মুম্বইয়ে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উজ্জ্বল নিকম। রবিবার। ছবি: পিটিআই।
মুম্বইয়ের ২৬/১১-র সন্ত্রাসবাদী হামলার মামলা চলাকালীন সরকারি আইনজীবী উজ্জ্বল নিকম বলেছিলেন, পাকিস্তানি জঙ্গি আজমল কসাব জেলে বসে বিরিয়ানি খাচ্ছে। কসাবের ফাঁসি হয়ে যাওয়ার পরে সেই নিকমই মেনে নিয়েছিলেন, কসাব কখনও জেলে বিরিয়ানি খেতে চায়নি। তাকে জেলে বিরিয়ানি দেওয়াও হয়নি। কসাবের প্রতি সহানুভূতি তৈরি হচ্ছে দেখে তিনি তার ফাঁসির পক্ষে জোরদার মত তৈরি করতে বিরিয়ানির মনগড়া গল্প বানিয়েছিলেন।
সেই উজ্জ্বল নিকমকে বিজেপি এ বার উত্তর-মধ্য মুম্বই লোকসভা আসনে প্রার্থী করেছে। ওই আসনে গত দু’বারের সাংসদ ছিলেন প্রয়াত বিজেপি নেতা প্রমোদ মহাজনের মেয়ে পুনম। এ বার আর তাঁকে টিকিট দেয়নি বিজেপি। নিকমকে বিজেপি নির্বাচনী ময়দানে নামানোয় বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতৃত্ব মনে করছেন, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা এ বার উগ্রজাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের তাস খেলতে পারেন। ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গে নরম মনোভাব ও সন্ত্রাসবাদী হামলা রুখতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলতে পারেন। ইউপিএ সরকারের আমলে সন্ত্রাসবাদী হামলার ইতিহাস ও মোদী সরকারের আমলে সন্ত্রাসবাদ রোখার ক্ষেত্রে সাফল্যের তুলনা টেনে ভোট কুড়োনোর চেষ্টা করতে পারেন মোদী-শাহেরা।
উত্তর-মধ্য মুম্বই থেকে প্রমোদ কন্যাকে সরিয়ে নিকমকে প্রার্থী করা হয়েছে। কারণ, সরকারি উকিল হিসেবে নিকম মুম্বই হামলায় ধৃত পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদী কসাবের ফাঁসি নিশ্চিত করেছিলেন। নিকমকে বিজেপি প্রার্থী ঘোষণার পরে আজ তাঁকে মুম্বইয়ের বিজেপি দফতরে স্বাগত জানানো হয়। নিকমের বক্তব্য, “আমার নতুন জীবন শুরু হচ্ছে। রাজনৈতিক জীবন। এত দিন আদালতে ন্যায়ের জন্য লড়তাম। এখন মনে হচ্ছে, মানুষকে সেবা করার জন্য সংসদই একমাত্র রাস্তা।’’
কর্নাটকের ভোটপ্রচারে আজ মোদী ইউপিএ জমানার সঙ্গে তাঁর আমলে দেশের সুরক্ষার তুলনা টেনেছেন। বলেছেন, এখন ‘মোদী ঘর মে ঘুস কর মারতা হ্যায়’-এর যুগ। পাকিস্তানের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘‘আগে যারা ভারতে সন্ত্রাসবাদ পাচার করত, এখন তারা গম আমদানি করতে হিমশিম খাচ্ছে। আগে দেশে নিরাপত্তাহীনতা ছিল। এখন সন্ত্রাসবাদীদের জন্য খারাপ সময়।’’ এর কৃতিত্ব মানুষের ভোটকেই দিয়েছেন মোদী।
কংগ্রেস, শিবসেনা (ইউবিটি), শরদ পাওয়ারের এনসিপি-র নেতাদের মতে, ঠিক একই সুরে নিকম ভোটের ময়দানে নামার পরেও সন্ত্রাসবাদ, দেশদ্রোহ, ন্যায়ের মতো শব্দ শোনা যাবে। ২০০৮-এর ২৬/১১-র হামলার মামলা ছাড়াও ১৯৯৩-এর মুম্বইয়ের ধারাবাহিক বিস্ফোরণ, গুলশন কুমার খুন, প্রমোদ মহাজন খুনের মামলায় যুক্ত ছিলেন উজ্জ্বল নিকম।
পুনমকে বাদ দেওয়া নিয়ে বিজেপি শিবিরের দাবি, মহারাষ্ট্রে দলের একাংশ পুনমের পক্ষে থাকলেও অন্য অংশ পুনমের বিরুদ্ধে ছিলেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অবশ্য বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিয়েছে। ‘ইন্ডিয়া’র তরফে উত্তর-মধ্য মুম্বই থেকে ধারাভির বিধায়ক তথা মুম্বই নগর কংগ্রেসের সভানেত্রী বর্ষা গায়কোয়াড়কে প্রার্থী করা হয়েছে। উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউতের দাবি, “নিকমকে প্রার্থী করা হলেও ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থীই ওই আসনে জিতবেন।” বিরোধীদের যুক্তি, ২০০৯ সালে বিজেপি আর এক আইনজীবী মহেশ জেঠমলানীকে মুম্বইয়ের ওই আসনে প্রার্থী করেছিল। কিন্তু তিনি কংগ্রেসের প্রিয়া দত্তের কাছে ১.৪৪ লক্ষ ভোটে হেরেছিলেন।