সভায় যোগী আদিত্যনাথ। মঙ্গলবার সিউড়িতে। —নিজস্ব ছবি।
বালি পাচার ও লুটের অভিযোগ বীরভূমে নতুন নয়। সেই অভিযোগ এ বার উঠে এল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বক্তব্যেও।
মঙ্গলবার, বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দেবতনু ভট্টাচার্যের সমর্থনে সিউড়ির বেণীমাধব মাঠে জনসভা করেন যোগী। টানা ২৩ মিনিটের বক্তৃতায় দুর্নীতি, অনুপ্রবেশ, সন্ত্রাস, সংখ্যালঘু তোষণ, মেরুকরণ— এমন নানা বিষয়ে রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে বিঁধেছেন যোগী। বক্তব্যের মাঝেই আদিত্যনাথ বলেন, ‘‘আমি শুনেছি এখানকার কিছু মাফিয়া বালির ঘাট দখল করে জনতাকে শোষণ করছে। নদীর প্রকৃতি বদলে দিতে চাইছে। পুরো ব্যবস্থা বদলে দিচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘যত বড় মাফিয়াই হোক, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে গরিবের কাজে লাগানোর কাজ যদি কেউ করতে পারে, সেটা বিজেপি।’’ এর পরেই নিজের রাজ্যের কথা তুলে তিনি বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে অনেক বড় বড় মাফিয়া ছিল। ওই মাফিয়ারা হয় রাজ্য ছেড়ে দিয়েছে, না হয় তাদের নরকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে!’’
তীব্র গরমকে উপেক্ষা করে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে ভিড় উপচে পড়েছিল সিউড়ির সভায়। মহিলাদের সংখ্যাও ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে, সভার নির্দিষ্ট সময় দুপুর ১টা বলা থাকলেও যোগীর হেলিকপ্টার মুর্শিদাবাদ থেকে বীরভূমের সেচ কলোনির মাঠে নামে বেলা দুটো নাগাদ। মঞ্চে পৌঁছতে ২টো ১০ হয়ে যায়। তবে, যোগীকে দেখার এবং বক্তব্য শোনার উৎসাহ ছিল। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাসে বা গাড়িতে চেপে বহু মানুষ সিউড়িতে আসতে শুরু করেন। হাতে গেরুয়া পতাকা ও মুখে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিতে দিতে তাঁরা মাঠে প্রবেশ করেন৷ যোগীকে দেখেই ‘বুলডোজ়ার বাবা জিন্দাবাদ’ ধ্বনি তোলে জনতা।
যদিও যোগীর বক্তব্য শেষ হওয়ার আগে ভিড়ের একাংশ বাড়ি ফেরার পথ ধরে৷ তীব্র গরমের কারণেও অনেকেই সভার মাঝেই মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। এরই মাঝে একটি ঝাড়খণ্ডের নম্বর প্লেট যুক্ত বাসের ছবি সমাজমাধ্যমে তুলে ধরে তৃণমূল দাবি করে, যোগীর সভায় মাঠ ভরাতে ভিন্ রাজ্য থেকে লোক নিয়ে আসতে হয়েছে বিজেপিকে। বিজেপির পাল্টা দাবি, ভিত্তিহীন অভিযোগ। সাধারণ মানুষ যোগীকে দেখতে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই ভিড় করেছিলেন।
এ দিন সভামঞ্চে ছিলেন বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি, অসুস্থ ধ্রুব সাহা-সহ জেলার প্রায় সব নেতাই উপস্থিত ছিলেন। তথ্যগত ত্রুটির জেরে মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেলেও বীরভূম কেন্দ্রে বিজেপির প্রথম প্রার্থী দেবাশিস ধর এবং বর্তমান প্রার্থী দেবতনু ভট্টাচার্যও ছিলেন। তাঁর হয়েই প্রচারসভা ছিল এ দিন। মঞ্চ থেকে যোগী বলেন, ‘‘আজ যখন বাংলায় আসি, তখন ভেবেই আফশোস হয় যে মনীষীদের আত্মা দুঃখিত হবে। কারণ, তাঁরা যে সোনার বাংলা কল্পনা করেছিলেন, কংগ্রেস, কমিউনিস্ট এবং তৃণমূল কংগ্রেস সেই বাংলাকে রক্তাক্ত করেছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘ক্ষমতালোভী, দুর্নীতিবাজ ও মাফিয়া এখানকার সাধারণ মানুষের রক্ত চোষার কাজ করছে।’’ নরেন্দ্র মোদীর পরিকাঠামো উন্নয়ন ও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা সাধারণ মানুষকে তৃণমূল পেতে দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন যোগী।
তবে, যোগীর এত আক্রমণের পরেও জেলা তৃণমূলের পক্ষ থেকে তেমন প্রতিক্রিয়া মেলেনি। দলের কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সিউড়ির সভায় ঠিক কী বলেছেন শুনিনি। তাই প্রতিক্রিয়া দেওয়া ঠিক হবে না।’’ প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এ দিন জনসভার পরে সিউড়ির ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে যান আদিত্যনাথ। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত অতিথিদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত পরিচয় করেন যোগী। এর পরে সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী প্রণবানন্দ মহারাজের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। আরতিও করেন তিনি। পাশের শিব মন্দিরে পুজো দেন তিনি। সহ প্রতিবেদন: সৌরভ চক্রবর্তী