ভোটের শহর

জামিন-অস্ত্রে বাড়ছে দাপট, অবাধ দুষ্কৃতীরা

ভোটের মুখে বাজার গরম ‘জামিন রাজনীতি’রই। এবং জামিনের জোরে সদর্পে এলাকা দাপানো দুষ্কৃতীদের। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, ছবিটা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। যে ছবিতে উজ্জ্বল মুখ তারক দাস, মুন্না পাণ্ডে, শেখ বিনোদের মতো পরিচিত দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৬ ০০:২১
Share:

ভোটের মুখে বাজার গরম ‘জামিন রাজনীতি’রই। এবং জামিনের জোরে সদর্পে এলাকা দাপানো দুষ্কৃতীদের। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, ছবিটা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। যে ছবিতে উজ্জ্বল মুখ তারক দাস, মুন্না পাণ্ডে, শেখ বিনোদের মতো পরিচিত দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

নির্বাচনের সময়ে যাদবপুরে বিধানসভা কেন্দ্রে সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে পারে বলে দুই থানার দুষ্কৃতী তালিকায় এক নম্বর স্থানে রয়েছে শাসক দলের মদতপুষ্ট, পুলিশের চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া তারক। গত পাঁচ বছরে দু’টি থানায় সাংবাদিকদের পেটানো, সিপিএম কর্মীদের খুনের চেষ্টা, এমনকী দলীয় কর্মীদের মারধর-সহ বিভিন্ন অভিযোগে মোট ১৫টি মামলা রয়েছে তার নামে। গত পুর-নির্বাচনে তারকের নেতৃত্বে দুষ্কৃতী বাহিনী যাদবপুরের বীরনগর, ফুলবাগান এলাকা দাপিয়ে বেড়িয়েছে। অভিযোগ, পুরভোটের দিন মহামায়া পাঠশালায় তারকের মারে গুরুতর জখম হন সুজন দত্ত নামে এক সিপিএম কর্মী। জামিনে ছাড়া পাওয়া তারক অবশ্য অবাধেই ঘুরে বেড়াচ্ছে এখনও।

গত পুরসভা নির্বাচনের আগেই খুনের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে ফিরে এসেছিল কসবা থানা এলাকার দুষ্কৃতী মুন্না পাণ্ডে। নির্বাচনের সময়ে শাসক দলের হয়ে সে এলাকা দাপিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা। অভিযোগ রয়েছে বছরখানেক আগে সোনারপুর থানার পাঁচপোতা এলাকায় ইমারতি দ্রব্যের সিন্ডিকেটের বচসার জেরে রাতভর গুলি চালানোরও। ওই রাতের তাণ্ডবে স্থানীয় দুই বাসিন্দা গুলিতে জখম হন। পুলিশের খাতায় ঘটনার পর থেকে মুন্না ফেরার। তবে মাঝেমধ্যেই কসবা এলাকায় মুন্না আসা-যাওয়া করছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।

Advertisement

নেতাজিনগরের দুষ্কৃতী শেখ বিনোদের বিরুদ্ধে বিধাননগর পুর-নির্বাচনে রাজারহাট এলাকায় সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ ছিল। শাসক দলের ‘আশীর্বাদপুষ্ট’ এই দুষ্কৃতীকেও ইদানীং পাড়ায় নিয়মিত দেখা যাচ্ছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

অথচ কসবা, পাটুলি ও নেতাজিনগর থানা তরফে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো দুষ্কৃতীর তালিকায় এই তিন জনেরই নাম এক নম্বরে। নিজেদের এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো এই দুষ্কৃতীদের নাম নির্বাচন কমিশনের চাপেই পুলিশ তালিকায় রেখেছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

তবে লালবাজারের এক কর্তার কথায়, তারক সবক’টি মামলায় জামিনে রয়েছে। কিন্তু তার উপরে নজরদারি রয়েছে। নির্বাচন পর্বে কোনও অভিযোগ উঠলে তদন্তের ভিত্তিতে ওই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু মুন্নার বিরুদ্ধে তো খুনের চেষ্টার মামলা রয়েছে। তা সত্ত্বেও পুলিশ তাকে ধরছে না কেন? ওই কর্তার কথায়, মুন্নার খোঁজ করার জন্য ইতিমধ্যেই দক্ষিণ শহরতলির কয়েকটি থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় বাহিনী টহলদারি শুরু করার পরে তাঁদের হাতে দুষ্কৃতীর ছবি তুলে দিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরাও ছবি দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে অভিযোগ শুনছেন। বাঘাযতীনের বীরনগরে তারকের বাড়ি, কসবায় মুন্না পাণ্ডের বাড়ি, টালিগঞ্জে শেখ বিনোদের বাড়ি-সহ গোটা এলাকায় শুরু হয়েছে কড়া নজরদারি। এক জওয়ানের কথায়, ‘‘এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে ওই সব দুষ্কৃতীর গতিবিধির হদিস
করা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement