ঝা়ড়খণ্ড সীমানায় গাড়ি পরীক্ষা। —সুমন বল্লভ
রাস্তাঘাটে গাড়ি আটকে তল্লাশি চলছে। বড় রাস্তায় টহল দিচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তবু বিক্ষিপ্ত অশান্তি ও চোখরাঙানির অভিযোগের মাঝে ভোট দেওয়া নিয়ে আশঙ্কা কাটল না শিল্পাঞ্চলের নানা এলাকার বাসিন্দাদের।
পাড়ায়-পাড়ায় হুমকি দেওয়া হচ্ছে, রবিবার দুর্গাপুরে এই অভিযোগ তুলেছে বাম-কংগ্রেস। আসানসোলে গত পুরভোটে অশান্তি হওয়া কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা শনিবারই অভিযোগ করেছিলেন, বাহিনীকে সে ভাবে টহল দিতে দেখেননি তাঁরা। রবিবার শহরের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘মার্চের গোড়ায় ক’দিন ঘুরতে দেখেছিলাম জওয়ানদের। তার পরে কোথায় মিলিয়ে গেলেন, কে জানে!’’
এ দিন অবশ্য আসানসোল শহরে ঢোকার সময়ে নানা জায়গায় তল্লাশি চালাতে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। সঙ্গে ছিল রাজ্য পুলিশ। বিকেলে ঝাড়খণ্ড সীমানায় জনা পাঁচেক কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান পরপর গাড়ি আটকে পরীক্ষা করছিলেন। ঝাড়খণ্ড থেকে আসা এক জওয়ান সনাতন সারুই বলেন, ‘‘এই পথে নানা ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা-বারুদ আদানপ্রদান হয় বলে আমাদের জানানো হয়েছে। তাই দু’দিন ধরে তল্লাশি চলছে।’’ প্রতিটি গাড়ির তথ্যও লিখে রাখা হচ্ছে। আসানসোল কমিশনারেটের এক কর্তা রাতে জানান, সীমানা এলাকায় তল্লাশিতে এখনও তেমন কিছু মেলেনি। তবে রাতভর তা চলবে।
আসানসোলের সব বুথে বাহিনী থাকবে কি না, সে নিয়ে অবশ্য সংশয়ে রয়েছে বিরোধীরা। বিজেপি এবং বাম-কংগ্রেস জোটের অভিযোগ, অনেক বুথে বাহিনী রাখা হচ্ছে না বলে তাঁরা খবর পেয়েছে। সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘ভোটের দিন বাড়ি থেকে ভোটারেরা বেরোতে পারবে কি না, সংশয় থাকছেই। পাড়ায়-পাড়ায় বাহিনী টহল দিলে সে ভয় ঘুচতো।’’ বিজেপি প্রার্থী নির্মল কর্মকার দাবি করেন, ‘‘সব বুথে সিসি ক্যামেরাও থাকছে না বলে শুনছি। আমরা নজর রাখছি। কোনও বেনিয়ম হলে প্রতিবাদে নামব।’’ সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরীর আবার দাবি, গত পুরভোটের তাণ্ডব মাথায় রেখে তাঁরা আসানসোলে বেশ কয়েকটি বুথে পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছিলেন। এর মধ্যে বার্নপুর বয়েজ হাইস্কুলের সাতটি, আসানসোল বিসি কলেজের পাঁচটি, শ্রীপল্লির তিনটি, নিশ্চিন্তা গ্রামের তিনটি, কাল্লার দু’টি, বারাবনির পাঁচগাছিয়ার তিনটি ও সালানপুরের কয়েকটি কেন্দ্রের উল্লেখ রয়েছে।
২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটে দুর্গাপুর শহর লাগোয়া কালীগঞ্জ, টেটিখোলা, শঙ্করপুরের নানা বুথে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিল সিপিএম। গত লোকসভা ভোটেও এই বুথগুলি স্পর্শকাতর হিসেবে ঘোষণা করেছিল কমিশন। অথচ, সেখানে বাহিনী মোতায়েন হয়নি। ভোট পরিচালনা করেছিল রাজ্য পুলিশ। ফের কারচুপির অভিযোগ উঠেছিল।
রবিবার এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, শঙ্করপুরের তিনটি বুথে চার জন বাহিনীর জওয়ান রয়েছেন। কালীগঞ্জে দু’টি বুথে পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দলের পক্ষে প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এ দিন বিকেলে সেখানে চার জন জওয়ান পৌঁছেছেন। মহকুমা নির্বাচনী আধিকারির শঙ্খ সাঁতরা জানান, এক চত্বরে তিনটি পর্যন্ত বুথ থাকলে চার জন জওয়ান ও ভোটারদের লাইন সামলাতে রাজ্য পুলিশের এক জন কর্মী রাখা হচ্ছে। অথচ, ফুলঝোড় প্রাথমিক স্কুলে চারটি বুথে এ দিন সন্ধ্যায় বাহিনীর চার জওয়ানকে দেখা গিয়েছে। থাকার কথা ছিল ৮ জন। বেনাচিতির বিদ্যাসাগর স্কুলের চারটি বুথেও একই চিত্র নজরে এসেছে।
প্রশাসনের অবশ্য আশ্বাস, নিয়ম মেনেই সব বুথে বাহিনী মোতায়েন হবে। রাজনৈতিক দলগুলির চিহ্নিত করে দেওয়া বুথগুলির আশপাশে ভোটের আগের দিন বাহিনী টহল দিয়েছে বলে কর্তাদের দাবি। বিরোধীদের অভিযোগ আমল দিতে নারাজ তৃণমূল। দলের আসানসোলের নেতা তথা প্রার্থী মলয় ঘটকের কথায়, ‘‘ভোটে হার জেনে এখন নাটক করছে ওরা।’’