গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লোকসভা নির্বাচনে প্রথম দফায় ভোট হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের তিন আসনে। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার— এই তিন কেন্দ্রেই প্রায় সব বুথের বাইরে শুক্রবার সকাল থেকেই লম্বা লাইন পড়েছিল ভোটারদের। এই তিন কেন্দ্রের ভোটে বিক্ষিপ্ত কিছু হিংসার অভিযোগ উঠেছে ঠিকই, কিন্তু মোটের উপর ভোট শান্তিপূর্ণই হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে শুক্রবার এই তিন কেন্দ্রের কোথায় কত ভোট পড়েছে তা নিয়ে নানা উৎসাহ ছিল। শনিবার কমিশন সূত্রে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলার তিন আসনে ভোটদানের হার ২০১৯ সালের থেকে কম। এ বার তিন কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৮১.৯১ শতাংশ। যা গত বারের তুলনায় আড়াই শতাংশের বেশি কম।
কমিশন সূত্রে খবর, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার— তিন লোকসভা আসনে শুক্রবার ভোট পড়েছে ৮৪.৫৭ শতাংশ। শুধু মোটের হিসাবে নয়, তিন আসনে আলাদা আলাদা ভাবে ভোটের হারের দিক থেকেও ২০১৯ সালের থেকে কম।
শুক্রবার কোচবিহারে ভোট পড়েছে ৮২.১৭ শতাংশ। গত বার এই কেন্দ্রে ভোটদানের হার ছিল ৮৪.২৫ শতাংশ। এ বার এই কেন্দ্রের বিদায়ী বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের সঙ্গে লড়াই এই লোকসভা কেন্দ্রেরই অন্তর্গত সিতাই বিধানসভার বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়ার। শুধু তা-ই নয়, কোচবিহারে লড়াইয়ে ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী নীতীশচন্দ্র রায়ও। কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন পিয়া রায়চৌধুরী।
আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে শুক্রবার ভোটদানের হার ছিল ৭৯.৭৬ শতাংশ। ২০১৯ সালে এই লোকসভা আসনে ভোট পড়েছিল ৮২.৬৯ শতাংশ। গত বার এই কেন্দ্র থেকে জয় পেয়েছিল বিজেপি। তবে এ বার বিজেপি আলিপুরদুয়ারে প্রার্থী বদল করেছিল। বিদায়ী সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লার জায়গায় ২০২৪ সালের লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী করেছিল মাদারিহাট বিধানসভার বিধায়ক মনোজ টিগ্গাকে। প্রকাশ চিক বরাইককে টিকিট দিয়েছিল তৃণমূল।
বাংলার তিন আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে জলপাইগুড়িতে। গত বারও এই তিন আসনের মধ্যে শীর্ষে ছিল এই কেন্দ্রই। এ বার জলপাইগুড়িতে ভোটদানের হার ৮৩.৬৬ শতাংশ। ২০১৯ সালে এই কেন্দ্রে ভোট পড়েছিল ৮৬.৬৯ শতাংশ। জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে এ বার বিদায়ী সাংসদ জয়ন্তকুমার রায়কেই প্রার্থী করে বিজেপি। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের হয়ে লড়েন এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ধূপগুড়ি বিধানসভার বিধায়ক নির্মলচন্দ্র রায়।
অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে বদ্ধপরিকর কমিশন। ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশের সময়ই কমিশন জানিয়ে দেয়, ভোট শান্তিপূর্ণ করাতে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে। প্রথম দফা ভোটের আগে কমিশনের কাছে বাংলার এই তিন আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথার কারণ ছিল কোচবিহার। ভোটের আগেও নিয়মিত ভাবে উত্তাপ ছড়িয়ে গিয়েছে কোচবিহার। তা-ই এই আসনের দিকে বাড়তি নজর ছিল কমিশনের। ভোটের দিনেও কোচবিহারের কয়েকটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনার খবর প্রকাশ্যে এসেছে। কমিশনের কাছে অভিযোগও জমা পড়েছে। সেই তুলনায় আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়িতে ভোটপর্ব মিটেছে নির্বিঘ্নেই। যদিও শিলিগুড়ি লাগোয়া এলাকা থেকে কিছু বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর এসেছে প্রায় দিনভর। তবে তা বাদ দিলে তেমন বড় কোনও হিংসা বা অশান্তির খবর মেলেনি এই জেলা থেকে।