জোটের পালে হাওয়া, রাহুলের মঞ্চে সিপিএম

শুরু হয়েছিল নিচু তলা থেকে। তার প্রভাব অনিবার্য ভাবে এ বার উঠে আসছে উপর তলাতেও। ভোটের আগে জোট সম্পর্কে দু’দলের কর্মী-সমর্থক মহল ও সাধারণ মানুষের আস্থা আরও বাড়াতে চেয়ে রাহুল গাঁধীর সভায় উপস্থিত থাকতে চলেছেন সিপিএম নেতারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৬ ০৪:০৩
Share:

শুরু হয়েছিল নিচু তলা থেকে। তার প্রভাব অনিবার্য ভাবে এ বার উঠে আসছে উপর তলাতেও। ভোটের আগে জোট সম্পর্কে দু’দলের কর্মী-সমর্থক মহল ও সাধারণ মানুষের আস্থা আরও বাড়াতে চেয়ে রাহুল গাঁধীর সভায় উপস্থিত থাকতে চলেছেন সিপিএম নেতারা।

Advertisement

রাজ্যে প্রথম দফার ভোটের আগেই শনিবার প্রচারে এসে বর্ধমান জেলার শিল্পাঞ্চলে দু’টি ও বাঁকুড়া জেলায় একটি সভা করার কথা কংগ্রেস সহ-সভাপতির। বর্ধমানের সভায় উপস্থিত থাকার জন্য সিপিএম নেতৃত্ব এবং ওই এলাকার বাম প্রার্থীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কংগ্রেসের তরফে। সাড়া দিয়েছে সিপিএমও। আলিমুদ্দিনের নির্দেশে ওই দিন রাহুলের মঞ্চে সিপিএমের রাজ্য কমিটির দুই সদস্য, প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী ও বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় হাজির থাকবেন বলে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে। বাঁকুড়ার সমাবেশের ব্যাপারে অবশ্য স্পষ্ট সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।

যৌথ প্রচারে জোট-বার্তা যে এখানেই থামছে না, তা বলাই বাহুল্য। দুই শিবির সূত্রেরই খবর, ১৩ এপ্রিল মালদহে সমাবেশ করতে আসতে পারেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। সেই সমাবেশে যাতে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি উপস্থিত থাকেন, তার জন্য চেষ্টা শুরু হয়েছে। একই ভাবে চেষ্টা চলছে পরবর্তী দফায় রাহুল যখন আবার বাংলায় প্রচারে আসবেন, তখন জোট-বার্তা আরও জোরালো করার। সিপিএমের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যেও আলাপ-আলোচনা চলছে, দল ও বামফ্রন্টের মধ্যে একাংশের ওজর-আপত্তি এড়িয়ে কী ভাবে সনিয়া-রাহুলদের সভায় যথেষ্ট ‘ওজনদার’ প্রতিনিধি পাঠিয়ে দু’পক্ষেরই নিচু তলার কর্মী মহলকে আরও চাঙ্গা করা যায়। কেন্দ্রীয় নেতাদের সমাবেশ নিয়ে এখনও আলোচনা জারি থাকলেও রাজ্য স্তরে যৌথ প্রচার অবশ্য আগের চেয়ে আরও অনেক মসৃণ হয়ে এসেছে। যেমন আপাতত ঠিক আছে, ৯ এপ্রিল নারায়ণগড়ে সিপিএমের প্রার্থী সূর্যকান্ত মিশ্রের সমর্থনে সভা করতে যাবেন অধীর চৌধুরী। সব কিছু পরিকল্পনামাফিক এগোলে নারায়ণগড়ই শুধু নয়, আরও কিছু জায়গায় একত্রে দেখা যেতে পারে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে।

Advertisement

তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, যে বর্ধমান জেলায় প্রথম রাহুলের সভায় প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে সিপিএম, দলের অন্দরে সেই জেলার নেতারাই কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়ার প্রশ্নে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন। বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আলিমুদ্দিনে চিঠি পাঠিয়েও জোট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সম্প্রতি। তার পরেও কংগ্রেসের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সেই জেলাতেই রাহুলের সমাবেশে হাজির থেকে দলের ভিতরে ও বাইরে জোট-বার্তা স্পষ্ট করে দিতে চাইছে আলিমুদ্দিন।

তার পরেও থেকে যাচ্ছে অন্য একটি প্রশ্ন। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘রাহুলজি সভা করতে এলে তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সিপিএমের তরফে স্বয়ং সূর্যবাবু বা ওঁদের রাজ্য নেতৃত্বের তেমন ওজনদার কেউ উপস্থিত থাকলেই পরস্পরকে মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।’’ বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা চালাচ্ছেন সূর্যবাবুরাও। দলের মুখ্য প্রচারক ও রাজ্য সম্পাদক হিসাবে সূর্যবাবুর এখন ঠাসা কর্মসূচি। রাহুল যে দিন বর্ধমান ও বাঁকুড়ায় আসছেন, সে দিনই বিকালে নারায়ণগড়ে দলীয় বৈঠক করার কথা সূর্যবাবুর। সিপিএমের তরফে বলা হচ্ছে, সময় নিয়ে নির্দিষ্ট ভাবে সনিয়া বা রাহুলের কর্মসূচি জানিয়ে দিলে দলের কে সেখানে যাবেন, তা ঠিক করতে সুবিধা হয়। আবার কংগ্রেস নেতৃত্বের যুক্তি, সনিয়া-রাহুল পাঁচ রাজ্যে ভোটের প্রচারে ব্যস্ত। তাই তাঁদের সফর-সূচি শেষ মুহূর্তে স্থির বা বদল হতেই পারে।

সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে একাংশ এখনও মনে করেন, কংগ্রেস তাদের মঞ্চ থেকে বাম প্রার্থীদের জেতানোর ডাক দিক। আর বাম নেতারা নিজেদের মঞ্চ থেকেই কংগ্রেস প্রার্থীদের জেতানোর আহ্বান জানান। যে ভাবে সূর্যবাবু পশ্চিম মেদিনীপুরে মানস ভুঁইয়া, জ্ঞানসিংহ সোহনপালদের (চাচা) জেতানোর ডাক দিচ্ছেন। একই ভাবে সূর্যবাবুকে জয়ী করার আহ্বান জানাচ্ছেন মানসবাবু। এর বাইরে এক মঞ্চে দু’দলের শীর্ষ নেতৃত্বের উপস্থিত না থাকলেও চলে। একই ভাবে ইয়েচুরিকে ভাবনায় ফেলেছে কেরল সিপিএম। কেরলে গিয়ে রাহুলকে যে হেতু সিপিএমের বিরুদ্ধেই বলতে হবে, তাই বাংলায় তাঁর পাশে দলের সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত হলে দক্ষিণী রাজ্যে ভুল বার্তা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পিনারাই বিজয়নেরা। বুধবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে রাহুলের সভায় আমন্ত্রণের বিষয়টি আলোচিত হয়। পরে সূর্যবাবু বলেন, ‘‘রাজ্য স্তরে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ আসেনি। তার আগেই নির্দিষ্ট করে কিছু বলা মুশকিল। তবে বংশগোপাল রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও প্রাক্তন সাংসদ। তাঁর সঙ্গেই রাজ্য কমিটির আর এক সদস্য এবং ওই জেলায় প্রার্থী গৌরাঙ্গকে বর্ধমানের সভায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে আপাতত।’’

জোট-প্রচারের চাহিদা যে বাড়ছে, তার আরও ইঙ্গিত এ দিনই মিলেছে। পুরুলিয়ার বলরামপুরে প্রচারের ফাঁকে সিপিএমের দুই রাজ্য নেতার সঙ্গে যোগাযোগ হয় কংগ্রেসের তারকা-মুখ তথা রাজ্যসভার সাংসদ রাজ বব্বরের। সিপিএম প্রার্থীদের হয়েও প্রচারের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন বব্বর। সংশ্লিষ্ট জেলাকে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি ঠিক করতে বলেছে আলিমুদ্দিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement