরা মস্করা করতেন, ‘‘ওটা তো চন্দননগরের মালের চমকাইতলা!’’
সেই চৌমুহাতেই এ বার পাল্টা হুমকি শোনা যাচ্ছে সিপিএমের গলায়। এমনই অভিযোগ করেছে শাসক দল। বৃহস্পতিবার, তৃণমূলের জনসভা থেকে ফেরার পরে তৃণমূল কর্মী তাজু খানকে বাড়ি ঢুকে হুমকি দিয়ে গিয়েছে স্থানীয় সিপিএম নেতারা। নাকাশিপাড়া থানায় এ নিয়ে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছে তৃণমূল। অভিযুক্তদের সেই তালিকায় রয়েছেন সিপিএমের নাকাশিপাড়া জোনাল কমিটির সদস্য রফিকুল শেখ এবং তাঁর দুই আত্মীয়। যা শুনে, রফিকুল অবশ্য বলছেন, ‘‘পায়ের নীচে মাটি সরে যাচ্ছে বুঝতে পেরেই ওরা (তৃণমূল) এমন আজগুবি অভিযোগ করছে।’’ তবে, স্থানীয় গ্রামবাসীরা মনে করছেন, বিনা যুদ্ধে তারা যে আর জমি ছাড়বে না, ভোট এগিয়ে আসতেই তা ক্রমশ বুঝিয়ে দিচ্ছে সিপিএম। এর আগে তাদের একের পর এক পার্টি অফিসে তালা পড়েছে। ঘরছাড়া হয়েছে বহু পরিবার। জেতা পঞ্চায়েত
হাতছাড়া হয়েছে বিনা যুদ্ধে। আতঙ্কিত দলীয় কর্মীরা আশ্রয় খুঁজেছেন শাসক দলের সঙ্গেই।
গত লোকসভা ভোট মিটতেই এ গ্রামে দাঁড়িয়ে তাপসের হুমকি শুনে চমকে উঠেছিল গোটা দেশ। নিজেকে ‘চন্দননগরের মাল’ বলে চিনিয়ে দিয়ে তাপস জানিয়ে দিয়েছিলেন, সিপিএম কর্মীদের ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে ‘রেপ’ করিয়ে দিতেও কার্পণ্য করবেন না তিনি। দলের মহিলা কর্মীদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, দা-বঁটি দিয়ে সিপিএম কর্মীদের হাত-পা কাটার। তা নিয়ে দেশ জুড়ে উঠেছিল নিন্দার ঝড়। এমনকী মুখ পুড়ছে বুঝতে পেরে দলের ভিতরেও তাপসের নিন্দা কম হয়নি। এ বার সে গ্রামেই সিপিএমের প্লাটা হুমকির মুখে পড়ছে তৃণমূল।
যাঁকে নিয়ে এত গোলমাল সেই তাজু খান এক সময়ে সিপিএম করতেন। পালাবদলের পরে পা বাড়িয়েছিলেন তৃণমূলে। তাজু বলেন, ‘‘আমি এখন তৃণমূল করি। দল (সিপিএম) ছাড়ায় তাই কিছু দিন ধরেই আমাকে শাসাচ্ছে ওরা।’’ তিনি জানাচ্ছেন, বুধবার রাতে স্থানীয় নাগাদি বাজারে দলীয় সভা সেরে ফেরার পরে রফিকুল শেখ দলবল নিয়ে তাজুর বাড়িতে চড়াও হন। তাজু বলছেন, ‘‘তৃণমূলের মিটিংয়ে গিয়েছি বলে আমাকে গালিগালাজ করেই ক্ষান্ত হয়নি ‘দেখে নেব’ বলে হুমকিও দেওয়া হয়। ভয়ে আমি স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্য গ্রামে আছি, গ্রামে ফিরতে পারছি না।’’
সিপিএমের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছে ধানতলার আড়ংঘাটাতেও। সেখানে, বুধবার রাতে, যুব তৃণমূল নেতা প্রণব ঘোষকে মারধরের অভিযোগ সিপিএমের বিরুদ্ধে। জেলা নেতারা অবশ্য ঘটনাগুলিকে তৃণমূলের অত্যাচারের ‘মোকাবিলা’-ই বলছেন।