দুর্ঘটনা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের রিপোর্টে ‘পর্যাপ্ত তথ্য’ নেই বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ঘটেছিল দুর্ঘটনা। নির্বাচন কমিশনে শুক্রবার পাঠানো মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক বিভু গোয়েলের পাঠানো রিপোর্টে এমনই জানানো হয়েছে বলে কমিশন সূত্রের খবর। জেলাশাসক ও মুখ্যসচিব আলাদা ভাবে দু’টি রিপোর্ট কমিশনে পাঠিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। রাতে নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্রের দাবি, মুখ্যসচিবের রিপোর্টে ‘যথেষ্ট তথ্য’ না থাকায় আজ, শনিবারের মধ্যে তাঁকে আরও তথ্য দিতে বলেছে কমিশন।
প্রথমে ঠিক ছিল, জেলাশাসক নবান্নে রিপোর্ট পাঠালে তা দেখে নির্বাচন সদনে রিপোর্ট পাঠাবেন মুখ্যসচিব। কিন্তু জেলাশাসক ও মুখ্যসচিব— দু’জনের কাছ থেকে আলাদা রিপোর্ট চায় কমিশন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এ দিন তাই জেলাশাসক ও মুখ্যসচিব পৃথক রিপোর্টই পাঠিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র দফতর অবশ্য জেলা পুলিশের থেকে ঘটনার একটি রিপোর্ট চেয়ে নিয়েছিল এবং মুখ্যসচিবের পাঠানোর রিপোর্টের মূল ভিত্তি সেটিই বলে জানিয়েছেন নবান্নের কর্তারা।
কী লেখা হয়েছিল মুখ্যসচিবের রিপোর্টে, যাতে ‘পর্যাপ্ত তথ্য’ নেই বলে মনে হয়েছে কমিশনের? নবান্ন সূত্রের দাবি, ওই রিপোর্টে লেখা হয়েছে, সে দিন মুখ্যমন্ত্রী তথা নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী প্রচারে বেরিয়েছিলেন। বিরুলিয়া বাজারে ভিড় হয়েছিল। বাজারের মাঝে একটি বাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি ধীর গতিতে চলছিল। মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির দরজা কোনওক্রমে বন্ধ হয়ে যায়, তাতে তাঁর পা চাপা পড়ে যায়। তবে কেউ বা কারা মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির দরজায় ধাক্কা দিয়েছিল, এমনটা মুখ্যসচিবের রিপোর্টে কোথাও লেখা হয়নি বলেই নবান্নের ওই সূত্র দাবি করেছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর প্রচার কর্মসূচিতে ভিড় হয়েছিল বলে মুখ্যসচিবের রিপোর্টের ছত্রে ছত্রে উল্লেখ করা হয়েছে বলেও সূত্রের দাবি।
আলাদা রিপোর্টে জেলাশাসকও হামলার সম্ভাবনা খারিজ করেছেন বলে সূত্রের খবর। কমিশন সূত্রের খবর, জেলাশাসকের পাঠানো রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১০ মার্চ নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থীর হেলিকপ্টার নামার অনুমতি ছিল। বাকি কোনও প্রচার-কর্মসূচির অনুমতি রিটার্নিং অফিসার দেননি। মুখ্যমন্ত্রীকে দেখার জন্য বিরুলিয়া বাজারে ভিড় হয়েছিল। সেখানে রাস্তার বাঁকে দু’টি পিলারও দেখা গিয়েছে। কিন্তু পিলারে ধাক্কা লেগেই দরজা বন্ধ হয়েছিল কি না, তা মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির চালক বা দুই দেহরক্ষীর সঙ্গে কথা না বলে স্পষ্ট করে জানা সম্ভব নয়। একই ভাবে কেউ এসে মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির দরজায় ধাক্কা দিয়েছে, এমন প্রমাণও মেলেনি বলে ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। সূত্রের দাবি, জেলাশাসকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়াতেই মুখ্যমন্ত্রীর পায়ে চোট লেগেছে। প্রচণ্ড ভিড়ে রাস্তার বাঁকে এই ঘটনা ঘটেছে। তবে কেন তা ঘটেছে, নির্দিষ্ট করে জানতে আরও তদন্ত প্রয়োজন।
গত ১০ মার্চ নন্দীগ্রাম ছাড়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছিলেন, পূর্ব পরিকল্পনা করে চার-পাঁচ জন এসে তাঁর গাড়ির দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। তাতেই তিনি আক্রান্ত হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর উপর হামলা হয়েছে বলে তৃণমূলের তরফে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছে। শুক্রবার রাজ্য জুড়ে মৌনী মিছিলও করেছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। যদিও বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর ভিডিয়ো বার্তায় চক্রান্তের উল্লেখ ছিল না। মুখ্যসচিব বা জেলাশাসকের রিপোর্টেও পরিকল্পনামাফিক হামলার উল্লেখ নেই বলে কমিশন ও নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।