Lok Sabha Election 2024

বালুরঘাটের বালিতে এখন ‘বাস্তুহারা’ কোদাল-বেলচা! বিপ্লব চায় তৃণমূলই, পদ্মের সুকান্ত এগিয়ে ভোট-অঙ্কে

একটা সময় শুধু বামশরিক আরএসপি ভোট পেত বালুরঘাটে। বাকিরা লড়াই দিত। এখন আরএসপি অস্তমিত। মূল লড়াইয়ে বিজেপি এবং তৃণমূল। পরপর তিন বার বদল দেখেছে বালুরঘাট। এ বার কী হবে?

Advertisement

পিনাকপাণি ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৫৮
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

বালুরঘাট মানেই কোদাল-বেলচা। আত্রেয়ী আর পুনর্ভবা নদীর এই এলাকা দীর্ঘ দিন ধরেই বামশরিক আরএসপির বাস্তুভিটে ছিল। ১৯৭৭ সাল থেকে টানা ২০০৯ সাল পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের এই আসনে আরএসপি ছাড়া অন্য দল জয়ের কথা ভাবতেই পারত না। পলাশ বর্মণ এবং রণেন বর্মণ টানা জেতেন যথাক্রমে পাঁচ বার এবং চার বার। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় বালুরঘাটের পালাও। ২০১৪ সালে বালুরঘাট লোকসভা দখল করে তৃণমূল। কিন্তু তারাও সে আসন ধরে রাখতে পারেনি। ২০১৯ সালে বালুরঘাট জেতে বিজেপি। সেই বছরেই ‘তৃতীয়’ হয়ে যাওয়া কোদাল-বেলচা এই লোকসভা নির্বাচনে কোনও হিসাবের মধ্যেই আর নেই।

Advertisement

তবে প্রার্থী দিয়েছে আরএসপি। জয়দেবকুমার সিদ্ধান্তকে মনোনয়ন দিয়েছে বামফ্রন্ট। গত লোকসভা নির্বাচনে ৭২,৯৯০ ভোট পেয়েছিল আরএসপি। কংগ্রেস পেয়েছিল ৩৬,৭৮৩টি ভোট। সেই হিসাবে বাম-কংগ্রেস জোট লড়ছে ১০ শতাংশের কম ভোটের পুঁজি নিয়ে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

এই আসনে তৃণমূলের উত্থান ২০০৯ সাল থেকেই। এ বারের প্রার্থী বিপ্লব মিত্র সে বারেও প্রার্থী হয়েছিলেন। হেরে গিয়েছিলেন মাত্রই ৫০০৫ ভোটে। পরের বার ২০১৪ সালে তৃণমূল প্রার্থী করেছিল নাট্যব্যক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষকে। অর্পিতা জিতে যান লক্ষাধিক ভোটে। সে বারেও দ্বিতীয় আরএসপি এই আসনে তিন লক্ষের বেশি ভোট পায়। কিন্তু গোটা ছবি বদলে যায় ২০১৯ সালে। আরএসপি চলে যায় তৃতীয় স্থানে। বিজেপি চলে আসে এক নম্বরে। তৃণমূলের অর্পিতাকে হারিয়ে দেন রাজনীতিতে ‘নবাগত’ সুকান্ত মজুমদার। সেই জয়ের তিন বছরের মধ্যেই সুকান্ত রাজ্য বিজেপির সভাপতি হন। সুকান্তের সভাপতি হওয়াও বালুরঘাটের ভোটে অন্যতম আলোচ্য। বিজেপির প্রচার অনুযায়ী, সুকান্তই রাজ্যের প্রধান দলগুলির মধ্যে প্রথম এবং একমাত্র রাজ্য সভাপতি, যিনি উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা।

Advertisement

এ বার তাই বালুরঘাটে আলাদা নজর বিজেপির। রাজ্য সভাপতিকে জেতাতে মরিয়া দল। প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দু’জনেই এখনও পর্যন্ত একমাত্র এই আসনেই এসেছেন। আবার অর্পিতার পরিবর্তে প্রার্থী হওয়া রাজ্যের মন্ত্রী বিপ্লবের হয়ে প্রচারে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সব মিলিয়ে পর পর দু’বার পরিবর্তনের সাক্ষী বালুরঘাটে লড়াইয়ের সম্ভাবনা আছে।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফল অনুযায়ী এই আসনে বিজেপির শক্তি বেশি তিনটি বিধানসভা এলাকায়। বালুরঘাট, তপন এবং গঙ্গারামপুর। সেই নিরিখে তৃণমূল শক্তিশালী ইটাহার ও কুমারগঞ্জে। কুশমন্ডি এবং হরিরামপুরে তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও ব্যবধান ছিল কম। গত বিধানসভা নির্বাচনেও সেই ফলাফলের ছাপ ছিল। পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক নির্বাচনী ইতিহাস বলছে, বিধানসভার সঙ্গে লোকসভার ধারা মেলে না। যে তৃণমূল ২০১৬ সালে বিধানসভায় জিতেছিল, তারা ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বড়সড় ধাক্কা খায়। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তারা লোকসভা ভোটের ফলাফলের বিপরীতে গিয়ে রাজ্যের ক্ষমতা দখল করে। এই ভোট যে হেতু দেশের সরকার গঠনের, রাজ্যের নয়, তাই এখানে ‘দিদি ফ্যাক্টর’-এর চেয়ে ‘মোদী ফ্যাক্টর’ বেশি কাজ করবে বলেই মনে করছে বিজেপি। সেই ধারা বজায় থাকলে বালুরঘাটের ফল প্রত্যাশিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement