ভোট মিটতেই ঠোকাঠুকি পাড়ুইয়ে

ভোট মিটতেই টক্করের রাজনীতি শুরু হয়ে গেল বীরভূমের পাড়ুইয়ে। গুলি, বোমা, মারধরে জখম হলেন শাসক শিবির এবং বিরোধী পক্ষের সমর্থকেরা। গ্রেফতার হলেন দুই তৃণমূল সমর্থক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় কর্তব্যে অব্যাহতি দেওয়া হল ওসি-কে।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায় ও মহেন্দ্র জেনা

পাড়ুই শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫১
Share:

ভোটের পরেই সন্ত্রাস। ভাঙচুর-হামলা পাড়ুইয়ের গোরাপাড়ায় বাম সমর্থক নাজমুন্নিসা বিবির বাড়িতে। সোমবার রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।

ভোট মিটতেই টক্করের রাজনীতি শুরু হয়ে গেল বীরভূমের পাড়ুইয়ে। গুলি, বোমা, মারধরে জখম হলেন শাসক শিবির এবং বিরোধী পক্ষের সমর্থকেরা। গ্রেফতার হলেন দুই তৃণমূল সমর্থক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় কর্তব্যে অব্যাহতি দেওয়া হল ওসি-কে।

Advertisement

রবিবার, ভোটের দিনই বোঝা গিয়েছিল বোলপুর কেন্দ্রের ইলামবাজার ব্লক নিয়ে ‘চাপে’ রয়েছে শাসকদল। অভিযোগ, ইলামবাজারের ডুমরুটে বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টরা আসার সময়েই তৃণমূল হামলা চালায়। জখম হন বিজেপি এবং সিপিএমের পোলিং এজেন্ট-সহ ১১ জন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর তৎপরতায় অবশ্য জল বেশি দূর গড়ায়নি। গ্রেফতার হন পাঁচ তৃণমূল সমর্থক। সাহস পেয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়ান গ্রামবাসীও। সিপিএমের অভিযোগ, ওই ঘটনার বদলা নিতে রবিবার রাত থেকেই পাড়ুইয়ের গোরাপাড়ায় হামলা করে শাসক দল।

স্থানীয় সূত্রের খবর, দু’পক্ষই লাঠি চালায়। হয় ইট ছোড়াছুড়ি। সে সময় থেমে গেলেও রাতভর বোমাবাজির আওয়াজ শুনেছেন গ্রামবাসী। সোমবার সকাল হতেই বেছে বেছে বাম ও বিজেপি সমর্থক পরিবারগুলির বাড়িতে হামলা শুরু হয়। এক সিপিএম সমর্থক গুলিবিদ্ধ হন। বোমার আঘাত ও মারধরে আরও চার বিরোধী সমর্থক জখম হন। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের দাবি, সিপিএমের হামলায় তাদেরই এক কর্মী জখম হয়েছে।

Advertisement

বাড়ির সামনেই এ দিন গুলিবিদ্ধ হন সিপিএম কর্মী শেখ শফিকুল। তাঁর বাঁ হাতে গুলি লাগে। তাঁর স্ত্রী শাহিদা বিবির অভিয়োগ, ‘‘গ্রামের সবাই সিপিএমকে ভোট দিয়েছে বুঝে হামলা চালিয়েছে তৃণমূল।’’ গ্রামের পশ্চিমপাড়ার এক বাসিন্দা বোমায় জখম হন। বোমাবাজির আওয়াজেই ঘুম ভাঙে ওই পাড়ারই বাসিন্দা নাজমুন্নিসা বিবির। বধূটির অভিযোগ, বিকট আওয়াজে চমকে উঠে দু’বছরের ছেলে আবদুল্লাকে নিয়ে ঘরের বাইরে বেরোতেই হামলা হয় তাঁর উপরে। বলেন, ‘‘কোল থেকে ছেলেকে কেড়ে ছুড়ে ফেলে এক দল তৃণমূলের লোক। ভাগ্যিস লাগেনি। আমাকে ওরা বেধড়ক মারে। বলছিল, ‘আমাদের ভোট দিসনি! বোঝ এ বার!’ মারধরের পরে গোটা বাড়িতে ভাঙচুর করে ওরা চলে যায়।’’ গোটা গ্রামেই এ দিন ছোট ছোট জটলা ছিল গ্রামবাসীদের। অনেককে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ভোটের ফল বেরোলে কী হবে!’’

ঘটনার দায় বিরোধীদের ঘাড়েই চাপিয়েছে তৃণমূল। তাদের পাল্টা অভিযোগ, গোরাপাড়া প্রাথমিক স্কুলের বুথে তৃণমূলের এজেন্ট ছিলেন আবু বক্কর মণ্ডল। রবিবার রাতে সিপিএম-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁকে মারধর করে। এ দিন সকালে লাগোয়া হজরতপুর গ্রামেও হামলা চালায় বিরোধীরা। অন্তত গোটা ১২ বাড়িতে লুঠ, ভাঙচুর হয় বলে তৃণমূলের দাবি। বিরোধীদের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ‘দশাননে’র অন্যতম ইলামবাজার ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলামের দাবি, “হার নিশ্চিত বুঝেই হামলা চালিয়েছে সিপিএম।’’

এ দিন রাতেও পাড়ুইয়ের বেলপাতা এলাকায় তৃণমূল এবং সিপিএমের এক প্রস্ত সংঘর্ষ হয়।

কিন্তু কেন দু’পক্ষের এই টক্কর বাধল পাড়ুই তথা ইলামবাজারে? এলাকার রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, লোকসভা ভোটের পরে বাম ও তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ অংশের যাঁরা বিজেপির শিবিরে গিয়েছিলেন, বিধানসভা ভোটের আগে জোটের আবহে তাঁদের অনেকে বাম শিবিরে ফিরেছেন। ফলে, বিরোধী-হাওয়া এলাকায় প্রবল। সে জন্যই লড়াকু মেজাজে ছিল শাসক দল। প্রতিরোধের মুখেও পড়তে হয়েছে তাদের। পরিকল্পনা মতো ভোট ‘করাতে’ না পারার রাগেই পাড়ুইয়ে মারধরের পথ বেছে নিয়েছে তৃণমূল, এমনটাই অভিযোগ করছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা। বলেছেন, ‘‘ইলামবাজারে তৃণমূলের ফতোয়া না মেনে সাধারণ মানুষ ভোট দিয়েছেন। গ্রামে আক্রমণের চেষ্টাও মানুষ একজোট হয়ে রুখে দিয়েছেন।’’ অনুব্রত এ দিন ফোন ধরেননি। তবে, বোলপুরের তৃণমূল প্রার্থী চন্দ্রনাথ সিংহের দাবি, ‘‘হার নিশ্চিত বুঝতে পেরেই বিরোধীরা হামলা চালিয়েছে।’’

বীরভূমের নতুন এসপি সব্যসাচীরমণ মিশ্র অবশ্য এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় পাড়ুই থানার ওসি দেবব্রত সিংহকে নির্বাচন কমিশনের কাছে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করেছেন। কমিশনের সিদ্ধান্তের কথা রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে এসপি-র নির্দেশে আপাতত কর্তব্য থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ওসি-কে। দেবব্রতবাবু এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement