বুথে ঢুকেই ওরা বলল, লাশ ফেল সব ক’টার

এর আগে আট বার ভোট করিয়েছি। ন’বারের বার যে অভিজ্ঞতা হল, তা বলতে গেলে এখনও হাত-পা কাঁপছে! আমি সেই প্রিসাইডিং অফিসার, যাকে রবিবার রাতে বুথে ঢুকে এক দল মদ্যপ দুষ্কৃতী বেদম মেরে গিয়েছে।

Advertisement

জয়ন্তকুমার নন্দী (আক্রান্ত প্রিসাইডিং অফিসার)

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:০৯
Share:

এর আগে আট বার ভোট করিয়েছি। ন’বারের বার যে অভিজ্ঞতা হল, তা বলতে গেলে এখনও হাত-পা কাঁপছে!

Advertisement

আমি সেই প্রিসাইডিং অফিসার, যাকে রবিবার রাতে বুথে ঢুকে এক দল মদ্যপ দুষ্কৃতী বেদম মেরে গিয়েছে। মারের চোটে কানে কিছু শুনতে পাচ্ছি না। বুকেও খুব যন্ত্রণা। পায়ে এত লেগেছে যে, বেশি ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে
পারছি না। আমরা কখনও কোনও মারামারি-কাটাকাটির সঙ্গে জড়াইনি।

ভোটের ডিউটি পড়েছিল বড়জোড়ার মালিয়াড়া পরীক্ষাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সঙ্গে ছিলেন কৃষি দফতরের প্রণবকুমার মণ্ডল, প্রাথমিক শিক্ষক মিলন কুমার মণ্ডল আর চতুর্থ শ্রেণির কর্মী লক্ষ্মীকান্ত মাহাতো। রবিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বুথে পৌঁছে গিয়েছিলাম। রাতের খাওয়া সেরে ইভিএম পরীক্ষা করছিলাম। বেশি রাতে আচমকা ১৫-২০ জন মদ্যপ লোক বুথে ঢুকে পড়ল। গালিগালাজ করতে করতে বলল, ‘‘এরা সব সিপিএমের হয়ে মেশিনে ভোট দিয়ে দিচ্ছে। ভোট দেওয়া বার করছি। লাশ ফেলে দেব সব ক’টার। মার শালাদের! মেশিন কেড়ে নে ওদের থেকে।’’

Advertisement

ওদের আটকানোর চেষ্টা বৃথা হল। জিনিসপত্র ভাঙচুর করে আমাদের কলার ধরে ফেলে এলোপাথাড়ি ঘুঁষি-লাথি-চড় চলল। মোবাইল ছুঁড়ে ফেলল। মিলন আর লক্ষ্মীকান্ত কোনও রকমে ছুটে পালাল। আমি আর প্রণব পারলাম না। সেন্ট্রাল ফোর্সের লোকেদের ডাকলাম, কিন্তু ওরা বুথ পাহারার বদলে রাত ন’টার মধ্যে খেয়েদেয়ে দোতলায় শুয়ে পড়েছে। কিছু ক্ষণ পরে এক জন লুঙ্গি পরে নীচে এসে অবস্থা দেখে সঙ্গে সঙ্গে উপরে চলে গেল। আমি এক সময় হাত ছাড়িয়ে কোনও রকমে দোতলায় উঠে বললাম, ‘‘হামলোগোকো বাঁচাইয়ে।
মার ডালেগা।’’ ওরা কিছুই করল না। ওদের সামনেই দুষ্কৃতীরা আমাদের আবার মারতে লাগল। প্রায় ৪০ মিনিট পরে পুলিশ এল। মার থামল, কিন্তু চিৎকার-গালাগাল চলতে লাগল। বারবার বলার পরেও আইসি এফআইআর নিলেন না। বিডিও সারা রাত আমাদের বুথে ফেলে রাখলেন। ডাক্তারও ডাকলেন না।

সকালে আমাদের জায়গায় নতুন প্রিসাইডিং অফিসারদের আনার পরেও বেলা প্রায় ১২টা পর্যন্ত আমাদের ওখানে রেখে তার পর একটা গাড়িতে তুলে বড়জোড়া ব্লক অফিসে নিয়ে যাওয়া হল। ‘‘আপনাদের শরীরের থেকে ভোটটা করা বেশি জরুরি।’’—বিডিওর কথা শুনে হাঁ হয়ে গেলাম।

শেষ অবধি যে বেঁচে বাড়ি ফিরেছি, এই ঢের। জানি না, শরীর আর মনে কবে স্বাভাবিক হতে পারব। আমি শিক্ষকতা করি। বাঁকুড়া শহরের প্রতাপনগরের বাড়িতে আমরা স্বামী-স্ত্রী আর দুই সন্তান। কোনও দিন ভাবিনি, এমন ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে। ঘটনার পর থেকেই খুব ভয়ে আছি। কারণ, প্রতিবাদ করেছি। তাই চাইব, মুখ্যমন্ত্রী একটু দেখবেন, এর পরে আমাদের যাতে রাজনৈতিক বদলার শিকার হতে না হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement