West Bengal Assembly Election 2021

West Bengal election: দুয়ারে ভোট: ভাগ কোভিড ভাগ

রাজনীতির মুখ এবং মুখোশ নিয়ে গভীর আলোচনা হলেও বিধি মেনে নেতা বা সমর্থকেরা যে নাক-মুখ ঢাকছেন, তা নয়। তা সত্ত্বেও সরকারের গুণতিতে কমছে কোভিড সংক্রমণ।

Advertisement

শুভময় মৈত্র

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২১ ২২:১৭
Share:

বিধি মেনে নেতা বা সমর্থকেরা যে নাক-মুখ ঢাকছেন, তা নয়। তা সত্ত্বেও সরকারের গুণতিতে কমছে কোভিড সংক্রমণ। ছবি: পিটিআই।

ঘণ্টা বাজল এবং ঘোষিত হল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট। ফলে আগামী দিনগুলোতে জোরকদমে চলবে মিটিং-মিছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে লোকজন ভালই হচ্ছে। রাজনীতির মুখ এবং মুখোশ নিয়ে গভীর আলোচনা হলেও বিধি মেনে নেতা বা সমর্থকেরা যে নাক-মুখ ঢাকছেন, তা নয়। তা সত্ত্বেও সরকারের গুণতিতে কমছে কোভিড সংক্রমণ। আশপাশে তাকালে জনগণের উপলব্ধিও অনেকটা তাই। সুতরাং ভয় ভুলে দুয়ারে ভোট, দুয়ারে সরকার এবং দুয়ারে নেতা। এই অবস্থায় তো আর দ্বার বন্ধ করে রেখে রাজনীতিকে ভ্রম আখ্যা দেওয়া ভাল কথা নয়।

Advertisement

আর পশ্চিমবঙ্গের এবং সে ভাবে ভাবতে গেলে গোটা ভারতের অধিকাংশ মানুষই নিম্নবিত্ত। ফলে নেতাদের দয়ায় যাঁদের বেঁচে থাকতে হয়, তাঁদের দল বেছে নিয়ে সভা-সমাবেশে যাওয়ার দায় থাকে। দায় থাকে নেতার সুরে সুর মেলানোর। বেসুরে বেসুর। সেই জায়গায় কোভিডকে ভয় পেলে আগামিদিনের বেঁচে থাকার লড়াই অনেক বেশি শক্ত হবে। তাই কোভিড যে দলেই যাক না কেন, আপাতত তাকে ভাগিয়ে দিয়েছি মনে করে নির্বাচনে নজর দেওয়াই ভাল। অনেকে অবশ্য আগে ভ্যাকসিন আর পরে নাগরিকত্ব শুনে একটু গুলিয়ে গিয়েছেন। পাড়ার নেতারা তাঁদের বুঝিয়েছেন যে, নাগরিকত্ব কোনও ভাইরাস নয়। অর্থাৎ ভ্যাকসিনের সঙ্গে নাগরিকত্বের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে আপাতত প্রথমটাই অগ্রাধিকার।

নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয় কী ভাবে? মোটের উপর যে নিয়ম মেনে চলা হয় তা হল, নেতা-মন্ত্রীদের যা যা ঘোষণা করার কথা, সেগুলো মিটে গেলেই কমিশন তারিখ জানিয়ে দেয়। তাড়াহুড়োয় একটা রাস্তা হয়তো কেন্দ্র আর রাজ্য দু’পক্ষই একসঙ্গে উদ্বোধন করে ফেলল। সময়াভাবে মঞ্চে একে অপরের দিকে না তাকিয়ে। তার পর পুরোটাই নির্বাচনী বিধিনিষেধ। তবে সে সব রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা কতটা মেনে চলেন এবং কী ভাবে নিয়মভঙ্গের দিকে নজর রাখা হয়, তা নিয়ে আলোচনা অশেষ।

Advertisement

গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ।

নিয়ম ছেড়ে আসা যাক ভোট এবং আসনের সংখ্যায়। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন এবং সংখ্যাতত্ত্ব মিশিয়ে এর মধ্যেই অনেক লেখা হয়েছে। আরও হবে। এই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্যে সাধারণ ভাবে গত লোকসভা ভোটের ফলাফলকেই নজরে রাখছেন বেশির ভাগ বিশ্লেষক। মনে রাখতে হবে ২০১৬-র নির্বাচনে তৃণমূল পেয়েছিল ৪৫ শতাংশের সামান্য কম, বাম-কংগ্রেস জোট সব মিলিয়ে ৪০-এর নীচে আর বিজেপি ১০ শতাংশের অল্প উপরে ভোট। সেখান থেকেই কেন্দ্রীয় শাসকদলের রাজ্যে উত্থান শুরু। অর্থাৎ ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেমন বোঝা গিয়েছিল তৃণমূলের ভোট শতাংশ উচ্চহারে বাড়তে শুরু করেছে, তেমনই ২০১৬-র বিধানসভার পর বিভিন্ন উপনির্বাচনে বিজেপি-র রমরমা। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে ভোট শতাংশের সঠিক হিসেব পাওয়া শক্ত। শতাংশ একটা কষা যায় বইকি। তবে তাকে ‘সততাংশ’ না বলাই ভাল। তাই আঠারোর বদলে উনিশ নিয়েই বেশি ভাবছেন ছানি-ময় বিশেষজ্ঞরা।

এখানে তৃণমূলের যুক্তি হল, লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় বিধানসভায় বিজেপি-র ভোট সাধারণ ভাবে কমে। এই পরিসংখ্যান দেশজোড়া। আর বিপরীত ভাবনায় তৃণমূলের বিরোধীরা বিজেপি-কেই সেই দল হিসেবে মানছে, যারা কি না এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে পারে। অর্থাৎ তৃতীয় পক্ষের ‘উইনেবিলিটি’ না-থাকলে তৃণমূলবিরোধী মানুষ বিজেপি-র দিকেই ঝুঁকবেন। এই পরিস্থিতিতে লোকসভা ভোটের শতাংশে তৃণমূল ৪৩, বিজেপি ৪০— উভয় পক্ষই বেশ কাছাকাছি। তৃতীয় পক্ষ সুদূর— ৭ আর ৫ যোগ করে ১২। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ভোটবিন্যাসকে বিধানসভা আসনের ভিত্তিতে দেখলে তৃণমূল ১৬৪, বিজেপি ১২১ আর কংগ্রেস ৯টি আসনে এগিয়েছিল। ভোট কিছু পেলেও আসনের হিসেবে বামেরা সাতে-পাঁচে ছিল না। তাদের বিশিষ্টজনেরা তত দিনে জনমতের আঁচ বুঝে তৃণমূল ঘুরে বিজেপি-তে যাওয়া মনস্থ করে ফেলেছেন।

কথা না বাড়িয়ে এইখানে ঝপাস করে একটা ভবিষ্যদ্বাণী করে ফেলা যাক। যদিও মেলা-না মেলার দায় জনগণের আঙুল আর ভোটযন্ত্রের বোতামের। বাম-কংগ্রেসের সমর্থন যদি আরও কমে, তা হলে সম্ভবত আর কয়েক দিনের মধ্যেই বোঝা যাবে হাওয়া কোন দিকে ঘুরছে। অর্থাৎ বিভিন্ন সংস্থা এবং সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষায় একটা আভাস মিলবে জনমত কী ভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে।

সমীক্ষার হিসাবে প্রায় ৩০টি আসন যেতে পারে বাং-কংগ্রেসের ঝুলিতে। এর অর্থ এ বারের নির্বাচনে ভোটের বিন্যাস সমসত্ত্ব হওয়ার সম্ভাবনা কম। বিভিন্ন পকেটে বিভিন্ন রকম ফল হতে পারে। ছবি- পিটিআই

সাধারণ ভাবে দু’পক্ষের লড়াই হলে বোঝা সহজ যে কারা এগোচ্ছে বেশি। সে ব্যবধান যদি রাজ্যব্যাপী শতাংশের নিরিখে ৩-এর কাছাকাছি পৌঁছয়, তা হলে অনুমান করা যায় এগিয়ে থাকা দলই বেশি আসনে জিতবে। অর্থাৎ তৃণমূল এবং বিজেপি দু’দলের ভোট শতাংশ যদি ৪৫-এর দিকে এগোয়, তখন কোনও দল যদি হয় ৪৬ আর অন্য দল ৪৩, সেক্ষেত্রে জেতা-হারা মোটের উপর সুনির্ধারিত হয়ে যাবে। বুঝতে হবে এই অবস্থায় ভোট শতাংশ থেকে আসনের হিসেব কষা সম্ভব। যে বেশি শতাংশ অর্জন করছে সে অবশ্যই ১৮০-র আশপাশে পৌঁছবে। অন্য দল ১০০-র আগে-পিছে। সে ক্ষেত্রে বাম-কংগ্রেস জোট শুধু আসনহারাই নয়, একেবারে শতাংশহারা হবে। তাদের জয় করার জন্য শুধু রয়ে যাবে এক অঙ্কের কোনও একটি সংখ্যা। অর্থাৎ, তৃতীয় পক্ষের জেতার কোনও সম্ভাবনাই নেই, এটা বুঝে নিয়ে সাধারণ মানুষ নিজেদের সার্বিক স্বার্থরক্ষায় মূল যুযুধান দু’দলে ভাগ হয়ে যাবেন।

অন্য দিকটা ঘটলে তৃণমূল এবং বিজেপি-র জেতা-হারার নিরিখে ভবিষ্যদ্বাণী একেবারে যদৃচ্ছ (র‍্যান্ডম)। শুধু এইটুকু বলা যাবে যে, তৃতীয় পক্ষ একক ভাবে ক্ষমতায় আসছে না। এখানে বাম-কংগ্রেসের ভোট বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। তেমন হলে গোটা অঙ্কটা গুলিয়ে যাবে। বাম-কংগ্রেস রাজ্য জুড়ে ৩০ শতাংশের ওপরে ভোট পেয়ে প্রচুর আসন পেয়ে গেল, সেটা এই মুহূর্তে অন্তত মনে হচ্ছে না। তবে তাদের ২০১৯-এর যোগফল ১২ থেকে যদি শতাংশের হিসেবে ২০-তে পৌঁছে যায়, তখন খাতাপত্র-কম্পিউটার-ডগাভাঙা পেন্সিল সব গুছিয়ে রেখে ভোটগণনা অবধি অপেক্ষা করাই ভাল। সে ক্ষেত্রে শতাংশের সঙ্গে আসনের হিসেবে সামঞ্জস্য কমবে। অর্থাৎ ভোট শতাংশ এবং আসন সংখ্যার অসরলরৈখিক সম্পর্ক ধরতে পারা অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাবে।

এখন প্রশ্ন হল, তৃতীয় পক্ষের ভোট আদৌ বাড়তে পারে কি? তার যে কারণগুলো দেখা, শোনা এবং পর্যবেক্ষণ করা যাচ্ছে, সেগুলো তালিকাভুক্ত করা যাক। প্রথম কথা হল, অল্প কিছু সমীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে কলকাতার এক সংবাদমাধ্যম। সেখানে দেখা গিয়েছে ২০১৯-এর নিরিখে তৃণমূলের ভোট একই রকম আছে, বিজেপি-র অল্প কমেছে আর তৃতীয় পক্ষের সামান্য বেড়েছে। সেই বৃদ্ধির পর বাম-কংগ্রেসের ভোট ১৪ শতাংশ দেখানো হয়েছে। তুলনায় অবাক করার মতো বিষয়, সমীক্ষার হিসাবে প্রায় ৩০টি আসন গিয়েছে তাদের ঝুলিতে। এর অর্থ এ বারের নির্বাচনে ভোটের বিন্যাস সমসত্ত্ব হওয়ার সম্ভাবনা কম। বিভিন্ন পকেটে বিভিন্ন রকম ফল হতে পারে।

বামেদের ভোট শতাংশ বাড়িয়ে আসন সংগ্রহ করা শক্ত। আসন অর্জনে রাজ্যের অনেকগুলি বিধানসভা ক্ষেত্রে তাদের ৩০ শতাংশের আশপাশে ভোট পেতে হবে। ছবি: পিটিআই।

২০১৯-এর নির্বাচনে কংগ্রেস ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে বিধানসভার হিসেবে ৯টি আসন পেয়েছিল। বামেরা ৭ শতাংশে ০। অর্থাৎ অসমসত্ত্বতা ছিলই। সেই অঙ্কে ভোট শতাংশ ভাল হলে কংগ্রেসের দিকে আসনের ভাগ আরও বাড়বে মুর্শিদাবাদ কিংবা মালদহে। সমীক্ষার গভীরে হয়তো সেটাই লুকিয়ে আছে। তুলনায় বামেদের ভোট শতাংশ বাড়িয়ে আসন সংগ্রহ করা শক্ত। আসন অর্জনে রাজ্যের অনেকগুলি বিধানসভা ক্ষেত্রে তাদের ৩০ শতাংশের আশপাশে ভোট পেতে হবে। কী ভাবে হতে পারে এমনটা? আদৌ কি হতে পারে? বেশি এগোনর আগে পুনরায় চর্বিতচর্বণ করা যাক। বাম-কংগ্রেস জোটে কংগ্রেস ২-৩ শতাংশ ভোট বাড়াতে পারলেই হয়তো আরও ১০-১৫টা আসন বেশি পাবে। কিন্তু সিপিএমকে আসন পেতে গেলে জনমতকে উজ্জীবিত করতে হবে অনেক বেশি। তাদের ভোট কংগ্রেসের মতো অল্প ক’টি জেলার পকেটস্থ নয়, গোটা বাংলায় ছড়ানো। তাই ভোট নিংড়ে আসন জোটানো বামেদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি কষ্টসাধ্য এবং স্বভাবতই কম সম্ভাবনার ‘ইভেন্ট’।

সেটা ঘটতে পারে কেন? মনে রাখতে হবে, বাম থেকে বিজেপি-তে যাওয়া ভোটের বড় কারণ শুধু মোদীভক্তি নয়। সঙ্গে তৃণমূল বিরোধিতাও আছে। সেই তৃণমূল থেকে অক্সিজেন কমে দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক নেতাই এখন বিজেপি-তে। জনগণ মনে করতেই পারে যে, মস্তিষ্কে অক্সিজেন কম প্রবাহিত হওয়া বহুজন এখনও তৃণমূলের হাল ধরে আছেন। তাই অক্সিজেনের যুক্তিটা দলবদলের ক্ষেত্রে খাটছে না। বরং বিরোধী তৃণমূল নেতাদের বিজেপি-তে দেখে তারা আবার ‘রাম’-এর ফুটকি সরিয়ে বামে ফিরতে পারেন। ভাবুন এক বার, দুই নেতা তৃণমূলের। তাদের এক জন ২০১৯-এ বিজেপি-তে গিয়ে প্রার্থী হলেন। অন্য জন তৃণমূলের হয়েই। জয় এল পদ্মছাপে। এ বার ২০২১-এর নির্বাচনের আগে দ্বিতীয় জন রাজ্যসভায় বক্তৃতা করতে করতে অক্সিজেনের অভাবে তৃণমূল ছাড়লেন। তাঁকে আহ্বান জানালেন বিজেপি-র জয়ী নেতা। অর্থাৎ আগামিদিনে দেখা যেতে পারে, দু’জনেই তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে পৌঁছে গেলেন। এই বৃত্তের তল খুঁজতে ইউক্লিড ব্যর্থ। রিম্যান সাহেবও পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য। বাংলার রাজনীতির দুর্বৃত্ত সম্ভবত তাঁদের সিলেবাসে ছিল না। এখানে এক জোড়া অর্ধবৃত্ত, দুই নেতা, পরিধি বরাবর ব্যাসের দুই ডগায় তৃণমূল এবং বিজেপি। তবে যাঁরা দিনরাত কাঁটা-কম্পাসে জ্যামিতি আঁকেন না, সেই আমজনতার উপর এই ধরনের দলবদলের প্রভাব ইতিবাচক না-ও হতে পারে।

সংখ্যালঘু ভোটের একটা অংশ বামেদের দিকে ফিরলে অসুবিধায় পড়বে তৃণমূল। ফাইল চিত্র।

এ ক্ষেত্রে মুশকিল বিজেপি-র। এই ভোট ফিরলেই বামের সুবিধা। আর সেই সঙ্গে তাদের ‘উইনেবিলিটি’র বিষয়টি সামান্য বাড়লেই কয়েকটি অঞ্চলে সংখ্যালঘু ভোটের একটা অংশ তাদের দিকে ফিরতে পারে। সেখানে আবার অসুবিধায় পড়বে তৃণমূল। সব মিলিয়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটলেও, ভোট কমলেও, সেই আসনে শেষ পর্যন্ত তৃণমূল বা বিজেপি-র মধ্যে কেউ হয়তো জিতবে। কিন্তু কে জিতবে সেটা আগে থেকে বোঝা খুব কঠিন হবে। এর মধ্যে মার্ক্সবাদীরা কয়েকটি আসনে ৩০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছতে পারলে তবেই রথ নিজেকে বামদেব ভাববেন। তৃণমূল-বিজেপি নেতা হস্তান্তরে দুর্নীতি সংক্রান্ত ‘পারসেপশন’-এরও তৃতীয় পক্ষের যৎসামান্য সুবিধা করার কথা। তবে ২০১৬-তে তার খুব প্রভাব পড়েনি। তাই এ বারের কাদা ছোড়াছুড়িও হয়তো সাড়ে ৭ রিখটার স্কেলে ভোটবাক্স টলাবে না।

এই জায়গায় বিজেপি আর তৃণমূলের মধ্যে আরেকটা ভোট হস্তান্তরের কথা বলে বিষয়টা গুলিয়ে দেওয়া যাক। তৃণমূল থেকে যে নেতাদের বিজেপি নিয়েছে, তাঁদের মূল্য স্বাভাবিক ভাবেই ভোটের হিসাবে নির্ধারিত হবে। অর্থাৎ একটা আশা থাকবেই যে, নেতার সঙ্গে কিছু ভোটও যাবে তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে। বাকি নেতাদের তৃণমূল খুব পাত্তা দেবে না। কিন্তু তলিয়ে ভাবলে শুভেন্দু অধিকারী বা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রভাব অবশ্যই এই ভোটে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। আবার নির্বাচনের আগে প্রচুর জনমুখী প্রকল্প চালু করে তৃণমূলও কিছু অতিরিক্ত ভোট পাওয়ার চেষ্টা করবে। তৃণমূল এবং বিজেপি-র আসনসংখ্যা অনেকটা নির্ভর করবে তাদের দু’দলের মধ্যে ভোটের পারস্পরিক হাতবদলে। কারণ, যুযুধান দু’পক্ষের একটা অংশের ভোট এক দল থেকে অন্য দলে গেলে ব্যবধানের ক্ষেত্রে অঙ্ক হয় দু’টি ভোটের। অর্থাৎ তৃণমূল এবং বিজেপি নিজেদের মধ্যে ভোট কাড়াকাড়ি করে নিজের জয়কে সুনিশ্চিত করার একটা চেষ্টাও মাথায় রাখবে। আর এই ত্রিমুখী লড়াইতে প্রতিটি পক্ষ প্রচার করবে যে, বাকি দু’দল তলে তলে আঁতাঁত করেছে। এ বারের ভোটপ্রচারে এটা শোনা যেতে পারে একাধিক বার। যদি দেখা যায়, তিন পক্ষই এই কথা মোটের উপর সমসংখ্যক বার বলছেন, সে ক্ষেত্রে এটা অন্তত বোঝা যাবে যে, জনগণকে ধোঁকা দিয়ে টেবিলের তলায় তাঁরা হাত মেলাননি।

(লেখক ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক। মতামত নিজস্ব)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement