মেঘ, ইলশেগুঁড়িতে হাসিমুখে ভোট

ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ততা, নির্বাচন কমিশনের নজরদারি, এমন সমস্ত সমীকরণ উল্টেপাল্টে দিয়ে উত্তরবঙ্গের প্রথম দফায় ছক্কা হাঁকাল আবহাওয়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১৯
Share:

ভোটকেন্দ্রে নিজস্বীর খুশি। শিলিগুড়ির একটি বুথে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ততা, নির্বাচন কমিশনের নজরদারি, এমন সমস্ত সমীকরণ উল্টেপাল্টে দিয়ে উত্তরবঙ্গের প্রথম দফায় ছক্কা হাঁকাল আবহাওয়া।

Advertisement

আকাশে মেঘের ঘনঘটা। আর সঙ্গী ঠান্ডা হাওয়ায় কোথাও তাপমাত্রা নামল চার ডিগ্রি। কোথাও পাঁচ। ফলে উত্তাপ খুইয়ে ভোটের দিনটা আগাগোড়াই ছিল মনোরম। গনগনে তাপ উধাও হওয়ায় হাসিমুখে ভোটের লাইনে দাঁড়ান বাসিন্দারা। অন্যদিকে তেতেপুড়ে প্রচারের পর ঠান্ডা আবহাওয়া স্বস্তি দিল নেতা কর্মী সমর্থকদেরও।

দিনের শুরুতে আকাশে ঘন কালো মেঘ আর জোর বাতাসে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জেলায়। কিন্তু কোনও কোনও এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি ছাড়া বড় কোনও দুর্যোগ হয়নি। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বঙ্গোপসাগর থেকে আসা জলীয় বাস্প-ই, ভরা গ্রীষ্মেও স্বস্তি এনেছিল উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন জলপাইগুড়ির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৮ ডিগ্রি যা কিনা স্বাভাবিকের থেকে ৪ ডিগ্রি কম, শিলিগুড়ির স্বাভাবিক তাপমাত্রা এ দিন প্রায় ৫ ডিগ্রি কম ছিল। মালদহের তাপমাত্রাও ৫ ডিগ্রি কমে এ দিন ৩২ ডিগ্রিতে নেমে যায়। উত্তর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরেও এ দিন আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা।

Advertisement

উত্তরবঙ্গের ছয় জেলায় ভোটের প্রচার শেষ হয় শুক্রবার। ঘটনাচক্রে শুক্রবার সন্ধ্যের পর থেকেই বদলাতে শুরু করে উত্তরের আবহাওয়া। গত সপ্তাহেই উত্তরবঙ্গের তাপমাত্রা বেড়ে প্রায় ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। নিম্নচাপ অক্ষরেখার জেরে সেই তাপমাত্রা একলাফে গড়ে ৫ ডিগ্রি নেমে গিয়েছে। জলপাইগুড়ি, ইসলামপুর, ধূপগুড়ি, মালবাজারে সকালে ইলশেগুড়ি বৃষ্টিও হয়েছে। শুধু তাপমাত্রা কম নয়, বাতাসে হিম ভাবও ছিল। ভোট কেন্দ্রে বয়স্কদের অনেককে গরম জামা, চাদর জড়িয়েও আসতে দেখা গিয়েছে।

এ দিন ভোটের শেষে সাংবাদিক বৈঠকে সার্বিক ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করার সঙ্গে আবহাওয়ার প্রসঙ্গও তোলেন শিলিগুড়ির বাম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য। হালকা সুরেই অশোকবাবু এ দিন মন্তব্য করেন, ‘‘এ দিনের আবহাওয়া খুবই উপভোগ করেছি। শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া রাজ্যের পরবর্তী পর্যায়ের ভোটে পথ দেখাবে।’’ আবহাওয়ার এই পরিবর্তিত মেজাজের তারিফ করেছেন মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির জোটের প্রার্থী শঙ্কর মালাকারও। আর তাঁদের সঙ্গে সহমত হয়েছেন বিপরীত মেরুতে অবস্থানরত বিদায়ী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। দিনভর নিজের ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেন্দ্রে ঘুরেছেন তিনি। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের বাসিন্দারা বরাবরই উৎসবের মেজাজে ভোট দেন। চড়া রোদ না থাকায় সেই মেজাজে ছেদ পড়েনি।’’ জলপাইগুড়ির কংগ্রেস প্রার্থী সুখবিলাস বর্মা, ধূপগুড়ির সিপিএম প্রার্থী মমতা রায় থেকে ময়নাগুড়ির তৃণমূল প্রার্থী অনন্তদেব অধিকারী সকলেই আবহাওয়া নিয়ে সংশয়ে ছিলেন। রোদ চড়া থাকলে বাসিন্দারা ভোটের লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াবে তো? এই আশঙ্কায় ভোটের নানা সমীকরণ কষতে শুরু করেছিলেন সকলেই। যদিও, দিনের শেষে স্বস্তির শ্বাস ফেলেন তাঁরা। শুধু প্রার্থীরাই নন, সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভোটকর্মীরাও। ডায়মন্ডহারবার থেকে মালবাজারে ভোট করতে আসা এক মহিলা পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘কেন যে একটা হাফসোয়েটার আনলাম না! দক্ষিণবঙ্গ পুড়ছে, আর এখানে এত সুন্দর আবহাওয়া।’’

কেন আবহাওয়ার এই পরিবর্তন?

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশ থেকে অসম পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা বিস্তৃত হয়েছে। অক্ষরেখাটি উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমের ওপর দিয়ে গিয়েছে। বায়ুস্তরের ওপরে প্রায় দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত থাকা এই অক্ষরেখার টানেই বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাস্প ছুটে আসছে। তার জেরেই মেঘ জমেছে উত্তরের আকাশে, আর তাপমাত্রা কমিয়ে দিয়েছে অনেকখানি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement