প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
এই প্রথম বামফ্রন্টের ব্রিগেড সমাবেশে থাকবেন না প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আগামী রবিবার বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস একযোগে ব্রিগে়ড সমাবেশের আয়োজন করেছে। কিন্তু নিজের শারীরিক অসুস্থতার কারণেই এবার আর সমাবেশে যোগ দিতে আসবেন না তিনি। সে অর্থে এই প্রথম বামফ্রন্টের আয়োজনে ব্রিগেড সমাবেশ হবে। অথচ সেখানে থাকবেন না বুদ্ধদেব।
২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বামফ্রন্টের শেষ ব্রিগেড সমাবেশে অসুস্থ শরীর নিয়েই গিয়েছিলেন বুদ্ধদেব। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই। কিন্তু মঞ্চে ওঠেননি। তা-ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই। মঞ্চের পিছনে গাড়িতে বসে বক্তব্য শুনছিলেন তিনি। সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিল অক্সিজেন সিলিন্ডার। নাকে অক্সিজেনের নল পরিহিত সেই বুদ্ধদেবের ছবি দেখে খানিকটা আক্ষেপই করেছিল বামজনতা। অনেক সমর্থক বলতে চেয়েছিলেন, বক্তৃতা না করলেও বুদ্ধদেব অন্তত একবার যদি মঞ্চে উঠে হাত নাড়তেন! কারণ, বামফ্রন্ট তথা সিপিএমের ‘তারকা’ বলতে এখনও তিনিই। কিন্তু চিকিৎসকের বারণ ছিল। ফলে কাচ-বদ্ধ গাড়িতে বসেই ব্রিগেডে সমাবেশে থাকতে হয়েছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। সেখান থেকেই তিনি ফিরে যান পাম অ্যাভিনিউয়ের ছোট্ট বাড়ির নিভৃতিতে। তার পর থেকে আর তাঁকে বিশেষ জনসমক্ষে দেখা যায়নি। এর পরেও সম্প্রতি তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেই আকস্মিক অসুস্থতা কাটিয়ে তিনি বাড়ি ফিরেছেন ঠিকই। কিন্তু বাইরে আসার মতো মনের জোর থাকলেও শরীরের জোর তাঁর নেই। চিকিৎসকরাও সেই পরামর্শ তাঁকে দেবেন না। বাড়িতেই তাঁর জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে।
২০১৫ সালে ২৭ ডিসেম্বর কলকাতায় সিপিএমের সাংগঠনিক প্লেনাম উপলক্ষে ব্রিগেড সমাবেশ করেছিল সিপিএম। সেই সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বুদ্ধদেবই। প্রসঙ্গত, ছয়ের দশকে ছাত্র রাজনীতি থেকে রাজনৈতিক জীবন শুরু করার পর থেকে এখনও পর্যন্ত এমন কোনও ব্রিগেড সমাবেশ হয়নি, যেখানে তাঁর উপস্থিতি ছিল না। সেই সূত্রেই সিপিআএম কর্মীদের প্রবল ইচ্ছা— ব্রিগেডের সভায় অন্তত একটি ‘ই-বার্তা’ দিন বুদ্ধদেব। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় তাঁকে বাদ দিয়েই ব্রিগেড সমাবেশের প্রস্তুতি শুরু করেছে সিপিএম। তবে নেটমাধ্যমে পার্টির ছাত্র-যুব-তরুণরা চাইছেন ব্রিগেড সমাবেশে অন্তত ‘ভার্চুয়াল’ পদ্ধতিতে কিছু বলুন বুদ্ধদেব। নেটমাধ্যমে সিপিএমের রাজ্য কমিটির তরফে আবেদন জানানো হয়েছে, অন্তত একবার রাজ্যনেতৃত্ব বুদ্ধদেবের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাঁর ‘ভার্চুয়াল’ উপস্থিতির ব্যবস্থা ককরুন। কারণ, এবারের ভোটযুদ্ধ সিপিএম তথা বামফ্রন্টের কাছে অত্যন্ত কঠিন লড়াই। তাই একবার বুদ্ধদেব বাম ছাত্র-যুবদের ল়ড়াইয়ের বার্তা দিলে তা অনেক বেশি ‘অর্থবহ’ হবে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘জ্যোতি বসুর শরীরও খুব ভাল ছিল না তখন। তবু দলের অনুরোধে ২০০৮ সালের জানুয়ারির ব্রিগেডে জ্যোতিবাবু এসেছিলেন। বলেছিলেন, এত মানুষ এসেছেন। আমি না এসে পারলাম না। বুদ্ধদেববাবু ধুলোয় বেরোতে না পারলেও তাঁর ভার্চুয়াল বার্তা পেলে দলের লড়াই আরও শক্তি পাবে। তাই আমরা মনে করছি, তিনি দলের সমাবেশে উপস্থিত না হতে পারলেও কমপক্ষে লিখিত বার্তা পাঠাবেনই।’’