দেওয়াল না লেখার বিজ্ঞপ্তির সামনে গ্রামবাসী। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
আদিবাসীদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি নষ্ট করে দেওয়াল লিখনের অভিযোগ উঠল বিজেপি-র বিরুদ্ধে। এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন। ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে তৃণমূলও। বিজেপি-র দাবি, মৌখিক অনুমতি নিয়েই দেওয়াল লিখন করা হয়েছে।
শান্তিনিকেতনের বোনেরপুকুর ডাঙ্গা এলাকাযর ঘটনা। ভোটের সময় দেওয়াল দখল নতুন কিছু নয়। কিন্তু, সব ভোটেই ব্যতিক্রম হয়ে থাকত শান্তিনিকেতনের বল্লভপুরডাঙ্গা, বনেরপুকুরডাঙ্গা, সরকারডাঙ্গা-সহ বেশ কয়েকটি আদিবাসী গ্রাম। সেখানে মাটির বাড়ির দেওয়ালে দেওয়ালে আদিবাসীদের নানা কারুকার্য সংবলিত শিল্প-সংস্কৃতির নিদর্শন থেকে শুরু করে তাঁদের হাতে আঁকা বিভিন্ন চিত্রকলা রয়েছে। এই সমস্ত এলাকার মানুষজন মনে করেন, এই গ্রামগুলিতে ভোটের সময় দেওয়াল লিখন করলে বা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পোস্টার-ব্যানার, হোর্ডিং দিলে তাঁদের নিজস্ব সংস্কৃতি অনেকটাই নষ্ট হবে। সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে তাঁরা গ্রামের দেওয়ালে কোনও রাজনৈতিক দলকেই ভোটের প্রচার করতে দেন না।
এ বারের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালেও স্থানীয় আদিবাসীরা রাজনৈতিক দেওয়াল লিখন না করার আর্জি জানিয়ে প্রচার চালান। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কে বা কারা লুকিয়ে রাতের অন্ধকারে বোনেরপুকুরডাঙ্গা গ্রামের বেশ কয়েকটি জায়গায় বিজেপি-র দলীয় প্রতীক চিহ্ন এঁকে দিয়ে গিয়েছে। এতে তাঁদের সংস্কৃতিকে নষ্ট করা হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন ক্ষোভে ফেটে পড়েন বোনেরপুকুরডাঙ্গার বাসিন্দারা। গ্রামে ঢোকার মুখে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে তাতে লিখে দেন, এখানে কোনও রাজনৈতিক দলকে দেওয়াল লিখন করতে দেওয়া হবে না।
গ্রামবাসী রবি মুর্মু, সোমনাথ কিস্কু, রাম সোরেনরা বলেন, “আমরা মনে করি, এই ঘটনায় আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে আঘাত করা হয়েছে। তাই যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা তার তীব্র নিন্দা করছি। এর পরেও যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটে, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।”
তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “নির্বাচনের প্রাক্কালে ওখানকার আদিবাসীরা ঘোষণা করেছিলেন, তাঁদের সংস্কৃতি যেন কোনও ভাবেই নষ্ট না করা হয়। সেই রীতি বজায় রেখে ওই এলাকাগুলিতে দেওয়াল লিখন ছাড়াই প্রচার করছি। বিজেপি এ সবের তোয়াক্কাই করে না। যার জন্য আজ আদিবাসী সংস্কৃতিকেও তারা আঘাত করল!” অভিযোগ মানতে চায়নি বিজেপি। দলের বোলপুর বি মণ্ডলের নেতা শম্ভুনাথ রায়ের দাবি, “অনুমতি নিয়েই দেওয়ালগুলি লেখা হয়েছিল, কিন্তু তৃণমূল ওই বাসিন্দাদের ভয় দেখানোর পরে এখন তাঁরা অনুমতির কথা অস্বীকার করছেন।’’