তৃণমূলের নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কোচবিহারে। —নিজস্ব চিত্র।
জেলার শীর্ষ নেতাদের ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট নন তিনি— কোচবিহারে এসে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এমনই জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দাবি দলীয় সূত্রের। মঙ্গলবার বেলা ১টা নাগাদ হেলিকপ্টারে কোচবিহার রাসমেলার মাঠে নামেন অভিষেক। সেখান থেকে মদনমোহন মন্দিরে গিয়ে পুজো দেন। এর পরেই নিউটাউনে দলের জেলা পার্টি অফিসে দীর্ঘ সময় বৈঠক করেন।
দলীয় সূত্রে খবর, সেই বৈঠকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ, দলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক, প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়, প্রাক্তন দুই মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং বিনয়কৃষ্ণ বর্মণকে কার্যত ‘সতর্ক’ করেন তিনি। সেই সময় উদয়নের সঙ্গে অভিষেকের ‘মতানৈক্য’ হয় বলে দাবি। যদিও অভিষেক সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি। উদয়ন বলেন, “মিটিংয়ে কী আলোচনা হয়েছে তা বাইরে বলা যাবে না। এটুকু বলতে পারি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তায় জয়ের পথ আরও প্রশস্ত হল।”
২০১৯ সালের কোচবিহার লোকসভা আসনে বিজেপির কাছে পরাজয়ের কারণ ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ বলে মনে করেন তৃণমূলের অনেকে । সে জন্য এ বারে শুরু থেকেই সে ‘বিরোধ’ কমাতে সচেষ্ট হয়ে ওঠে তৃণমূল। বিশেষ করে, কোচবিহারে বিজেপির প্রার্থী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক হওয়ায় সে ব্যাপারে গুরুত্ব আরও বেশি করে দেওয়া হয়। দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, কোচবিহার নিয়ে অভিষেক এক দিকে দলীয় রিপোর্ট নিয়েছেন। অন্য দিকে, তৃণমূলের পরামর্শদাতা সংস্থার কাছেও রিপোর্ট চেয়েছেন।
দলের অন্দরের খবর, সে রিপোর্টে জানানো হয়েছে, দিনহাটায় মন্ত্রী উদয়ন গুহের সঙ্গে জেলা পরিষদ সদস্য মীর হুমায়ুন কবীরের ‘বিরোধ’ এখনও রয়েছে, যার প্রভাব ভোটবাক্সে পড়তে পারে। প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায় ও তাঁর অনুগামীরা দলের হয়ে ‘পুরোপুরি’ ময়দানে নামেননি। অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। মাথাভাঙার তিন নেতা প্রাক্তন মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ, দলের চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ এবং প্রাক্তন সভাধিপতি উমাকান্ত বর্মণ এক সঙ্গে কাজ করছেন না। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিতের সঙ্গে এক ব্লক সভাপতির সম্পর্ক ভাল নয়। দলের প্রাক্তন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথকে শহরের পরিবর্তে ‘নাটাবাড়ি’ বিধানসভা কেন্দ্রে আরও মনোনিবেশের পরামর্শও ওই রিপোর্টে দেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, অভিষেক উদয়নকে মীর হুমায়ুন কবীরকে নিয়ে এক সঙ্গে চলার নির্দেশ দেন। তাতেই পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানান উদয়ন। ওই নেতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খারাপ নয় বলেই দাবি করেন। হুমায়ুন অবশ্য বৈঠকে চুপ ছিলেন। পরে উদয়ন বলেন, “এমন কোনও বিষয় নেই। আগে বলা হত রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে উদয়নের সম্পর্ক খারাপ। এখন বলা হচ্ছে মীর হুমায়ুনের সঙ্গে বিরোধের কথা। কোনওটাই ঠিক নয়।”
অভিষেক দুই দফায় বৈঠক করেন। কিন্তু অভিযোগ, সেখানে ঢোকার সুযোগ পাননি অঞ্চল ও শাখা সংগঠনের নেতারা। তিন ঘন্টার বেশি সময় অস্থায়ী ভাবে তৈরি একটি ঘরে তাঁদের বসিয়ে রাখা হয়।