অপেক্ষা: ক্রেতার দেখা নেই। কবে আবার ঘুরে দাঁড়াবেন, সেটাই এখন চিন্তা মেটিয়াবুরুজের বস্ত্র ব্যবসায়ীদের। —নিজস্ব চিত্র।
আগে ইদের মরসুমে দোকানে দম ফেলার সময় থাকত না। আর এখন? অতিমারি আবহ থাবা বসিয়েছে মেটিয়াবুরুজের কাপড়ের ব্যবসায়। গত ২৫ বছর কাপড়ের দোকান চালানো, মেটিয়াবুরুজের বড়তলার ব্যবসায়ী সৈফুদ্দিন লস্কর জানাচ্ছেন, এমন আর্থিক ক্ষতির মুখে আগে কখনও পড়তে হয়নি তাঁদের। তাই ভোট নিয়ে ভাবার সময়ও নেই তাঁদের। ‘‘ভোট নিয়ে ভাববার কী সময় আছে? ভাবছি, সংসারটা চালাব কী করে। ছেলে যে বেসরকারি স্কুলে পড়ে, সেখানে বেতন ঠিক মতো দিতে পারব তো? এ বার তাই ভোট নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই।’’— অকপট সৈফুদ্দিন।
আগামী শনিবার চতুর্থ দফার ভোট রয়েছে মেটিয়াবুরুজে। কিন্তু সেখানকার আক্রা রোডের বড়তলার কাপড়ের ব্যবসায়ীদের মধ্যে বুধবারও ভোট নিয়ে আলোচনার উৎসাহ নেই। ভোটে জিতে কে ক্ষমতায় আসবেন, তা নিয়েও মাথাব্যথা নেই তাঁদের। তাঁরা বরং তাকিয়ে রয়েছেন ক্রেতাদের দিকে। গত বছরের লকডাউন এবং সম্প্রতি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে যে ভাবে ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়ছে, সেখান থেকে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়— সেই চিন্তাই এখন কুরে কুরে খাচ্ছে তাঁদের।
মেটিয়াবুরুজের আক্রা রোডের বড়তলায় জামাকাপড় তৈরির জন্য রাস্তার পাশে পর পর থান কাপড়ের দোকান। ওস্তাগরেরা সেখান থেকেই থান কাপড় কিনে জামাকাপড় তৈরি করে হাওড়ার মঙ্গলাহাট, মেটিয়াবুরুজের জব্বরহাট, কারবালা হাটে পাইকারি দামে বিক্রি করেন। সারা দেশ থেকে আসা ব্যবসায়ীরা ওই সব হাট থেকে জামাকাপড় কিনে নিয়ে যান। কিন্তু অতিমারি আবহে গত এক বছরে সেই ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে জানাচ্ছেন মেটিয়াবুরুজের কাপড়ের ব্যবসায়ীরা। সুরাত, আমদাবাদ, মুম্বই থেকে ট্রাকে করে কাপড়ের গাঁটরি আসাও অনেকটাই কমে গিয়েছে। ফলে দোকানে ওস্তাগরের সেই চেনা ভিড়ের ছবিটাই কার্যত উধাও।
বড়তলার নিজের দোকানে বসে মেটিয়াবুরুজ বড়তলা ক্লথ মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ মসিউদ্দিন বললেন, ‘‘অনেকের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, তাঁরা দোকান বন্ধ করে অন্য পেশায় চলে গিয়েছেন। সুরাত, আমদাবাদ থেকে আগে প্রতি সপ্তাহে ৬০-৭০টি ট্রাকভর্তি কাপড়ের গাঁট আসত। এখন সেই সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে ৫-৬টিতে! করোনায় এখানকার ব্যবসায়ীদের এতটাই আর্থিক লোকসান হয়েছে যে, অনেকে মহাজনকে টাকাও শোধ করতে পারেননি।’’
ওই অ্যাসোসিয়েশনের সচিব সাকিল সিদ্দিক আবার বলছেন, ‘‘আশপাশের দোকানগুলো দেখুন। কী ভাবে খদ্দেরের আশায় দিন কাটছে। দোকানে যত কাপড়ের গাঁট স্তূপ হয়ে পড়ে রয়েছে, তার চার গুণ গাঁট পড়ে রয়েছে গুদামে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ওস্তাগরদের অবস্থাও খুব খারাপ। এ বার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে যদি আবার লকডাউন হয়, তা হলে অনেককেই হয়তো ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।’’
অন্যান্য বছরে যেখানে এই সময়ে দোকানগুলিতে ওস্তাগরের ভিড় উপচে পড়ে, সেখানে এ বার বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে তবে এক জন ওস্তাগরের সন্ধান পাওয়া গেল। ডোমজুড় থেকে আসা শামিম লস্কর নামে ওই ওস্তাগর বললেন, ‘‘অর্ডার খুব কম। তাই মাত্র দু’গাঁট কাপড় কিনছি। অন্য সময়ে এই সময়ে কাপড়ের গাঁট কিনে নিয়ে যেতে গাড়ি ভাড়া করতে হত।’’
শনিবার ভোটের আগে বড়তলায় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দেওয়াল লিখন চোখে পড়লেও ভোটের প্রচার বুধবার বিকেলেও চোখে পড়ল না। এক দোকানদার বলেন, ‘‘ভোট চাইতে এসেছিলেন দাদারা। ওঁদেরই জিজ্ঞাসা করেছি, কবে আবার সব স্বাভাবিক হবে? আমাদের ব্যবসার হাল ফেরাতে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছেন? কিন্তু কোনও দলের কাছেই সে ভাবে কোনও জবাব পাইনি।’’