উন্নয়নের বেলুনে অনেক ফুটো, তাল ঠুকছে জোট

এক জন উন্নয়নের কথা ফিরি করছেন। অন্য জন উন্নয়নের ফাঁক দেখিয়ে মুচকি হাসছেন। ভোটের দিন কয়েক আগে সাগর বিধানসভার ছবিটা এমনই।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৬ ০২:২৬
Share:

এক জন উন্নয়নের কথা ফিরি করছেন। অন্য জন উন্নয়নের ফাঁক দেখিয়ে মুচকি হাসছেন। ভোটের দিন কয়েক আগে সাগর বিধানসভার ছবিটা এমনই।

Advertisement

প্রচারে বেরিয়ে বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা বুক ঠুকে বলছেন, ‘‘উন্নয়ন একেই বলে কর্তা। কপিলমুনির আশ্রমখানি দেখে আসুন।’’ মুড়িগঙ্গার ঠিক উল্টো দিকে সাগর দ্বীপের অন্তর্গত গঙ্গাসাগর পঞ্চায়েতের কপিল মুনির আশ্রম এবং তার চারপাশ সত্যি বদলে গিয়েছে। হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর উপরে সেতুর কাজ শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের টাকায়। কিন্তু এগুলির বাইরে সাগর বিধানসভার বিস্তীর্ণ এলাকায় উন্নয়ন পৌছায়নি বলেই দাবি করছে বিরোধীরা। সাগরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, এলাকা উন্নয়ন তহবিল এবং গঙ্গাসাগর-বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের মাধ্যমে সাগর ব্লকের কয়েকটি পঞ্চায়েতে উন্নয়নের কাজ হয়েছে বটে কিন্তু তার বাইরে গেলে উন্নয়নের দেখা মিলছে কই! তাই তো বঙ্কিমবাবুর প্রচারের খাতায় নামখানা, মৌসুনী বা ঘোড়ামারার মতো এলাকার জায়গা বেশ কম।

দিঘার পরেই বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত হল বকখালি। সাগর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই পর্যটনকেন্দ্র নিয়ে অভিযোগ অনেক। পর্যাপ্ত আলো, রাস্তা, জঞ্জাল সাফাইয়ের মতো জরুরি পরিষেবা এখনও পুরোপুরি তৈরি হয়নি। বাসস্ট্যান্ডের কাজ এখনও শেষ হয়নি। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে একটি হলিডে হোম তৈরির কথা থাকলেও এখনও কাজ শুরু হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের আক্ষেপ, দিঘাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। কিন্তু বকখালিতে এলে এখনও পর্যটকদের সমুদ্র সৈকত ছাড়া ঘোরার জন্য তেমন কিছুই নেই। হয়নি প্যারাগ্লাইডিং বা ওয়াটার স্পোর্টসের ব্যবস্থা। বকখালির উন্নয়ন দেখভালের দায়িত্বে থাকা গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের কোনও অফিস নেই।

Advertisement

সাগরে পান চাষ হয়। কিন্তু এই চাষেও গত পাঁচ বছরে তেমন লাভের মুখ দেখেননি চাষিরা। চাকরি না পেয়ে অনেকেই ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছেন। নামখানার মৎস্যবন্দরেরও উন্নতি হয়নি। নামখানা ব্লকের মৌসুনি দ্বীপ আয়লার পর থেকেই ভাঙনের কবলে। প্রায় প্রতি বছর এই এলাকার নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় আশপাশের এলাকা। শিবরামপুর এবং নামখানা পঞ্চায়েতের প্রায় ১৫ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কের কাজ হয়নি। পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে হরিপুরে। জোটের নেতাদের দাবি, নামখানার ৪টি অঞ্চলেই এ বার ‘লিড’ পাবেন তাদের প্রার্থী অসীম মণ্ডল। যদিও বঙ্কিমবাবু বলছেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে বিধায়ক উন্নয়ন তহবিলের ৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তার প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ হয়েছে নামখানায়। বাকিটা সাগরের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতে। জলাধার, মডেল স্কুল, আইটিআই কলেজ, কিষাণমান্ডি সব হয়েছে।’’ জোট সমর্থকেরা প্রচারে বেরিয়ে বলছেন, কাজ হয়েছে তো শুধু রুদ্রনগর থেকে গঙ্গাসাগরের মধ্যে। উত্তর সাগর এলাকায় কী হয়েছে?

সেই শুনে তৃণমূল নেতারা দেখাচ্ছেন পানীয় জলের ব্যবস্থা এবং কংক্রিটের রাস্তা। যদিও মুচকি হেসে বিরোধীদের ম্যাপ দেখিয়ে বলছেন, উন্নয়নের শুধু মুখোশটুকুই পড়ে রয়েছে। কারণ সাগরের ৮৫ কিলোমিটার কংক্রিটের রাস্তার মধ্যে উত্তর সাগরের বরাদ্দ মাত্র ৩০ কিলোমিটার। যার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। জোট প্রার্থীর ভোট ম্যানেজারদের আশা, উত্তর সাগরেও এ বার তারা ভাল ফল করবেন। সাগরে ৮টি মৎস্য সমবায় রয়েছে। রয়েছে শুটকি মাছের মৎস্যখটি। এগুলির উন্নয়ন নিয়ে অবশ্য তেমন কোনও দাবি করতে পারছে না তৃণমূল। তাদের গলার কাঁটা হয়ে রয়েছে সাগর গ্রামীণ হাসপাতালের পরিকাঠামো। অভিযোগ, অবস্থার সামান্য অবনতি হলেই রোগীদের কাকদ্বীপ বা ডায়মন্ড হারবারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

উন্নয়ন বনাম অনুন্নয়নের এই টানাপড়েনের মধ্যেই তৃণমূলকে ভাবাচ্ছে নির্দল কাঁটা। তৃণমূলের সাগর ব্লকের নেতা শঙ্খবরণ সাহু এ বার সাগরের নির্দল প্রার্থী। মুখে তাঁকে পাত্তা না দিলেও তৃণমূল নেতারা জানেন কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে কয়েক হাজার ভোট কতটা মূল্যবান। এ ছা়ড়াও রয়েছে বিজেপি, এসইউসি। সাগর জুড়ে তাদের কিছু ‘পকেট’ ভোট রয়েছে। সাগরদ্বীপে কংক্রিটের যে উন্নয়ন চোখে দেখা যাচ্ছে সেটাও তো প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্টের অভিযোগ গিয়েছে গ্রীন বেঞ্চের কাছে। ভোটে জেতার পরে পাঁচ বছরের উন্নয়ন যদি বেআইনি বলে ঘোষিত হয়ে তখন কী করবেন? বঙ্কিমবাবুর জবাব, ‘‘এই নিয়ে আমি না জেনে কোনও মন্তব্য করবো না।’’

বঙ্কিমবাবু নিজেও জানেন, এ বার লড়াই অন্য রকম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement