—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
পঞ্চায়েত ভোট-পর্বে শাসকের চোখে চোখ রেখে প্রবল লড়াই চালিয়েছিল আইএসএফ। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে ভাঙড় জুড়ে প্রশ্ন উঠেছে, কোথায় গেল তাদের সেই দাপট? রাজনৈতিক মহলে একই সঙ্গে চর্চা, কোথায়, কী ভাবে বদলে গেল এই সমীকরণ?
ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী অবশ্য জানিয়েছেন, দলের ‘জোশ’ একই রকম আছে।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে জন্ম হয় আইএসএফের। সিপিএমের সঙ্গে জোট করে প্রথমবার ভোট যুদ্ধে নেমেই ভাঙড়ে জেতে তারা। ২০২২ সালে গ্রেফতার হন নওসাদ। তাতে আদতে আইএসএফের পালে হাওয়া লাগে। পরের বছর পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন পর্ব থেকে শুরু করে গণনার দিন পর্যন্ত, ভাঙড়ে শাসককে চোখে চোখ রেখে টক্কর দেয় আইএসএফ। তাদের দাপটে আরাবুল ইসলামের মতো ভাঙড়ের দাপুটে তৃণমূল নেতাকেও টেবিলের তলায় আশ্রয় নিতে হয়েছিল। সেই ভোটেও দেখা গিয়েছে, বহু গ্রাম সংসদ তো বটেই, একাধিক পঞ্চায়েত সমিতি, এমনকি জেলা পরিষদের আসনেও জয়লাভ করেছিল তারা।
কিন্তু, লোকসভা ভোটের মুখে আইএসএফের সেই দাপট সে ভাবে চোখে পড়ছে না বলেই দাবি এলাকার মানুষের। রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্য-রাজনীতির নানা সমীকরণেই হঠাৎ করে কি ‘পিছিয়ে’ পড়েছে নতুন দলটি? দলের নীতিগত সিদ্ধান্তের ভুলকেও দুষছেন কেউ কেউ। লোকসভা ভোটের অনেক আগে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে লড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন নওসাদ। কিন্তু পরে পিছিয়ে আসেন তিনি। কেন পিছিয়ে এলেন তিনি— এই প্রশ্ন এবং তার সম্ভাব্য জবাব নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হয়। নওসাদ বা দলীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে সদুত্তর না মেলায় তাদের ভাবমূর্তি ধাক্কা খায় বলেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মত।
পাশাপাশি বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভেঙে লোকসভায় একা লড়াই করার সিদ্ধান্তেও কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। রাজনৈতিক মহলের মতে, কর্মীরা বুঝতে পারছেন, একার ক্ষমতায় আইএসএফের পক্ষে রাজ্যের কোনও আসনে সে ভাবে লড়াই দেওয়াই সম্ভব নয়। তাদের শক্ত ঘাঁটি ভাঙড় যে কেন্দ্রে, সেই যাদবপুরেও একা লড়ে তারা হয়তো প্রথম তিনেই আসতে পারবে না। এই পরিস্থিতিতেই কর্মীরা লড়াইয়ে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন বলেও একটি অংশের দাবি। ফলে ঝিমিয়ে পড়ছে দল। সম্প্রতি ভাঙড়ে আক্রান্ত আইএসএফ কর্মীকে দেখতে যান যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য। সেই সৌজন্যের রাজনীতিকেও আইএসএফের তরফে ‘লোক দেখানো’ আখ্যা দেওয়া হয়। সাধারণ কর্মীরা তা ভালভাবে নেননি বলেই মনে করছেন অনেকে।
এ সবের ফল ভাল হচ্ছে না বলেই আইএসএফের একাংশের মত। দলের একাধিক নেতা-কর্মী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। যে নওসাদ এলাকায় এলে ভিড় সামলানো যেত না, তাঁর জনসভায় আসন ফাঁকা থাকছে বলেও স্থানীয় সূত্রের খবর। আইএসএফের হয়ে পাঁচ বিধানসভার আহ্বায়ক পদে থাকা হোসেন গাজি সম্প্রতি দলের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেছেন। দলের নীতিগত বিচ্যুতি-সহ নানা কারণ তুলে ধরেছেন তিনি। যাদবপুর লোকসভা থেকে নির্দল হিসেবে লড়ার কথাও ঘোষণা করেছেন ওই নেতা।
রাজনৈতিক মহলের কথায়, উল্টো দিকে, তৃণমূল তাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি, দুর্ব্যবহারের অভিযোগ কিছুটা হলেও সামাল দিতে পেরেছে আরাবুলের অবর্তমানে। আর এক নেতা কাইজার আহমেদও কার্যত নিষ্ক্রিয় এখন। ফলে দলে কোন্দলও কমেছে। সওকাত মোল্লার হাতে দায়িত্ব আসায় এলাকায় দলের মুখেরও বদল হয়েছে। সওকাত বলেন, “ভাঙড়ের মানুষকে ভুল বুঝিয়ে, ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে আইএসএফ ক্ষমতায় এসেছিল। মানুষ নিজেদের ভুল বুঝতে পারছেন।”
নওসাদ অবশ্য দলের ক্ষয় মানছেন না। ভোটের প্রচারে গোটা রাজ্য দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। তাঁর কথায়, “ভাঙড়ে এখনও পর্যন্ত দু’টো সভাতে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। আমাদের ‘জোশ’ একই রকম আছে।’’ তৃণমূলের ‘প্ররোচনায়’ পা না দিয়ে বলেছেন কর্মীদের। তাঁর কথায়, ‘‘চেষ্টা করছি, পঞ্চায়েত নির্বাচনের মত হিংসা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ ভোট করতে।’’