মেমারিতে গোলমালের চিহ্ন। শনিবার। নিজস্ব চিত্র।
কোথাও মিছিলকে ঘিরে, কোথাও আবার রাস্তা তৈরি নিয়ে বিবাদের জেরে পূর্ব বর্ধমানে সংঘর্ষ হল তৃণমূল-বিজেপিতে। শনিবার দুপুরে মেমারি ও বিকেলে কাটোয়ায় গোলমালে বেশ কয়েকজন জখম হয়েছে।
এ দিন দুপুরে ‘অনুমতিহীন’ মিছিল আটকানো নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে ধুন্ধুমার বাধে মেমারিতে। মেমারি ২ ব্লকের কুচুট পঞ্চায়েতের নওয়াহাটি গ্রামে দু’পক্ষের সংঘর্ষে এক শিশু-সহ ২২ জন জখম হয়েছেন। বেশ কয়েকটি বাড়ি, মোটরবাইক ও গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দু’পক্ষই।
তৃণমূলের অভিযোগ, কমিশনের অনুমতি না নিয়ে মেমারির বিজেপি প্রার্থী ভীষ্মদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একটি মিছিল হয়। এ নিয়ে পুলিশ ও কমিশনের কাছে সকাল থেকে বারবার অভিযোগ করা হয়। কিন্তু পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় মিছিলটি এগোতে থাকে বলে অভিযোগ। পুলিশের দাবি, নওয়াহাটি গ্রামে মিছিল আটাকানো নিয়ে প্রার্থীর সঙ্গে বচসা হয়। এরই মধ্যে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ বেধে যায়।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, ওই মিছিল আটকাতে দুপুর থেকেই গ্রামে চেয়ার-টেবিল দিয়ে রাস্তা আটকে রেখেছিল তৃণমূলের লোকজন। কিন্তু ওই রাস্তা দিয়েই যাওয়ার জেদ ধরেন বিজেপি প্রার্থী। তৃণমূলের অভিযোগ, ডিজে-সহ ১০-১২টি গাড়ি নিয়ে মিছিল হচ্ছিল। পুলিশ মিছিল অন্য রাস্তা দিয়ে নিয়ে যেতে বললে, বিজেপি প্রার্থী পাল্টা দাবি করেন, তিন কিলোমিটার পরেই মিছিল শেষ। কাপাসটি গ্রামে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে তাঁদের। এ নিয়ে বিজেপির সঙ্গে পুলিশের বচসা হয়।
এই পরিস্থিতিতে পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বলে, দাবি তৃণমূলের। দলের মেমারি ২ ব্লক সভাপতি মহম্মদ ইসমাইলের অভিযোগ, “সে কথা শুনে আমাদের ছেলেরা সরে যেতেই পুলিশের সামনেই বিজেপি বহিরাগতদের দিয়ে তরোয়াল, তির-ধনুক নিয়ে আমাদের লোকেদের উপরে হামলা চালায়।’’ তৃণমূলের দাবি, হামলায় পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ইমদাদ আলি খান, ব্লকের জনজাতি সংগঠনের সভাপতি বাপি হাঁসদা-সহ জনা পনেরো জখম হন। তাঁদের কয়েকজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হয়। গোটা পাঁচেক বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট, ভাঙচুর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। সেরিনা বেগম নামে এক মহিলার দাবি, ‘‘আমরা ঘুমোচ্ছিলাম। সেই সময় বিজেপির লোকেরা এসে হামলা চালায়। আমাদের মারধর করে আলমারি ভেঙে সোনা-টাকা লুট করে নিয়ে পালিয়ে যায়।’’
বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, তাঁদের উপরেই হামলা চালিয়েছে তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। তাঁদের কর্মী ইউসুফুদ্দিন দফাদার-সহ কয়েকজনের বাড়িতে ঢুকে ঝামেলা পাকানো হয়েছে। ওই পরিবারের মহিলা হাসিনা বিবি, রাখি বিবির দাবি, ‘‘তৃণমূলের শ’খানেক লোক এসে আমাদের মারধর করেছে।’’ বিজেপি প্রার্থী ভীষ্মদেববাবুর অভিযোগ, ‘‘গোটাটাই পুলিশের সামনে হয়েছে। তৃণমূলের হাতে পুলিশও আক্রান্ত হয়েছে।” মিছিলের অনুমতি না থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘প্রচারের জন্য আবার অনুমতি কীসের!’’
দুপুরে এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম খান, সিআই (মেমারি) শ্যামল চক্রবর্তী গ্রামে যান। এসডিপিও পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘গোড়ায় পুলিশ কম ছিল, তাই সমস্যা হয়েছিল। পরে আরও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে।’’
কাটোয়ার পলসোনা গ্রামে আবার এ দিন বিকেলে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় একটি ঢালাই রাস্তা তৈরি হচ্ছিল। বিজেপির অভিযোগ, স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা ওই রাস্তার কাজের সামগ্রী দিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত জায়গায় কিছু কাজ করিয়ে নিচ্ছিলেন। পলসোনার বিজেপি নেতা রামকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘একে তো নিম্ন মানের জিনিস দিয়ে কাজ হচ্ছে। তার উপরে তৃণমূলের নেতা ব্যক্তিগত কাজ করিয়ে নিচ্ছিলেন। আমদের কর্মীরা প্রতিবাদ করায় হামলা হয়েছে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দু’পক্ষের মধ্যে লাঠিসোটা নিয়ে সংঘর্ষ হয়। জনা পাঁচেক জখম হন। তাঁদের মধ্যে দু’জন কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় পুলিশ গ্রামে যায়। দু’পক্ষের কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। দলের নেতার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে কাটোয়া ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি পিন্টু মণ্ডলের দাবি, ‘‘ভোটের আগে পায়ে পা বাধিয়ে গোলমাল পাকিয়ে বিজেপি এলাকা অশান্ত করার চেষ্টা করছে।’’