—প্রতীকী চিত্র।
শাসকদল ঘোষিত তফসিলি জাতি ও জনজাতিমানুষের আস্থা অর্জনে জনসংযোগ কর্মসূচি ‘তফসিলি সংলাপ’ শুরু হয়েছে বীরভূমেও। নির্বাচনী আচরণবিধি চালু থাকায় প্রশাসনের প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েই মঙ্গলবার এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে নানুর ও খয়রাশোলের দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়।
কিন্তু যাঁদের জন্য এই কর্মসূচি, শাসকদলের সেই এসটি-এসসি (তফসিলি জাতি, জনজাতি) সেলের দায়িত্বে থাকা দুই জেলা সভাপতির নাকি এ ব্যাপারে অন্ধকারে। তৃণমূলের এসটি (তফসিলি জনজাতি) সেলের জেলা সভাপতি বুদ্ধদের হাঁসদার দাবি, ‘‘এ ব্যাপারে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।’’ একই বক্তব্য এসসি (তফসিলি জাতি) সেলের জেলা সভাপতি নবগোপাল বাউড়িরও।
জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘যা কিছু হচ্ছে কলকাতায় দলের উপদেষ্ঠা সংস্থার তত্বাবধানে। প্রতিটি বিধানসভা অনুযায়ী ওই সংস্থার তরফে সব স্থির করে স্থানীয় বিধায়ক, যেখানে বিধায়ক নেই সেখানে ব্লক নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেই কর্মসূচি কী ভাবে পালিত হবে সেটা ঠিক হচ্ছে। তবে তপসিলি জাতি জনজাতি সেলের সভাপতিরা কেন জানেন না তা বলতে পারছি না।’’
প্রসঙ্গত তফসিলিজাতি ও জনজাতি ভোট সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত মাসের ১২ তারিখ ওই কর্মসূচি ঘোষিত হয়। কলকাতার নজরুল মঞ্চে ওই কর্মসূচি ঘোষণা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একাধিক মন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন প্রতিটি জেলা থেকে এসটি-এসসি সেলের জেলার প্রতিনিধিরা। সেই তালিকায় ছিলেন বীরভূমের ১১টা বিধানসভা থেকে পাঁচ জন করে মোট ৫৫ জন প্রতিনিধি। অভিযোগ, তাঁরাই নাকি কর্মসূতিতে ব্রাত্য রয়েছেন।
জানা গিয়েছে, তফসিলি সংলাপ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য যেখানে যেখানে তফসিলি জাতি ও জনজাতির মানুষ বসবাস করেন, তাঁদের কাছে পৌঁছে তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে রাজ্য সরকার তাঁদের জন্য ঠিক কী কী কাজ করেছে তা বলা।
অন্য দিকে, বিজেপি সরকার তাঁদের জন্য কী কী করেছে তাও বোঝানো। যাতে তফসিলি জাতি ও জনজাতির মানুষেরা তফাতটা বুঝতে পারেন। ঠিক ছিল, প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় ১০ জন তফসিলি জাতি ও ৫ জন তফসিলি জনজাতির নেতা, কর্মীদের নিয়ে একটা দল গঠিত হবে। তাঁরাই গ্রামে গ্রামে ঘুরবেন। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে যাবেন। প্রচারের জন্য সুসজ্জিত গাড়ি সঙ্গে থাকবেন থাকবেন উপদেষ্টা সংস্থার প্রতিনিধিরা।
জানা গিয়েছে, গত মাসের ১৫ তারিখ থেকে কর্মসূচি শুরু হয়েছিল রাজ্যের অন্য প্রান্তে। বীরভূমে কর্মসূচি শুরু হয়েছে সোমবার। খয়রাশোলের পারশুণ্ডি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। মঙ্গলবার সকালে কর্মসূচি শুরু হয় নানুর ব্লকে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে। উপস্থিত ছিলেন নানুরের বিধায়ক বিধানচন্দ্র মাজি, ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য, জেলা পরিষদের সদস্য রমেশ সাহা প্রমুখ।
অন্য দিকে, এ দিন খয়রাশোলের কেন্দ্রগড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কর্মসূচির সময় উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের ব্লক কোর কমিটির আহ্বায়ক শ্যামল গায়েন। জানা গিয়েছে, গাড়িগুলি প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ধরে ধরে তফসিলি জাতি, জনজাতি এলাকায় ঘুরবে। কিন্তু এসসি-এসটি সেল কেন খবর পেল না?
দুই শাখা সংগঠনের নেতাদের দাবি, ফিরে এসে কর্মসূচি সফল করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল কিন্তু জানাতে তো হবে। গত দু’বছর ধরে শাখা সংগঠন সে ভাবে গুরুত্ব পায়নি, এমন অভিযোগ নতুন নয়। তফসিলি সংলাপকে ঘিরে ফের সেই প্রসঙ্গে উঠল ।
নানুরের বিধায়ক বলেন, ‘‘কর্মসূচির বিষয়ে বিধায়ক এবং ব্লক সভাপতিরা জানেন।’’ অন্য দিকে, খয়রাশোল ব্লকের তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক শ্যামল গায়েন বলছেন, ‘‘তফসিলি জাতি সেলের জেলা সভাপতি তথা জেলা পরিষদের সদস্য নবগোপাল বাউড়ি খয়রাশোল ব্লকেই থাকেন। কিন্তু তিনি কোনও কর্মসূচিতে অংশ নেন না। তাই তফসিলি জাতি, জনজাতি সেলের কর্মীদের মধ্যে যাঁরা সক্রিয় তাঁরাই আছেন।’’ কিন্তু বুদ্ধদেব কেন জানতে পারলেন না? সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।