Lok Sabha Election 2024

‘নবাগত’ পাঠানের হাতে বহরমপুরে ‘বধ’ অধীর, চূর্ণ মুর্শিদাবাদের দুর্গও, জেলায় ধরাশায়ী কংগ্রেস

নিজের মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় তাঁর গলায় কাস্তে-হাতুড়ি-তারা আঁকা উত্তরীয় নজর কেড়েছিল। কিন্তু সেই জোট সাফল্য পায়নি। বরং প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফের কাছে ধরাশায়ী হলেন অভিজ্ঞ অধীর চৌধুরী।

Advertisement

অমিত রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪ ১৭:৩৪
Share:

(বাঁ দিকে) অধীর চৌধুরী। ইউসুফ পাঠান (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

টানা ২৫ বছর পর বহরমপুর ‘হাত’ছাড়া। অধীর চৌধুরী ভূপতিত। তা-ও রাজনীতির মাঠে নেহাতই আনকোরা ইউসুফ পাঠানের বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে জয় পেতে বামদের সঙ্গে জোট বেঁধে ময়দানে নেমেছিলেন অধীর। নিজের মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় তাঁর গলায় কাস্তে-হাতুড়ি-তারা আঁকা উত্তরীয় নজর কেড়েছিল। কিন্তু সেই জোট সাফল্য পায়নি। বরং প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফের কাছে ধরাশায়ী হলেন অভিজ্ঞ এই নেতা।

Advertisement

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে অধীরকে বাঁচিয়েছিল বহরমপুর বিধানসভা। সেখান থেকে ৮১ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে গড় রক্ষা করেছিলেন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ। সেই সিপিএম প্রকাশ্যেই অধীরের হয়ে ময়দানে নেমেছিল। সে যাত্রায় রক্ষা পেলেও, এ বারের ভোটে জিততে পারলেন না তিনি।

তবে অধীর দুর্গ যে বেশ নড়বড়ে হয়েছে, তার ইঙ্গিত মিলেছিল নীলবাড়ির লড়াইয়ে। সে বার অধীর অনুগামী মনোজ চক্রবর্তীকে হারিয়ে বহরমপুরে পদ্মফুল ফুটিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী সুব্রত মৈত্র। বহরমপুর লোকসভার বাকি ছয় বিধানসভা দখল করেছিল তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোটেও সিপিএমের সঙ্গে জোট বেঁধে কোনও সুবিধাই করতে পারেনি অধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। লোকসভা ভোটেও সেই একই ধারা বজায় রেখে বহরমপুরের পাঁচ বারের কংগ্রেস সাংসদকে হারিয়ে দিল তৃণমূল।

Advertisement

১৯৯১ সালে নবগ্রাম বিধানসভায় প্রথম ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন অধীর। সে বার হেরে গিয়েছিলেন। তার পাঁচ বছর পর সেই নবগ্রাম থেকে জিতেই বিধায়ক হন তিনি। তার পর আর অধীরের রথ থামেনি। কিন্তু বঙ্গ রাজনীতির সেই ‘লম্বা রেসের ঘোড়াকে’ও থামতে হল এ বারের লোকসভা নির্বাচনে।

তাঁর জন্য যে এ বারের লোকসভা ভোট কঠিন হতে চলেছে, তার ইঙ্গিত মিলেছিল গত ১০ মার্চ। ওই দিন ব্রিগেড সমাবেশ থেকে বহরমপুরে প্রার্থী হিসাবে ক্রিকেটার ইউসুফের নাম ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে অধীর তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছিলেন, বহরমপুরে তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী হোন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সেই চ্যালেঞ্জের জবাব দিতেই মোক্ষম ‘চাল’ দেন অভিষেক। আর তাতেই বহরমপুরে ‘বাজিমাত’।

লোকসভা ভোট ২০২৪

ক্রিকেটার ইউসুফ প্রচারে নেমেই ঝড় তুলে‌ছিলেন। তাতেই অধীরের ‘ঘুম ছুটেছিল’ বলেই তৃণমূলের দাবি। সঙ্গে স্থানীয় চিকিৎসক নির্মলচন্দ্র সাহাকে বিজেপি আবার প্রার্থী করায় ‘চাপ’ বেড়েছিল কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতার। ত্রিকোণ এই লড়াইয়ে মঙ্গলবার উৎকণ্ঠার প্রহর গুণেছেন তিন প্রার্থী-সহ রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরাও। সব শেষে হেরে গিয়েছেন বহুযুদ্ধের সৈনিক অধীর। এআইসিসি নেতৃত্বের কাছেও অধীরের হার অবশ্য অপ্রত্যাশিতই ঠেকেছে। কারণ, ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন কংগ্রেসের চরম বিপর্যয়ের দিনেও বহরমপুরে হাত প্রতীকে জিতেছিলেন তিনি। সেই অধীরকেই এ বার আর লোকসভার অলিন্দে দেখা যাবে না বলেই মন খারাপ কংগ্রেস নেতৃত্বের।

১৯৯৮ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস বহরমপুরে প্রার্থী করে প্রদীপ মজুমদারকে। সেই ভোটে তৃতীয় স্থান পেয়েছিল কংগ্রেস। সেই ভোটে তৃণমূলের সমর্থনে বিজেপির প্রার্থী কর্নেল সব্যসাচী বাগচী দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিলেন। জয়ী হন আরএসপির প্রমথেশ মুখোপাধ্যায়। কিন্তু ১৯৯৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুরে কংগ্রেস প্রার্থী হন অধীর। নবগ্রামের কংগ্রেস বিধায়ক হয়েই ভোটে লড়াই করেছিলেন তিনি। সেই ভোটে আরএসপি সাংসদ প্রমথেশকে হারিয়ে প্রথম বারের জন্য সাংসদ হন। পর পর পাঁচ বার বহরমপুর থেকে সাংসদ হন অধীর। এই আসন থেকে জিতে রেল প্রতিমন্ত্রীও হয়েছিলেন। আবার ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ৫২টি আসনে জয়ী হয়ে তাঁকেই লোকসভার দলনেতা হিসাবে বেছে নিয়েছিল এআইসিসি। সেই লড়াকু প্রার্থী অধীরকেই হার মানতে হল।

বহরমপুর লোকসভার আওতায় থাকা সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ছ’টিতে তৃণমূল ও একটিতে বিজেপি জয়ী হয়েছিল। বহরমপুরে বিজেপির থেকে ২ লক্ষ ৫৩ হাজার ৩১৩ ভোটে এগিয়েছিল তৃণমূল। কংগ্রেস প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূলের চেয়ে। তাই অধীরের পরাজয়কে অনেকেই ‘অবশ্যম্ভাবী’ বলে মনে করছে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে প্রথম বার যখন প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদী, তখন ৪৪ আসন নিয়ে বিরোধী আসনে বসেছিল কংগ্রেস। সে বার লোকসভার দলনেতা হয়েছিলেন মল্লিকার্জুন খড়্গে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। আবার ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে জিতে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা হওয়া অধীরকেও পরাস্ত হতে হল ২০২৪ সালের ভোটে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement