আনিসুর রহমান। নিজস্ব চিত্র।
পাঁশকুড়ার তৃণমূল নেতা কুরবান শা খুনের ঘটনায় গ্রেফতার আনিসুর রহমানকে নিয়ে মঙ্গলবার দিনভর নানা ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুর। তমলুক আদালত থেকে তাঁর জামিন হওয়া, হাসপাতাল থেকে ফুলের মালা গলায় পরে সমর্থকদের কাঁধে চেপে বাড়ি ফেরা, এরই কিছু সময়ের মধ্যে হাইকোর্ট থেকে জামিনের নির্দেশ বাতিল করার ঘন্টা দেড়েক বাদে ফের তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
এরপর বুধবার দুপুরে আনিসুরকে ফের তমলুক আদালতে তোলা হয়। তবে মঙ্গলবার বিচারবিভাগীয় হেফাজত থেকে ‘গোপনে’ আনিসুরের চলে যাওয়ার শাস্তি হিসেবে তাঁকে ৫০০ টাকার জরিমানা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সেই সঙ্গে তাঁকে আগের মতোই ফের জেল হেফাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই মামলার সহকারী সরকারি আইনজীবী বদ্রু আলম মল্লিক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার আদালত থেকে রিলিজ অর্ডার জারি হওয়ার আগেই হাসপাতাল থেকে আনিসুর চলে গিয়েছিলেন। যার জেরে তমলুকের জেল সুপার তাঁকে ‘ফেরার’ ঘোষণা করে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই আজ আনিসুরকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর জেল হেফাজত আগের মতোই বহাল থাকছে। ১০ দিন পর ফের মামলার শুনানি বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ দিন আদালত চত্বর থেকে বেরনোর সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলামেলা ভাবেই কথা বলেছেন আনিসুর। তিনি বলেন, “যে সময় পাঁশকুড়ায় কুরবান শা খুন হন তখন আমি কলকাতায় মুকুল রায়ের বাড়িতে ছিলাম। শুধুমাত্র বিজেপি করার অপরাধেই আমাকে ফাঁসানো হল। অথচ এখন রাজ্য সরকার যখন মামলা প্রত্যাহার করেছে তখন বিজেপি আমার পাশে দাঁড়াল না।“ ‘অভিমানী’ আনিসুরের মন্তব্য, “আমার কোনও পদের দরকার নেই। আমি শুধু মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলাম। তার জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম দরকার হয়। আমাকে তৃণমূল করতে দেওয়া হয়নি। এখন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যা করার করতে হবে।’’
নিহত তৃণমূল নেতা এবং তাঁর পরিবার প্রসঙ্গে আনিসুর বলেন, “কুরবান তার স্ত্রী ও পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রয়েছে। অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রকৃত দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক। কিন্তু তা না করে শুধু শুধু আমাকে ফাঁসানো হয়েছে এই খুনের মিথ্যা মামলায়। এটা এখনও পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় বিষয়। তবে আমার মন্ত্রী কিংবা ৩৫টি পদের কোনও দরকার নেই। শুধু মানুষের জন্যই কাজ করতে চেয়েছিলাম।’’
আনিসুরের মন্তব্য, “এতদিন কিছু না বললেও আজকে বলতে বাধ্য হচ্ছি, এতদিন যাঁরা বলে এসেছিলেন যে, আনিসুর রহমানকে বিজেপি করার জন্যই মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। আমি আশা করেছিলাম যে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মামলা তুলে নেওয়ার ঘটনাকে বিজেপি স্বাগত জানাবে। কিন্তু তা না করে উল্টে বিরোধিতা করা হচ্ছে”।
এই প্রসঙ্গে বিজেপি-র তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নবারুণ নায়েকের দাবি, “আনিসুর বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু তিনি কোনওদিনই এলাকার বিজেপি নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে মেলামেশা করেননি। এলাকার কোনও বিজেপি নেতা তাঁর সঙ্গে ওঠাবসা করেননি। বিজেপি-র সংশ্রব তিনি অনেক আগেই ত্যাগ করেছেন। এখন তিনি তৃণমূলে যাচ্ছেন বলেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে। কিন্তু এলাকার মানুষ কুরবান শার খুনের প্রকৃত বিচার চান। প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পান, এটাই আমাদের দাবি।’’