ব্রিগেডের মঞ্চে সংযুক্ত মোর্চা। ফাইল চিত্র।
সংযুক্ত মোর্চার মধ্যে আসন-রফার প্রক্রিয়া এগোল আরও একটু। কিন্তু রয়ে গেল জটও। মীমাংসা সূত্র বার করার লক্ষ্যেই প্রথম দুই দফার ভোটের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার জন্য আরও অপেক্ষার সিদ্ধান্ত নিল বামফ্রন্ট।
ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টকে (আইএসএফ) ৩০টি আসন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিপিএম। এ বার কংগ্রেস তাদের ভাগ থেকে ৭টি আসন আইএসএফের জন্য ছাড়ার আশ্বাস দিয়েছে। মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আরও গোটাতিনেক আসনের ব্যাপারে কংগ্রেস রাজি হলে আইএসএফের সঙ্গে রফা সম্পূর্ণ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু জট পেকেছে অন্য দিকে। কংগ্রেসের বক্তব্য, তাদের পুরনো দাবি থেকে সরে এসে তারা আইএসএফ-কে ৭ বা ৮টি, যত আসন ছেড়ে দেবে, সেই সংখ্যক আসন কংগ্রেসের জন্য ‘বরাদ্দ’ করে পুষিয়ে দিতে হবে সিপিএমকে। কিন্তু সিপিএমের পাল্টা যুক্তি, আইএসএফের জন্য কংগ্রেসকে আবার আসন ছাড়ার দরকার কী? সেটা করতে হলে তো সিপিএমই আরও আসন আইএসএফ-কে দিতে পারত! এই হাত বদলের প্রশ্নেই মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত রফা-সূত্র অধরা।
কংগ্রেসের দাবি, মোট ৯২ আসনের চেয়ে কমে তাদের পক্ষে রফায় রাজি হওয়া মুশকিল। তাদের ৯২ থেকে আইএসএফের জন্য ৭টি আসন বেরিয়ে গেলেও কংগ্রেসের হাতে প্রকৃত আসন কমে আসে। আবার সিপিএমের বক্তব্য, ৯২ আসনের চেয়ে বেশি কংগ্রেসকে ছাড়া কঠিন। আইএসএফ বামেদের কাছে ৪০ আসনের দাবি করেছিল, সেখান থেকে তারা ৩০টি দিয়েছে। কংগ্রেসের কাছে ১৫টা আসন চাইলে তারা কেন ৭টি নিজেদের ভাগ থেকে ছাড়তে পারবে না, এই প্রশ্ন উঠছে বাম শিবিরে।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘আমরা ৯২টি আসনে লড়ব। তার চেয়ে বাড়াতে পারলে ভাল। কিছু আসন রদবদল করা নিয়ে সিপিএমের সঙ্গে কথা চলছে, সেগুলো মিটে যাবে। আইএসএফ বা অন্য দলকে ক’টা আসন দেবে, সেটা সিপিএম বুঝে নেবে।’’ আর আসন-সংখ্যার প্রসঙ্গে না গিয়ে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, ‘‘ভাল ভাবেই আলোচনা এগোচ্ছে। মোর্চার নিশ্ছিদ্র জোট হবে!’’
আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে এ দিন প্রথমে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বসেছিলেন সিপিএম, কংগ্রেস ও আইএসএফ নেতারা। সেখানে অবশ্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন না। কংগ্রেসের তরফে ছিলেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। সিপিএমের বিমান বসু, সেলিমদের উপস্থিতিতে আইএসএফের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়। বৈদ্যবাটীতে গত ২০ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে আইএসএফের জন্য পাঁচটি আসন ছাড়ার কথা বলেছিলেন মান্নান, প্রদীপবাবুারা। তার সঙ্গে বাগদা ও মগরাহাট (পশ্চিম) আসন ছাড়ার ব্যাপারে এ দিনের বৈঠকে আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা। মধ্যমগ্রামের জন্য আইএসএফের দাবি দলে বিবেচনা করে জানানোর কথা বলেছেন মান্নানেরা। তার বাইরে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি, মালদহের মোথাবাড়ির মতো আসনও দাবি করেছে আইএসএফ।
বৈঠকের পরে মান্নান বলেন, ‘‘আলোচনায় সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। আরও দু-একটা আসন নিয়ে জট আসে, শীঘ্রই তার ফয়সালা হয়ে যাবে।’’ আইএসএফের চেয়ারম্যান নৌসাদ সিদ্দিকি বলেন, ‘‘দক্ষিণবঙ্গের জোট প্রায় সম্পূর্ণ। উত্তরবঙ্গে কিছু আসনের দাবি আমরা করেছি। কংগ্রেস নেতারা জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন।’’
ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের পরে এ দিনই বামফ্রন্টের বৈঠকে বিমানবাবু জানান, আসন-রফার প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে। তবে কিছু আসন রদবদলের প্রশ্ন আছে বলে এখনই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হচ্ছে না। প্রথম দু’দফার জন্য তালিকা ঘোষণা হতে পারে ৮ মার্চ। শরিকদের মধ্যে ফরওয়ার্ড ব্লককে ১৫-১৬, আরএসপি-কে ১১টি এবং সিপিআইকে ১০টি আসন দেওয়ার কথা আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস এবং আইএসএফের আসনের হিসেব পরিষ্কার হওয়ার আগে সেই ভাগাভাগিও চূড়ান্ত নয়।