CPM West Bengal

সিপিএমের পলিটব্যুরোর বিবৃতিতে পশ্চিমবঙ্গ নেই! হতাশা কেরলের ফল নিয়ে, গুরুত্ব হারাচ্ছে আলিমুদ্দিন?

সিপিএম পলিটব্যুরোর বৈঠকে মুর্শিদাবাদে মহম্মদ সেলিম এবং বহরমপুরে অধীর চৌধুরীর হার নিয়ে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আপাতত রাজ্য কমিটির উপরেই ফলাফল পর্যালোচনার ভার দিয়েছে পলিটব্যুরো।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২৪ ২২:৩০
Share:

(বাঁ দিক থেকে) পিনারাই বিজয়ন, সীতারাম ইয়েচুরি এবং মহম্মদ সেলিম। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পরে রবিবার প্রথম বৈঠকে বসেছিল সিপিএম পলিটব্যুরো। সোমবার সেই বৈঠকের প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লির একে গোপালন ভবন। কিন্তু সেই বিবৃতিতে বাংলার নামোল্লেখ পর্যন্ত নেই! যা দেখে কিছুটা হতবাক বাংলার সিপিএমের অনেক প্রথম সারির নেতা। ঘরোয়া আলোচনায় তাঁরা স্পষ্টই বলছেন, অতীতে কবে এমন হয়েছে বা আদৌ হয়েছে কি না, মনে করতে পারছেন না।

Advertisement

সিপিএম পলিটব্যুরোর বিবৃতিতে লোকসভা নির্বাচন এবং ফলাফল সম্পর্কে তাদের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। যার মোদ্দা কথা, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে বিজেপির যে ‘অগ্রগমন’ দেখা গিয়েছিল, এ বার তা থমকে গিয়েছে। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র ফলাফল নিয়েও ইচিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে পলিটব্যুরো। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় অংশে ‘বামেদের পারফরম্যান্স’ শীর্ষক অনুচ্ছেদ দেখেই বঙ্গের অনেক সিপিএম নেতার চোখ কপালে উঠেছে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘বামদলগুলি সামান্য হলেও লোকসভায় তাদের উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে পেরেছে। বামেদের মোট আট জন সাংসদ লোকসভায় যাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে চার জন সিপিএম, দু’জন সিপিআই এবং দু’জন সিপিআই (এমএল)-এর।’ এর পরেই লেখা হয়েছে, ‘পলিটব্যুরো দলের পারফরম্যান্সে হতাশ। বিশেষত কেরলের ফলাফল নিয়ে। রাজ্য কমিটিগুলির পর্যালোচনার পর দলের উচিত গভীরে গিয়ে পর্যালোচনা করা।’’

কেরলের কথা উল্লেখ করা হলেও বাংলার নামটুকুও নেই পলিটব্যুরোর বিবৃতিতে। ২০১৯ সালের মতো ২০২৪ সালেও বাংলায় ‘শূন্য’ পেয়েছে সিপিএম তথা বামেরা। এই প্রথম লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে লড়েছিল তারা। কংগ্রেস একটি আসন জিততে সক্ষম হলেও সিপিএম খাতা খুলতে পারেনি। কিন্তু পলিটব্যুরোর বিবৃতিতে কেরলের নাম থাকলেও বাংলার নাম নেই কেন? তা হলে কি বাংলার ফলাফল নিয়ে পলিটব্যুরোর কোনও ‘হতাশা’নেই? দল কি ধরেই নিয়েছিল তাদের পশ্চিমবঙ্গে এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে? প্রশ্ন করায় পলিটব্যুরোর সদস্য নীলোৎপল বসু বলেন, ‘‘বাংলার পরিস্থিতি কেরলের তুলনায় অনেক প্রতিকূল। আমরা পলিটব্যুরোর বৈঠকে এই কঠিন পরিস্থিতিতে বাংলার লড়াইকে অভিনন্দিত করেছি। তবে কেরল নিয়ে আমাদের আরও ভাল করার আশা ছিল। ওখানে ভোটও কমেছে।’’

Advertisement

কেরলে গত বার একটি আসন জিতেছিল সিপিএম। এ বারেও আসনের সংখ্যা তাই-ই রয়েছে। তবে গত লোকসভায় সিপিএমের তিন জন সাংসদ ছিলেন। এ বার সেটা বেড়ে চার হয়েছে। অতিরিক্ত বলতে রাজস্থানের সিকর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জেতা অমরা রাম।

রাজ্য সিপিএমের এক নেতার কথায়, ‘‘পলিটব্যুরোর বিবৃতিতে বাংলার যে উল্লেখ নেই, এটা গুরুত্ব হারানোর লক্ষণ।’’ এখন পলিটব্যুরোয় বাংলা থেকে তিন জন সদস্য রয়েছেন। মহম্মদ সেলিম, রামচন্দ্র ডোম এবং সূর্যকান্ত মিশ্র। বয়সবিধিতে পরের বার সূর্যকান্তের বাদ পড়ার কথা। রাজ্য সিপিএমের ওই নেতার আশঙ্কা, পরের বার পার্টি কংগ্রেসে পলিটব্যুরোয় বাংলার ‘কোটা’ কমে যেতে পারে। সূর্যকান্তের বদলে কাউকে না-ও নেওয়া হতে পারে।

সিপিএমের আর এক নেতা অবশ্য বলেছেন, রাজ্যের তরফেই পলিটব্যুরোর বিবৃতিতে বাংলা নিয়ে বিশেষ কিছু উল্লেখ করতে না-করা হয়েছিল। কেন? তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘সার্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলার ফলাফলকে দেখতে গেলে রাজ্যে তৃণমূলের বিপক্ষে বিজেপির শোচনীয় হারকে চিহ্নিত করতে হত। তাতে পরোক্ষে তৃণমূলকে তারিফ করা হয়ে যেত। সেটা রাজ্য পার্টির জন্য আরও বিড়ম্বনার হত।’’

সূত্রের খবর, সিপিএম পলিটব্যুরোর বৈঠকে মুর্শিদাবাদে মহম্মদ সেলিম এবং বহরমপুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর হার নিয়ে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আপাতত রাজ্য কমিটির উপরেই পর্যালোচনার ভার দিয়েছে পলিটব্যুরো। আগামী ১৯-২০ জুন সিপিএম রাজ্য কমিটির বৈঠক। তার পরে জুনের শেষে তিন দিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement