নির্বাচন মিটলেও অটুট বাম-কংগ্রেস জোট। এক কংগ্রেস নেতাকে গ্রেফতার করা নিয়ে নির্বাচনের পরের দিন সোমবার রাতে জোটের সেই অটুট ছবিটাই ফের ধরা পড়ল মালদহের চাঁচলে।
রবিবার দুপুরে ব্লক কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা খরবা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান মহবুবুল হককে গ্রেফতার করে। শ্রীপতিপুর বুথে দুই তৃণমূল নেতাকে মারধরের অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তৃণমূলের বুথ এজেন্টের বাড়িতে ঢুকেও মহিলাদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু জোটের নেতাদের পাল্টা দাবি, মহবুবুল ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। তাঁকে থানায় ডেকে পাঠিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। জোটের নেতাদের দাবি, তৃণমূল নেতাদের নির্দেশেই মহবুবুলের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানিরও অভিযোগ জুড়ে দেওয়া হয়। সোমবার মহবুবুলের জামিন হয়নি। সে কথা চাউর হতেই এলাকা জুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তারপর বিকেল থেকেই খরবা-সহ চাঁচলের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভুটভুটি, বাইকে করে দলে দলে কংগ্রেস ও সিপিএম নেতা-কর্মীরা থানার সামনে হাজির হতে শুরু করেন। সন্ধে থেকে থানা ঘেরাও করে শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভ।
মহবুবুলের গ্রেফতারের প্রতিবাদে থানার ভিতরে কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে হাজির ছিলেন সিপিএম নেতারাও। তখন বাইরে থানা ঘেরাও করে রাখা প্রায় দু’হাজার মানুষের জমায়েতে রব উঠছে, কখনও ইনক্লাব জিন্দাবাদ, কখনও বন্দেমাতরম। জমায়েত থেকে ধিক্কার উঠছে পুলিশের পাশাপাশি তৃণমূলের বিরুদ্ধেও। জোটের নেতা-কর্মীদের দাবি, তৃণমূলের উস্কানিতে পুলিশ মহবুবুলকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। সোমবার সন্ধে থেকে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন জোটের কর্মী-সমর্থকরা। চাঁচলের এসডিপিও অবশ্য তৃণমূলের উল্কানিতে ওই নেতাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই নেতাকে গ্রেফতার করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনও নিরপরাধ যাতে সাজা না পায়, সেদিকে পুলিশ খেয়াল রাখে।’’
জোটের নেতাদের দাবি, যাঁদের মারধরের অভিযোগ করা হয়েছে, তাঁরা ওই বুথের বাসিন্দাই নন। বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে বরং তাঁরাই এলাকায় গিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করছিলেন। তাতে বাধা দেওয়ায় কংগ্রেসের এক কর্মীকেই বেধড়ক মারধর করা হয়। বেলালুদ্দন আহমেদ নামে ওই কংগ্রেস-কর্মী হাসপাতালে ভর্তি। তাঁকে মারধর করায় তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধেও জোটের তরফে অভিযোগ জানানো হয়। কিন্তু পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার না করে উল্টে কংগ্রেস নেতা মহবুবুলকে শাসকদলের নির্দেশে ফাঁসিয়েছে।
চাঁচল-১ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি ইন্দ্রনারায়ণ মজুমদার ও সিপিএম নেতা নিমাই সাহা এক সঙ্গেই বলেন, ‘‘পুলিশ পক্ষপাত করলেই রুখে দাঁড়াব। যা হয়েছে, তা তৃণমূলের উস্কানিতে পুলিশের ঘৃণ্য চক্রান্ত ছাড়া কিছু নয়।’’ তৃণমূলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমানের অবশ্য অভিযোগ, ‘‘উনি অন্যায় করেছেন। আমরা অভিযোগ করেছি। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মামলা করে ব্যবস্থা নিয়েছে। আমরা পুলিশের কাজে নাক গলাতে যাব কেন?’’