ছোটবেলাতেই শুনে নিয়েছিলেন জীবন-অভিধানের ‘এক নম্বরি, ‘দু’ নম্বরি’ শব্দ। ‘শাখাপ্রশাখা’-র সেই ডিঙ্গো এখন নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী। টলিউডের নায়ক হলেও সোহম চক্রবর্তীর শিশুশিল্পীর পরিচয় যেন ভুলতে চান না দর্শক।
তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন ৭ বছর হয়ে গেল। ২০১৬ সালেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন বাঁকুড়ার বড়জোড়া কেন্দ্রে। সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হন। এ বার সোহম পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী।
বেহালার এই বাসিন্দার বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ ১৯৮৭ সালে, ‘মেজ বৌ’ ছবিতে। তার পর ‘মঙ্গলদীপ’, ‘নয়নমণি’, ‘গরমিল’, ‘দেবতা’, ‘নবাব’, ‘সুরের ভুবনে’, ‘ভাগ্য দেবতা’, ‘লাঠি’, ‘মায়ার বাঁধন’, ‘চৌধুরী পরিবার’-সহ একাধিক ছবিতে অন্যান্য কুশীলবদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন শিশুশিল্পী হয়ে।
১৯৯০ সালে মুক্তি পায় ‘শাখা প্রশাখা’। এই ছবির দৌলতে সোহমের নাম যোগ হয় ‘সত্যজিতের ছবিতে শিশুশিল্পী’-দের তালিকায়। চিত্রনাট্যে সোহমের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সত্যজিতের বাকি ছবিগুলির মতো এই ছবিতেও শিশুশিল্পীর অবস্থান অনবদ্য।
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন ভূমিকায় বড় পর্দায় ধরা দিয়েছেন সোহম। ২০০১ সালে ‘এক টুকরো চাঁদ’ ছবিতে তিনি অভিনয় করেন কাকাবাবুর সহকারী সন্তুর ভূমিকায়। এর পর ৬ বছরের বিরতি। ২০০৭-এ সোহম আবার অভিনয়ে ফিরে আসেন ‘চাঁদের বাড়ি’ ছবিতে।
রাজনীতিতে অবশ্য পরাজয়েও বিরতি আসেনি। ২০১৬ সালের পরে দ্বিতীয় বার বিধানসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র পেশ করলেন সোহম। নির্বাচন কমিশনে হলফনামায় তিনি জানিয়েছেন, ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে তাঁর উপার্জনের পরিমাণ ৫২ লক্ষ ৬৭ হাজার ১৫০ টাকা। তার আগের বছর এই পরিমাণ ছিল ৬৮ লক্ষ ৭ হাজার ৭০ টাকা।
সোহমের স্ত্রী তনয়ার ক্ষেত্রে ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে উপার্জনের পরিমাণ ২ লক্ষ ৩৯ হাজার ১৫০ টাকা। তবে সোহম তাঁর গত ৫ আর্থিক বছরে উপার্জনের খতিয়ান দিলেও স্ত্রীর ক্ষেত্রে শুধু একটি আর্থিক বছরের উপার্জনই উল্লেখ করেছেন।
সোহমের হাতে নগদ দেড় লক্ষ টাকা আছে বলে তিনি জানিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁর স্ত্রীর হাতে আছে ৫০ হাজার টাকা। এইচডিএফসি ব্যাঙ্কে সোহমের নামে আছে ৩ লক্ষ ৬৯ হাজার ৩৫৮ টাকা। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কে আছে ২ লক্ষ ৪ হাজার ৭৫২ টাকা। পাশাপাশি, ইলাহাবাদ ব্যাঙ্কে ৪৫ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা, এসবিআই-তে ১০ হাজার টাকা, এইচডিএফসি-র একটি কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ৫ লক্ষ ৯৪ হাজার ৪৯৫ টাকা এবং আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের একটি কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ২ লক্ষ ৬২ হাজার ২০২ টাকা সোহমের দাখিল করা নগদ সম্পত্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
সোহমের স্ত্রী তনয়ার নামে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের একটি অ্যাকাউন্টে ৯৯ হাজার ৯১৪ টাকা এবং ওই একই ব্যাঙ্কের অন্য একটি অ্যাকাউন্টে গচ্ছিত ২ লক্ষ ৫৬ হাজার ১ টাকা। শেয়ারবাজারে দু’জনের এই মুহূর্তে বিনিয়োগ নেই বলে জানিয়েছেন।
ইলাহাবাদ ব্যাঙ্কের পিপিএফ অ্যাকাউন্টে সোহমের নামে আছে ১ লক্ষ ২৪ হাজার ৯১৪ টাকা। চারটি জীবনবিমায় তিনি বিনিয়োগ করেছেন যথাক্রমে ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ৪৯৬ টাকা, ৪ লক্ষ ৮৮ হাজার ২২৩ টাকা, ২ লক্ষ ৬৩ হাজার ৬৬৪ টাকা এবং ১ লক্ষ ৯২ হাজার ১৬০ টাকা।
জীবনবিমা করেছেন স্ত্রী তনয়াও। দু’টি বিমায় বিনিয়োগ করেছেন যথাক্রমে ২ লক্ষ ৪ হাজার ৮৩২ টাকা এবং ৫১ লক্ষ ৫৩৬ টাকা।
তিনটি গাড়ি রয়েছে সোহমের নামে। ৩ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা মূল্যের শেভ্রোলে অ্যাভিয়ো, ৮৫ লক্ষ টাকা মূল্যের রেঞ্জ রোভার এবং ১১ লক্ষ ২০ হাজার ১০০ টাকার মাহিন্দ্রা স্করপিয়োর মালিক তিনি। স্ত্রীর নামে আলাদা কোনও গাড়ি নেই।
সোহমের কাছে থাকা ৫২ গ্রাম সোনার গয়নার মূল্য ২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৭৩২ টাকা। স্ত্রী তনয়ার কাছে যে অলঙ্কার আছে, তার পরিমাণ ২৫৭ গ্রাম। মোট মূল্য, ১১ লক্ষ ৭৯ হাজার ৮৮৭ টাকা। গাড়ি, গয়না এবং গচ্ছিত অর্থ মিলিয়ে সোহমের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ৮১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৯৬ টাকার। তাঁর স্ত্রীর ক্ষেত্রে এই অঙ্ক ১৮ লক্ষ ৪২ হাজার ১৭০ টাকা।
কোনও কৃষিজমি না থাকলেও দু’টি অ্যাপার্টমেন্টের মালিক সোহম। তার মধ্যে জোকার জেনেক্স ভ্যালির ফ্ল্যাটের আয়তন ৮০০ বর্গফুট। কবিগুরু সরণিতে দ্বিতীয় ফ্ল্যাটের আয়তন ২৬০০ বর্গফুট।
প্রথম ফ্ল্যাটটি তিনি কিনেছিলেন ২০১০ সালে। দ্বিতীয়টি কেনা তার ৭ বছর পরে। দু’টি ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক থেকে তিনি ২৮,৬০,১২৬ টাকার গাড়িঋণ এবং অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক থেকে ১,৪২,২২,৭৯৫ টাকার গৃহঋণ নিয়েছেন বলে সোহম জানিয়েছেন হলফনামায়।
উপার্জনের উৎস হিসেবে নিজেকে পেশাদার অভিনেতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য শাখায় স্নাতক সোহম। তাঁর স্ত্রী ব্যবসায়ী।
রাজনীতির পাশাপাশি সোহমের ব্যস্ততা তুঙ্গে টলিপাড়াতেও। ‘বাজিমাত’, ‘প্রেম আমার’, ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে’, ‘বোঝে না সে বোঝে না’, ‘গ্যাংস্টার’, ‘শুধু তোমারই জন্য’, ‘জামাই বদল’-সহ একাধিক বাণিজ্যসফল ছবির নায়ক সোহম কাজ করছেন ওয়েব সিরিজেও। মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুনছে তাঁর বেশ কিছু ছবি। এ বারের নির্বাচনে সোহম বিধানসভায় পা রাখতে পারেন কিনা, দেখার অপেক্ষায় তাঁর অনুরাগীরা।