West Bengal Assembly Election 2021

WB election 2021 : বাংলার নিজের মেয়েকে নিয়ে ত্রিমুখী লড়াই

রাজ্য জুড়ে ছয়লাপ, ‘বাংলা তার নিজের মেয়েকেই চায়’ স্লোগান। সঙ্গে মমতার ছবি। বাবুল ও অনীকের খোঁচা— স্লোগানটা ঠিক হতে পারে, কিন্তু ছবিটা নয়।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২১ ০৭:৪০
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

ওঁরা দু’জনেই কি বিদ্যাসাগর কলেজের প্রাক্তনী?

Advertisement

বিজেপির বাঙালি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং সিপিএম সমর্থক চিত্র পরিচালককে নিয়ে রসিকতা চলছে সমাজমাধ্যমে। কেউ বা বলছেন, দু’জনের প্রচারের ‘টুলকিটই’ কি এক? বাবুল সুপ্রিয় এবং অনীক দত্তের ফেসবুক পোস্ট হুবহু মিলে গিয়েছে। বলাই যায়, মিলিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাজ্য জুড়ে ছয়লাপ, ‘বাংলা তার নিজের মেয়েকেই চায়’ স্লোগান। সঙ্গে মমতার ছবি। বাবুল ও অনীকের খোঁচা— স্লোগানটা ঠিক হতে পারে, কিন্তু ছবিটা নয়। কারণ, বাংলা তার সেই মেয়েকেই চায়, যে বুড়ো মা-বাপকে ফেলে বাধ্য হয়ে চেন্নাই বা বেঙ্গালুরুতে চাকরি করতে গিয়েছে। কিংবা যিনি তাঁর সন্তানদের গ্রামে রেখে দিল্লিতে পরিচারিকার কাজে ব্যস্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় পোস্ট মমতা-বিরোধী দুই শিবিরেই ছড়িয়ে পড়ে বিনোদনের খোরাক। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক মহলেও ‘মমতা-বন্দনার’ চার-পাঁচ রকম গান বা নাচের ছন্দে এই স্লোগানের বিচিত্র প্রকাশ।

Advertisement

বিষয়টা সমাজের নানা স্তরে চোখে পড়ছে। পেশায় গৃহপরিচারিকা এবং গৃহপরিচারিকাদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে সক্রিয় তাপসী ময়রার কাছে যেমন ভোটের আগে এমন স্লোগান বেশ নতুন ঠেকছে। তিনি বলছেন, “দিদি সবটা না পারলেও মেয়েদের জন্য নানা কাজের চেষ্টা করেছেন।’’ শাসক দলে কিছু ভুল লোক ঢুকলেও ‘দিদিকে ভালবাসি’ বলতে রাখঢাক নেই তাপসীর। নাট্যকর্মী তূর্ণা দাসের দৃষ্টিভঙ্গি আবার আলাদা। যিনি বলছেন, “স্লোগান হিসেবে ভালই বলব। কিন্তু এর বাইরে সদর্থক কিছু দেখছি না।’’ তূর্ণার কথায়, “একদা ইন্দিরা গাঁধীও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। মেয়েরা রাজনীতির মুখ হলেই তাদের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টায় না। পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণ-কাণ্ডেও তা দেখা গিয়েছে।’’ মমতার আমলের কিছু ঘটনা সমালোচনার, নিন্দার। কিন্তু কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পে মেয়েদের বা গরিবের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টার মমত্বটুকু অস্বীকার করেন না নারী অধিকার রক্ষা কর্মী তথা অর্থনীতির অধ্যাপিকা শাশ্বতী ঘোষ।

মমতার রাজনৈতিক জীবনে বার বার তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষিত, পরিশীলিত ভাবমূর্তির মুখ দাঁড় করিয়েছে বাম শিবির। মমতাকে কদর্য ভাষায় আক্রমণও কম হয়নি। মমতার বিরুদ্ধেও অবশ্য কখনও কুকথার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু শাশ্বতীর মতে, “পুরুষপ্রধান রাজনীতির জগতে এমন স্লোগান মেয়েদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক।”

বিরোধীদের খোঁচা— অগ্নিকন্যা, সততার প্রতীকের মতো বাংলার মেয়েও জলদি চিনা পণ্যের মতো অচল হবে। বাম সমর্থকেরা ‘বাংলার মেয়ে’ বলতে দেবলীনা হেমব্রম বা তরুণ ঐশী ঘোষের হয়ে সরব। কিন্তু বিজেপি মমতাকে ‘সাম্প্রদায়িক’ কটাক্ষও করছে বলে অভিযোগ। তাঁকে ‘বৃদ্ধা’ বলেও ‘অপমান’ করা হচ্ছে। “এই ধরনের মন্তব্য কুরুচিকর’’, স্পষ্ট বলছেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের অধ্যাপিকা মৈত্রেয়ী চৌধুরী। তবে তাঁর মতে, “বাংলা তার নিজের মেয়েকেই চায় বলার মধ্যে মমতার নারী পরিচয়ের থেকেও তিনি বাংলার মেয়ে পরিচয়টাই প্রধান।’’

বাংলার এই ভোটে চলছে, ‘কে বেশি বাঙালি’ টক্কর। কে বহিরাগত, সেই তর্কও বার বার খুঁচিয়ে উঠছে। মৈত্রেয়ীর মতে, “বিজেপির হিন্দুত্বের ঝোড়ো রাজনীতির সামনে মায়াবতী, অখিলেশরা উড়ে গেলেও মমতা এখনও প্রতিরোধের মুখ। প্রাদেশিক ভঙ্গি এড়িয়ে গিয়েও এই স্লোগান বুদ্ধিদীপ্ত ভাবে বাংলায় তাঁর ইমেজ গড়ে তুলছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement