পুরনো গড়ে ফের লাল নিশান। বুধবার নানুরে বাম প্রার্থীর মিছিলের ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।
সবুজ মাঠ চিরে কালো পিচ-রাস্তা ধরে এগিয়ে চলেছে দীর্ঘ মিছিল! ভোট মরসুমে এমন তো কতই হয়। কিন্তু জোট-প্রার্থী শ্যামলী প্রধানের প্রচারে বুধবার বীরভূমের নানুরের এই মিছিল যেন কপালে ভাঁজ ফেলেছে শাসক দলের। মিছিলে লাল পতাকার সংখ্যা যদি তার একটা কারণ হয়, মিছিলের পিছনে দলেরই একাংশের ‘অবদান’ রয়েছে কি না—সেই ধন্দ নির্ঘাত আর একটা। কারণ, অভিজ্ঞতা বলে ‘পরিবর্তন’-এর পরে নানুরে আছে শুধু তৃণমূল-ই।
১৯৭১ থেকে চার দশক ধরে নানুর ছিল ‘লাল গড়’। অথচ, নানুরের মাটিতে শেষ কবে বামেদের এমন মিছিল দেখা গিয়েছে, তা মনে
করতে পারছেন না অনেক এলাকাবাসীই। শুধু শোনা যাচ্ছে ফিসফাস: ‘‘পারল কী করে?’’
সঙ্গত প্রশ্ন। কারণ, গত বিধানসভা ভোটে নানুরে এই শ্যামলীদেবীকে ৫,৮৬৩ ভোটের ব্যবধানে হারান তৃণমূলের গদাধর হাজরা (যিনি এ বারও প্রার্থী)। কিন্তু ২০১৪-র লোকসভা ভোটে বিধানসভা ভিত্তিক ফলের নিরিখে নানুরে সিপিএমের থেকে ৬১ হাজারেরও বেশি ‘লিড’ ছিল তৃণমূল প্রার্থীর।
গত ১১ মার্চ প্রথম খুজুটিপাড়ার পার্টি অফিস থেকে প্রচার শুরু করেন শ্যামলীদেবী। সেদিন তাঁর সঙ্গে সাকুল্যে শ’খানেক কর্মীকে দেখা গিয়েছিল। এ দিন খুজুটিপাড়া থেকে বাসাপাড়া— সাড়ে চার কিলোমিটার দূরত্বের মিছিল শুরু হওয়ার আগেই হাজির অন্তত হাজারখানেক লোক। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মদন ঘোষ, স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আনন্দ ভট্টাচার্যেরা সামনের সারিতে। ছিলেন কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও। জোটের দাবি, এ দিন সকালের ওই মিছিলে অন্তত হাজার দু’য়েক (পুলিশের হিসেবে হাজার দেড়েক) মানুষ সামিল হয়েছিলেন।
মাঠের কাজ ফেলে ওই মিছিলে যোগ দিতে দেখা গিয়েছে ব্রাহ্মণখণ্ড গ্রামের নমিতা বাগদি, চাঁদমনি বাগদি, ছাতিন গ্রামের হরি মেটে, সুজয় দাসদের। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘২০১১-র পরে এলাকায় কোনও মিছিলে হাঁটিনি। এত লাল পতাকাও এক সঙ্গে দেখিনি। কারণ, সবাই জানে দল এখানে একটাই। তৃণমূল।’’
তাই কি? তৃণমূল অন্দরের খবর, গত বিধানসভা থেকে গত পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্যন্ত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন নানুরের দাপুটে তৃণমূল নেতা কাজল শেখ এবং বিধায়ক গদাধর। তার পরেই বালির ঘাট, পঞ্চায়েতের নিয়ন্ত্রণ-সহ নানা ব্যাপারে দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব মাত্রা ছাড়ায়। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দূর করতে দু’জনকে এক টেবিলে বসিয়েছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। লাভ হয়নি।
এ বার নানুরে গদাধরের ফের প্রার্থী হওয়ায় কাজলের আপত্তি ছিল। কিন্তু দল গদাধরকেই প্রার্থী করায় অর্ন্তঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছে না তৃণমূলেরই একাংশ। তাই এ দিনের মিছিলেও কাজল-যোগ দেখছে তারা। কাজল শেখ সহায় না হলে কি নানুরে এমন মিছিল করা সম্ভব ছিল? সিপিএম নেতা মদন ঘোষের জবাব, ‘‘ব্যক্তিবিশেষের নয়, মানুষের সমর্থন রয়েছে বলেই নানুরে আমাদের মিছিলে ভিড় বাড়ছে।’’ কাজলের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে তাঁর এক অনুগামীর দাবি, ‘‘দাদা সিপিএমের মিছিলে কাউকে যেতেও বলেননি, নিষেধও করেননি। সিপিএমের সভা-মিছিলে কেন লোক বাড়ছে তা বিধায়কই ভাল বলতে পারবেন।’’ সিপিএমের মিছিলে ভিড়ের ব্যাখ্যা অবশ্য মেলেনি গদাধরের মন্তব্যে। তাঁর কথায়, ‘‘এলাকায় আমরা যখন মিছিল করেছি, জোটের মিছিলের থেকে অনেক বেশি লোক হয়েছে। সংবাদমাধ্যম আমাদেরটা দেখতে পায়নি। ওদেরটা বড় করে দেখছে।’’ আর অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, ‘‘ওদের সাতশো-আটশো লোকের মিছিল হয়েছে, তা-ও বহিরাগতদের নিয়ে। তাই ওই মিছিল নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই।’’