হনুমান জয়ন্তী উৎসবে কারও মুখে মাস্ক নেই। দূরত্ববিধিও শিকেয়। নিজস্ব চিত্র।
কোভিডের আগ্রাসী সংক্রমণ চাপ বাড়াচ্ছে রাজ্য প্রশাসনের উপরে। ভোট মিটলে পরিস্থিতি কোথায় পৌঁছবে, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছেন না স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞেরাও। সেই জন্য পুরোপুরি লকডাউন না-হলেও কিছু কিছু ‘অপ্রয়োজনীয়’ গতিবিধিতে রাশ টানার ভাবনা ঘোরাফেরা করছে প্রশাসনের অন্দরে। প্রশাসনিক সূত্রের অনুমান, ভোট মিটলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। মঙ্গলবার সব জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কোভিড পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেন প্রশাসনের কর্তারা। বৈঠকে কোভিড ব্যবস্থাপনায় জেলা-ভিত্তিক নজরদারির রূপরেখা এবং তথ্যভান্ডার তৈরিতে জোর দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে সুনির্দিষ্ট নজরদারি পদ্ধতি তৈরি করতে বলা হয়েছে সব জেলাশাসককে। জোর দেওয়া হয়েছে জেলাভিত্তিক তথ্যভান্ডার তৈরির উপরে। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের অনুমান, কেন্দ্রীয় ভাবে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহল কোনও পদক্ষেপ করলে বা নির্দেশ দিলে, জেলা স্তরে তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতেই এই পদ্ধতির উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। শয্যা, অক্সিজেন, চিকিৎসা, মৃতদেহ ব্যবস্থাপনা-সহ সংশ্লিষ্ট সব কিছুই দেখভাল করা হবে জেলা নজরদারি পদ্ধতির আওতায়। সেই তথ্যভান্ডার থাকলে প্রশাসনের শীর্ষ মহলের পক্ষেও পরিস্থিতির খুঁটিনাটি বদল বুঝতে সুবিধা হবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সোমবারের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, গত সাত দিনে কোথাও সংক্রমণ বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের বেশি হলে এবং হাসপাতালের অক্সিজেনের সুবিধাযুক্ত শয্যা বা আইসিইউয়ের ৬০ শতাংশে কোভিড রোগী থাকলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সীমারেখা নির্দিষ্ট করে কন্টেনমেন্ট করতে হবে। রাশ টানতে হবে জরুরি ছাড়া বাকি গতিবিধির উপরে। সেই সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারগুলির উপরেই ছেড়েছে কেন্দ্র।
সেই সূত্রে বাংলার প্রশাসনের অনেকের অনুমান, এখানেও অচিরেই তেমন পদক্ষেপ করা হতে পারে। যদিও সরকার কবে এই সিদ্ধান্ত নেবে, তা এখনও অজানা। এ নিয়ে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত সরকারি ভাবে প্রশাসনের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এক অফিসার বলেন, “কেন্দ্রের সাম্প্রতিক নির্দেশিকা মানা হবে না, এটা বলার পরিস্থিতি এখন আর নেই। তবে সেই নির্দেশিকা কবে থেকে এবং কতটা মানা হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।” তিনি জানান, জনস্বার্থে এবং জনস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞেরা এমন কিছু বিধিনিষেধ আরোপের পক্ষে সওয়াল করছেন। সাধারণ মানুষের অনেকেও এই ধরনের ব্যবস্থাপনা চাইছেন।
সরকারি সূত্রের খবর, গত কয়েক মাসের মধ্যে মহকুমা স্তর পর্যন্ত ১০৫টি কোভিড হাসপাতালে পাইপের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহের সুবিধা তৈরি করা গিয়েছে। এতে সাড়ে ১২ হাজার কোভিড রোগীকে ২৪ ঘণ্টা অক্সিজেন পরিষেবা দেওয়া সম্ভব। ১৫ মে-র মধ্যে আরও ৪১টি সরকারি হাসপাতালে ওই পরিষেবা চালু করা গেলে আরও অন্তত তিন হাজার কোভিড রোগী এই সুবিধা পাবেন। মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, রাজ্য ও জেলা হাসপাতাল, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল বা মহকুমা হাসপাতালের প্রধানেরা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারবেন অর্থ দফতরের নির্দেশিকা মেনে।
রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত, জরুরি ভিত্তিতে ৫৫টি অক্সিজেন প্লান্ট তৈরি করা হবে। ৯৩টি হাসপাতালে এই পরিকাঠামো তৈরির জন্য কেন্দ্রের অনুমতি চেয়েছিল রাজ্য। এ ছাড়াও কয়েকটি বড় মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে তরল মেডিক্যাল অক্সিজেনের ট্যাঙ্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও অক্সিজেন প্লান্ট বসাতে অনুরোধ করেছে প্রশাসন।