ভিড়ে ঠাসা সভায় বক্তব্য রাখছেন সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। সিউড়ির কালেক্টরেট মাঠে তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
ভোটের প্রচারে প্রথমবার তিনি বীরভূমে এলেন। বক্তৃতা দিলেন। তাঁকে দেখতে ও কথা শুনতে ভিড়ও হল যথেষ্ট।
কিন্তু, দিন কয়েক আগেই দলের এক শীর্ষ নেতা মহম্মদ সেলিম নানুরের সভায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে-ভাবে বদলার কথা বলেছিলেন, সেই সুর শোনা গেল না সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের গলায়। বরং বললেন, ‘‘যাঁরা অন্যায় করছেন তাঁদের বিচার করবে মানুষের জোটের সরকার। কিন্তু, কেউ তৃণমূল বলেই তিনি অচ্ছুত নন। সবাই খারাপ নন।’’
মঙ্গলবার সিউড়ি জেলাস্কুলের মাঠে নির্বাচনী জনসভা করেন সূর্যবাবু। জনসভাকে কেন্দ্র করে বাম-কংগ্রেস জোট কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দু’পক্ষের কর্মীরা ভিড় জমিয়েছিলেন নেতার বক্তব্য শোনার জন্যই। ছিল ধামসা মাদল, আদিবাসী নৃত্য কংগ্রেস ও বাম দলের হাজার পতাকা। সূর্যবাবু বলেন, ‘‘স্বৈরাচারী দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল ভাঙবে, খানখান হয়ে যাবে। আর সেই সব লোকজন নিয়ে মানুষের জোটকে আরও বড় করে তুলতে হবে। এটাই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।’’ এই পথে কে কোন দলের, সেটা বড় কথা নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘তিনি যদি মানুষ হয়ে থাকেন, খুন-ধর্ষণের আসামি না হয়ে থাকেন, যদি কোটি কোটি টাকার কালো সম্পত্তির মালিক হয়ে না থাকেন— তাঁর লড়াইয়ের জন্যই জোট। তার মধ্যে দেওয়াল তুলবেন না।’’
এই কথা শুনে হাততালিতে ফেটে পড়ে ভিড়। যার লোকসংখ্যা নিয়ে অবশ্য নানা মত উঠে আসছে। জেলা সিপিএম নেতাদের দাবি, এ দিন সভায় অন্তত ১৮ হাজার লোক এসেছিলেন। যা শুনে হাসছেন জেলা তৃণমূলের এক নেতা। বললেন, ‘‘জেলা স্কুলের ওইটুকু মাঠে আবার এত লোক হয় নাকি? বড়জোড় হাজার তিনেকের ভিড় হয়েছিল।’’ পুলিশের আবার দাবি, ছ’হাজারের মতো মানুষ এসেছিলেন সভায়।
বীরভূমে এসে সূর্যবাবু বিঁধেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। তবে, নাম না করে। নানুরে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রসঙ্গে তুলে নারায়ণগড়ের এই সিপিএম প্রার্থী এ দিন বলেন, ‘‘তৃণমূল নেত্রী বলছেন, তাঁর দলের সাত জন খুন হয়েছেন। আরে আপনি নাম দিন। হ্যাঁ, খুন হয়েছে তৃণমূলই। কিন্তু যাঁরা খুন করছে, তাঁরাও তৃণমূলের লোক! আমরা এসে আপানাদের জেলায় শান্তি মিছিল করলাম মনে নেই! নানুরে তিন তৃণমূল কর্মী খুন হয়েছিলেন। এখানকার এক এমএলএ-র অ্যাম্বুল্যান্সে থেকে গুলি চালিয়েই খুন করা হল।’’ এর পরেই অনুব্রতর প্রতি তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এখানে এক জেলা সভাপতি আছেন। একটু মোটা চেহারার, নাম মনে পড়েছে না। এ সব লোকের নাম মনে রখাতে গেলে মহপুরুষদের নাম ভুলে যাব। যাঁরা মরেছেন, বলছেন ওঁরা আমাদের দলের কেউ না।’’
এ দিনের সভামঞ্চে হাজির ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা, বাম নেতা নরেন চট্টোপাধ্যায়, সিপিআইয়ের জেলা সম্পাক অপূর্ব মণ্ডল, কংগ্রেসের জেলা সহ-সভাপতি চঞ্চল চট্টোপাধ্যায়। ছিলেন সিউড়ির প্রার্থী তথা সিপিএম নেতা রামচন্দ্র ডোম, দুবরাজপুরের ফব প্রার্থী বিজয় বাগদি এবং সাঁইথিয়ার সিপিএম প্রার্থী ধীরেন বাগদি।
ভোট লুঠ রুখে দেওয়া যে জরুরি, সেটা এ দিন বারবার দলের কর্মীদের মনে করিয়েছেন সূর্যবাবু। তিনি বলেন, ‘‘চার তারিখের পরই বুঝে গিয়েছিলাম, খালি কেন্দ্রীয় বাহিনী বা নির্বাচন কমিশনের উপর ভরসা করলে চলবে না। গণতান্ত্রিক অধিকার কারও দয়ায় নির্ভর করে না। সেটা কেড়ে নিতে হয় সঙ্ঘবদ্ধ লড়াইয়ে।’’ তাঁর সংযোজন, মুখ্যমন্ত্রী প্রথম দফায় ঘা খেয়েছেন। দ্বিতীয় দফায় আরও পিছিয়েছেন। আর তৃতীয় দফার ভোটে এই স্বৈরাচারী সরকারের কোমর ভেঙে দিতে হবে! কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর আবেদন, ‘‘আপনার ময়দানে থাকুন অতন্দ্র প্রহরীর মতো।’’
সূর্যবাবুর কথা কতটা কাজ হল, তা অবশ্য বোঝা যাবে আর ক’দিন পরেই। ১৬ এপ্রিল বীরভূমে জোটের পরীক্ষা।
পরীক্ষকের নাম?
জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল!