কোভিড মৃতদেহের সৎকারে নিমতলা শ্মশানে জ্বলছে চুল্লি। রবিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
চিতা জ্বলছে!
দূরত্ব-বিধি না মেনে আবির, মিছিল আর পটকায় গোটা শহর যখন মাতোয়ারা, তখনও চিতা জ্বলছে অবিরাম। করোনা বলে আদৌ কিছু আছে, সেটাই বোঝার উপায় নেই। বরং স্তূপ হতে থাকা মৃতদেহের ভার লাঘব করতে বাড়ানো হয়েছে চুল্লির সংখ্যা। ভিড় জমছে নিমতলা, ধাপায়। কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ডোমেদের অনেকেই।
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, ধাপায় কোভিডে মৃতদের সৎকারে নিযুক্ত ডোমেদের মধ্যে পাঁচ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দেরি না করে পুর কর্তৃপক্ষ তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তবে এ জন্য মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থাপনায় যাতে কোনও ত্রুটি না থাকে, তাই আরও কয়েক জন ডোমকে সেখানে নিয়োগ করা হয়েছে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘শুধু সংক্রমিতের সংখ্যা যে বেড়েছে, তা তো নয়। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কোভিডে মৃতের সংখ্যাও বেড়েছে। আক্রান্ত হচ্ছেন ডোমেরাও।’’
পাশাপাশি কোভিডে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন শ্মশানে চুল্লির সংখ্যা বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুর প্রশাসন। যেমন, নিমতলায় আগে শুধুমাত্র পুরনো কমপ্লেক্সের চুল্লি কোভিডে মৃতদের সৎকারের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নতুন কমপ্লেক্সের চুল্লিও এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে সেখানে মোট ১০টি চুল্লি সারাক্ষণ জ্বলছে করোনায় মৃতদের সৎকারে। একই ভাবে সিরিটি শ্মশানের দু’টি চুল্লি, বিরজুনালা শ্মশানের চুল্লিও এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ধাপায় ছ’টি চুল্লিতে সারাক্ষণ দাহকাজ হয়ে চলেছে। পাশাপাশি গড়িয়া মহাশ্মশানের চারটি চুল্লিতে রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কোভিড মৃতদেহের সৎকার হচ্ছে। পুর আধিকারিকদের একটি অংশের মতে, করোনার ‘ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার’ হিসেবে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী বা পুলিশের নাম উঠে আসে। কিন্তু প্রতিদিন কোভিড-দেহ সৎকার করে যে প্রাণপাত পরিশ্রম করে চলেছেন ডোমেরা, তাঁদের কথা শোনা যায় না। অথচ করোনা-যুদ্ধের অন্যতম সৈনিক ওঁরা। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘শুধুমাত্র কোভিড-দেহ সৎকারে প্রায় ৪০ জন ডোম নিযুক্ত রয়েছেন বিভিন্ন শ্মশানে। এঁদের মধ্যে নিমতলায় ১৬ জন, ধাপায় ১২ জন, সিরিটি ও বিরজুনালায় ৬ জন করে ডোম অবিরত কাজ করে যাচ্ছেন।’’
কিন্তু প্রায় সব চুল্লিই কোভিডে মৃতদের সৎকারে নির্দিষ্ট করা হলে নন-কোভিড মৃতদেহের দাহকাজ কী ভাবে হচ্ছে?
এ প্রশ্নের উত্তরে পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, কাশী মিত্র, রতনবাবু ঘাট ও কেওড়াতলা শ্মশান নন-কোভিড মৃতদেহের সৎকারের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখা রয়েছে। নিমতলা শ্মশানের চারটি কাঠের চুল্লিও আবার নন-কোভিড মৃতদেহ সৎকারের জন্যনির্দিষ্ট আছে। পুর প্রশাসন সূত্রের আরও খবর, শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করা, কোভিডে মৃতের সৎকারের ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনে আরও বেশি সংখ্যক নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। একই ভাবে কোভিডে মৃত্যুর শংসাপত্র, প্রতিষেধক দেওয়ার জন্য নাম নথিভুক্তিকরণ, কোভিড পরীক্ষা-সহ বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব পুরকর্তাদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘অনেক সময়েই কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলে দেহ পড়ে থাকার খবর আসছে। মৃতের পরিবার-পরিজন অসহায় বোধ করছেন। তাই কোভিডে মৃত্যু হলে, সাধারণ মানুষের হয়রানি কম করতে যত দ্রুত দেহ সৎকার করা যায়, সেই চেষ্টাই হচ্ছে।’’