বহিরাগত হয়েও শাসন করেছেন বলিউডের সুর-সাম্রাজ্য। রাজনীতির ময়দানেও তাঁর লড়াই অনন্য। ‘বড়াল’ পদবি বিদায় নিয়েছে। উত্তরপাড়ার সু্প্রিয় এখন আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বিজেপি-র টিকিটে চলতি বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা টালিগঞ্জে।
নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হলফনামায় বাবুল জানিয়েছেন তাঁর সম্পত্তির খতিয়ান। ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে তাঁর উপার্জন ১৩ লক্ষ ৩২ হাজার ৯৪০ টাকা। তার আগের আর্থিক বর্ষে এই অঙ্ক ছিল ১১ লক্ষ ৯২ হাজার ১৮০ টাকা।
বাবুলের স্ত্রী রচনা শর্মা সুপ্রিয় বিমানসেবিকা ছিলেন। দুই মেয়ে শর্মিলি এবং নয়না তাঁর উপর নির্ভরশীল বলে জানিয়েছেন গায়ক-সাংসদ।
বর্তমানে বাবুলের হাতে রয়েছে ৫১ হাজার টাকা। স্ত্রীর হাতে আছে নগদ ৩৭ হাজার টাকা। বাবুলের বড় মেয়ে শর্মিলীর হাতেও ১৪ হাজার টাকা আছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এসবিআই এবং অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের দু’টি অ্যাকাউন্টে বাবুলের নামে স্থায়ী আমানত আছে যথাক্রমে ২ লক্ষ ১৩ হাজার ৭৪০ টাকা এবং ২ লক্ষ ৩০ হাজার ১০১ টাকা। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের আরও একটি অ্যাকাউন্টে তাঁর নামে স্থায়ী আমানতের পরিমাণ ২ লক্ষ ১৫ হাজার ৬৬৮ টাকা।
এ ছাড়াও চারটি ব্যাঙ্কের সেভিংস অ্যাকাউন্টে তাঁর নামে আছে যথাক্রমে ১৩ হাজার ২৪১ টাকা, ২ লক্ষ ৭৮ হাজার ৮৫০ টাকা, ৭ হাজার ১৫৯ টাকা এবং ৩৫ হাজার ৭৬৮ টাকা।
বাবুল বিনিয়োগ করেছেন মিউচুয়াল ফান্ড এবং শেয়ার বাজারেও। মিউচুয়াল ফান্ডে তিনটি ক্ষেত্রে তাঁর বিনিয়োগ যথাক্রমে ৯৮ হাজার ৭৩৯ টাকা, ২২ হাজার ৬৬৬ টাকা, ১ লক্ষ ৬ হাজার ৭২৬ টাকা, ১ লক্ষ ৮ হাজার ৯৭৯ টাকা এবং ৩ লক্ষ ১৪ হাজার ৬৭৬ টাকা।
শেয়ারবাজারেও তাঁর বিনিয়োগের অঙ্ক কম নয়। ৮টি সংস্থায় তাঁর বিনিয়োগ ছাপিয়ে গিয়েছে লক্ষাধিক টাকা। পিপিএফ অ্যাকাউন্টে আছে ৩ লক্ষ ৩২ হাজার ৪৭৪ টাকা। একাধিক জীবনবিমায় তিনি বিনিয়োগ করেছেন বেশ কয়েক লক্ষ টাকা।
৪টি গাড়িরও উল্লেখ করেছেন বাবুল। সেগুলির মধ্যে অডি কিউ ফাইভ তিনি কিনেছিলেন ৫০ লক্ষ ৬৯ হাজার ৩২১ টাকায়। শেভ্রোলে বিট-এর দাম পড়েছিল ৪ লক্ষ ৯৬ হাজার ২৭৮ টাকা। হুন্ডাই আই ২০ কিনেছিলেন ১০ লক্ষ ৭৭ হাজার ৫ টাকায়।
বাবুলের রয়্যাল এনফিল্ড থান্ডারবার্ড মোটরবাইকের দাম ১ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা। উল্লেখ করেছেন এ বছর সেকেন্ড হ্যান্ডে কেনা মারুতি সুইফ্ট-এর কথাও। সেটার দাম পড়েছিল ৭৫ হাজার টাকা।
বাবুলের মালিকানায় থাকা ২০০ গ্রাম সোনার গয়নার দাম ৮ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। তাঁর স্ত্রীর ৩০০ গ্রাম সোনার গয়নার দাম ১৩ লক্ষ টাকা।
কৃষিজমি না থাকলেও বাবুল হলফনামায় জানিয়েছেন উত্তরাখণ্ডে ২৭০০ বর্গফুট আয়তনের তাঁর একটি জমি আছে। ২০১৭ সালে জমিটি কেনার সময় বাজারদর ছিল ১৮ লক্ষ টাকা। জমিটির বর্তমান বাজারমূল্য ১৯ লক্ষ টাকা বলে জানানো হয়েছে।
হাওড়ায় দু’টি, আসানসোলে একটি এবং মুম্বইয়ের লোখণ্ডওয়ালায় একটি ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করেছেন বাবুল। সেগুলির মধ্যে হাওড়ার একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা যৌথ ভাবে বাবুল এবং তাঁর স্ত্রী রচনার। কলকাতার মুকুন্দপুরে তাঁর স্ত্রী রচনার আরও একটি ফ্ল্যাট আছে। তবে সেটির মালিকানা যৌথ ভাবে তাঁর স্ত্রী রচনা এবং শাশুড়ি শুভার।
আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কে ৩টি গৃহঋণ চলছে বাবুলের নামে। তার মধ্যে প্রথম ঋণের পরিমাণ ৫৫ লক্ষ ৭৪ হাজার ১০০ টাকা। দ্বিতীয় ঋণ ২৮ লক্ষ ৯০ হাজার ১৪৯ টাকার এবং তৃতীয় ঋণ তিনি নিয়েছেন ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৮৩৯ টাকার।
রাজনীতিকেই নিজের পেশা বলে উল্লেখ করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য শাখায় স্নাতক বাবুল। ১৯৯১ সালে স্নাতক হন শ্রীরামপুর কলেজের প্রাক্তনী বাবুল। তাঁর স্ত্রী রচনা গৃহবধূ।
আরবসাগরের নোনা বাতাসে ৭ বছরের সংগ্রাম। তার পর প্রথম বড় ব্রেক ২০০০ সালে, ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’ ছবিতে। প্রথম ছবিতেই বাবুলের গানের আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। এই ছবি হৃতিক রোশনের মতো বাবুলকেও রাতারাতি তারকা করে তোলে মুম্বইয়ের আকাশে।
অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং নরেন্দ্র মোদীর অনুরাগী বাবুল বিজেপি-তে যোগ দেন ২০১৪ সালে। প্রথম লড়াইয়েই আসানসোল কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনকে হারিয়ে লোকসভায় পা রাখেন বাবুল। ২০১৯ সালে পরের লোকসভা নির্বাচনে একই কেন্দ্র থেকে হারিয়ে দেন তৃণমূলের মুনমুন সেনকে।
গত ৭ বছর বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেছেন বাবুল। চলতি বিধানসভা নির্বাচনে পদ্মশিবিরের তূণীরের অন্যতম অস্ত্র তিনি।