কৈলাস বিজয়বর্গীয়,শুভেন্দু অধিকারী ও অমিত শাহ।
ভোট শুরুর আগেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিজেপি-র বিধায়ক সদস্য সংখ্যা ৬ গুণ বেড়ে গেল। ২০১৯-এ বিজেপি-র বিধায়ক সংখ্যা ছিল ৬। এই মুহূর্তে তা বেড়ে হয়েছে ৩৬। সৌজন্যে একাধিক বিধায়কের দলবদল।
২০১৬-য় রাজ্যে ১৬তম বিধানসভা ভোটে বিজেপি-র মাত্র ৩ জন বিধায়ক জয়ী হয়েছিলেন। খড়্গপুর সদর আসন থেকে জিতে বিধানসভায় এসেছিলেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ। মাদারিহাট থেকে এসেছিলেন মনোজ টিগ্গা। একই সঙ্গে বৈষ্ণবনগর থেকে জিতে বিধানসভায় এসেছিলেন স্বাধীন সরকার। পরে ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনের সময় রাজ্যে যে উপনির্বাচন হয়, তাতে বিজেপি ৪টি আসন পায় (দার্জিলিং, কৃষ্ণগঞ্জ, ভাটপাড়া ও হবিবপুর)। ফলে বিধায়ক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭। কিন্তু ওই নির্বাচনেই মেদিনীপুর আসন থেকে সাংসদ হন দিলীপ। ফলে তিনি খড়্গপুর সদর আসন থেকে বিধায়ক পদে ইস্তফা দেন। সেই থেকে পদ্ম-প্রতীকে জেতা বিধায়কের সংখ্যা ৬। কিন্তু ১৭তম বিধানসভা নির্বাচন যখন দোরগোড়ায়, তখন বিজেপি-র বিধায়ক সংখ্যা পৌঁছে গেল ৩৬-এ।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ২০১২ সালে কংগ্রেসের দুই বিধায়ক ইংরেজবাজারের কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী এবং রেজিনগরের হুমায়ুন কবীর শাসকদলে যোগ দেন। বিরোধীদের অভিযোগ, দলবদলের যে খেলা তৃণমূল রাজ্য রাজনীতিতে শুরু করেছিল বর্তমানে তাতেই হাত পাকিয়েছে বিজেপি। গত তিন বছর ধরে শুধু তৃণমূল থেকেই বিজেপি-তে গিয়েছেন ২৪ জন বিধায়ক। কংগ্রেস-বামফ্রন্ট শিবির থেকে তৃণমূলে যে বিধায়করা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের সিংহভাগ যদিও পদত্যাগ করেননি। ওই অবস্থাতেই নিজেদের মেয়াদ কাটাচ্ছেন। একই ভাবে এই ২৪ জন বিধায়কও ইস্তফা না দিয়েই মেয়াদ পূর্ণ করার পথে। সোনালি গুহ, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, শীতল সর্দ্দার, বাচ্চু হাঁসদা, জটু লাহিড়ী এবং গৌরীশঙ্কর দত্তের মতো বিধায়করা তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে শেষ মুহূর্তে শিবির বদল করেছেন। মেয়াদ শেষের আগেই শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় দলবদল করার পূর্ব মুহূর্তে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন।
দলবদলের রাজনীতিতে ভর করেই বিধায়ক সংখ্যা বাড়িয়েছে বিজেপি। কংগ্রেস-বামফ্রন্ট ছেড়ে তৃণমূলে গিয়ে ফের বিজেপি-তে যোগ দেওয়া বিধায়কের সংখ্যাও কম নয়। গাজোলের সিপিএম বিধায়ক দীপালি বিশ্বাস ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে জেতার কয়েক মাস পরেই তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু গত বছর শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে সেই দীপালিই যোগ দিয়েছেন বিজেপি-তে। আবার শান্তিপুরের কংগ্রেস বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য তৃণমূল যোগ দিয়েও, কয়েক মাস আগে দলবদল করে বিজেপি-তে গিয়েছেন।
সংখ্যা নিরীখে বিচার করে দেখলে তৃণমূল থেকে ২৪, কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট থেকে ৩ জন করে বিধায়ক গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। ফলে পাঁচ বছর আগে তিন জন বিধায়ক নিয়ে শুরু করা বিজেপি-র বিধায়ক বৃদ্ধির হার ৬ গুণ। রাজীব-শুভেন্দুর পদত্যাগ ও হেমতাবাদের সিপিএম বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের মৃত্যুর কারণে ওই সংখ্যা ৪০-এ পৌঁছয়নি।