(বাঁ দিক থেকে) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, ওমপ্রকাশ মিশ্র ও মহম্মদ সেলিম। — বাপি মজুমদার
গন্তব্য ছিল মালদহের রতুয়া। জোটপ্রার্থী সমর মুখোপাধ্যায়ের সমর্থনে রতুয়ার ওই সভায় যাওয়ার ২৮ কিলোমিটার আগে চাঁচলে কংগ্রেস পার্টি অফিসের সামনে থেমে গেল তাঁর গাড়ি।
রায়গঞ্জ থেকে চাঁচলের ওই কংগ্রেস পার্টি অফিসের সামনে দিয়েই যেতে হয় রতুয়ায়। কিন্তু কংগ্রেস পার্টি অফিসের সামনে নেতা-কর্মীদের ভিড় দেখে নিজেই গাড়ি থেকে নেমে আসলেন। তারপর কংগ্রেস নেতাদের অনুরোধে গিয়ে বসলেন পার্টি অফিসের ভিতরেও। ফুলে-মালায় সিপিএম সাংসদকে বরণ করলেন কংগ্রেস নেতারা। তারপর ফের রতুয়ার পথ ধরলেন।
তিনি রায়গঞ্জের সাংসদ মহম্মদ সেলিম।
রতুয়ার জনসভাতেও সেলিমের একপাশে বসে জোটপ্রার্থী। অন্যপাশে জঙ্গীপুরের কংগ্রেস সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ও কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র। তাঁদের পাশে বসিয়েই তৃণমূল সরকারকে গামলার সরকার বলে কটাক্ষ করে বললেন, ‘‘আমি সেলিম। ছাত্রাবস্থা থেকে সারাজীবন বামেদের জন্য ভোট চেয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে তো কংগ্রেস। তা সত্ত্বেও জীবনে এই প্রথম কংগ্রেসের জন্য ভোট চাইছি রাজ্যের মানুষের স্বার্থে। কেন না গামলা ভরে গেলে জল উপচে পড়ে। তেমনই তৃণমূল সরকারের দুর্নীতির গামলা পরিপূর্ণ হয়ে এখন তা বাইরে বেরিয়ে পড়ছে। তাই তৃণমূল সরকারের লুঠের, ঘুষের রাজত্ব শেষ করতে হবে বলেই আমরা হাতে হাত মিলিয়ে পথে নেমেছি।’’ সেলিমের ওই কথায় সুর মিলিয়ে জয়ধ্বনি দিলেন, হাততালি ও স্লোগান দিলেন বাম ও কংগ্রেস নেতাদের পাশাপাশি জনসভায় হাজির কর্মী-সমর্থকরাও। নির্বাচনের চারদিন আগে জোটের এমন দৃঢ় ছবিটাই ধরা পড়ল চাঁচল, রতুয়ায়।
বিদায়ী কংগ্রেস বিধায়ক তথা জোটপ্রার্থী সমর মুখোপাধ্যায়ের সমর্থনে এ দিন দুপুরে রতুয়ার একটি আমবাগানে ওই জনসভার আয়োজন করা হয়। সমরবাবুর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্র জঙ্গীপুরের সাংসদ অভিজিত মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন। তিনি সমরবাবুকে কাকা বলে সম্বোধন করেন। কাকার সমর্থনে সভা করতেই সোমবার রতুয়ায় এসেছিলেন তিনি। রাতে রতুয়ার বালুপুরে সভা করলেও এ দিনের সভায় তাঁর থাকার কথা ছিল না। কিন্তু সেলিমের সভা রয়েছে জেনে তিনি থেকে যান বলে দলীয় সূত্রের খবর। গত পাঁচ বছরে মুখ্যমন্ত্রী কোনও প্রকল্প বাস্তবায়িত করেননি বলে দাবি করে অভিজিতবাবু বলেন, ‘‘যা করেছেন, তা আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। পাঁচ বছরে এই সরকার স্ক্যান্ডালের সরকারে পরিণত হয়েছে।’’
এ বার জোট জয়ী হবেই বলে দাবি করে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, ‘‘গত বিধানসভায় কংগ্রেসের হাত ধরে জিতেই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন মমতা। আর এখন তিনি জোটের জন্য কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে চলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী আসলে ভয় পেয়েছেন। কিন্তু জোটের এই নতুন সমীকরণই আগামীতে দিশা দেখাবে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘পরিবর্তন আসন্ন। কংগ্রেসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ছিল, থাকবেও। কিন্তু রাজ্যের স্বার্থে আমরা এক সুরে, এক সঙ্গে কথা বলছি, বলব।’’
হাত ধরাধরি করে বাম-কংগ্রেস নেতাদের শাসকদলকে আক্রমণের বিরুদ্ধে অবশ্য সুর চড়াতে ছাড়েননি তৃণমূল নেতারা। রতুয়ার তৃণমূল প্রার্থী শেহনাজ কাদরির নির্বাচনী প্রতিনিধি ফজলুল হক বলেন, ‘‘লাল ও তেরঙ্গা পতাকা সুতো দিয়ে বেঁধে অশুভ জোট করে ওরা মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। সেটা মানুষ বুঝে গিয়েছেন। নির্বাচনেই মানুষ তার জবাব দেবেন।’’