— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
জনসভার মাঠ ভরাতে বাস-মিনিবাসের মতো অপেক্ষাকৃত বড় গাড়ি ব্যবহার করা হলেও ভোটের বাজারে বড় দলের নজর অটো ও টোটোর মতো ছোট গাড়ির সংগঠনের দিকে। তবে সাংগঠনিক শক্তির বিচারে তুলনামূলক ভাবে খাটো, বিরোধীদের অবশ্য ভরসা বাস, মিনিবাস, ট্যাক্সি, বাইক-ট্যাক্সি, অ্যাপ-ক্যাব চালকদের উপরেই। অসংগঠিত সেই পরিবহণ শিল্পের কর্মী ও তাঁদের পরিবার মিলে সদস্য সংখ্যাও কম নয়।
পরিবহণ ক্ষেত্রের কর্মীরাও তাই নিজেদের ক্ষোভ উগরে দিতে ভোটের বাজারে মরিয়া লড়াই শুরু করেছেন। যেমন, ভোটের ময়দানে কেন্দ্রের একাধিক পরিবহণ আইনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে রাজ্যের ডান ও বাম পরিবহণ শ্রমিক সংগঠন। কেন্দ্রের ‘হিট অ্যান্ড রান’ সংক্রান্ত আইনের জেরে চালকদের সর্বনাশের বিষয়টিকে প্রচারে তুলে আনছে দু’টি বামপন্থী সংগঠন সিটু এবং এআইটিইউসি। ওই আইনে কোনও পথ দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে চালকের ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং সাত লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। দুই বাম সংগঠনের দাবি, দুর্ঘটনা একমাত্র চালকের দোষে ঘটে না। আরও নানা কারণ রয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, নতুন আইন কার্যকর হলে কেউ চালকের আসনে বসবেন না।
এই প্রসঙ্গে এআইটিইউসি-র পরিবহণ কর্মীদের জাতীয় স্তরের সংগঠনের সম্পাদক নওলকিশোর শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘নতুন আইন আপাতত স্থগিত রয়েছে। এনডিএ ক্ষমতায় এলে ওই আইন যে কার্যকর করবে না, এমন নিশ্চয়তা নেই। তাই নির্বাচনে আমরা সর্বশক্তি দিয়ে কেন্দ্রের বিরোধিতার কথা বলেছি শ্রমিকদের।’’ পাশাপাশি, ওই সংগঠনের প্রচারে গুরুত্ব পাচ্ছে ট্র্যাফিক আইনভঙ্গের জরিমানা অস্বাভাবিক বাড়ানোর বিষয়টিও। নতুন আইনে ইতিমধ্যে দূষণ সংক্রান্ত জরিমানা ১০ হাজার টাকা হয়েছে। সব ক্ষেত্রের পরিবহণ শ্রমিকদের নিয়ে বাম প্রার্থীদের সমর্থনে মিছিল বার করেছেন তাঁরা।
সিটুর ট্যাক্সি এবং অ্যাপ-ক্যাব চালক সংগঠনের নেতা ইন্দ্রজিৎ ঘোষের কথায়, ‘‘জ্বালানির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। টোল প্লাজ়াগুলিতে টোল আদায়ের অঙ্ক অনেকটাই বেড়েছে। যার ফলে পরিবহণ শিল্পে যুক্ত কর্মীদের আয় যথেষ্ট কমেছে। সেই সঙ্গে পথে বেরোনো গাড়িচালকদের একাংশের উপরে পুলিশি ‘নির্যাতনের’ বিরুদ্ধে জন্মানো ক্ষোভকেও কাজে লাগাতে মরিয়া বামেরা।
শাসকদলের ট্রেড ইউনিয়ন আইএনটিটিইউসি-র ঘনিষ্ঠ ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড’-এর সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিবহণ ক্ষেত্রের সমস্যা বুঝে রাজ্য সরকার একাধিক বার বিভিন্ন কর মেটানোয় ছাড় দিয়েছে। কেন্দ্রীয় আইনের আমরাও বিরোধী। রাজ্য সরকারের সেই সব ইতিবাচক পদক্ষেপ চালকেরা নিশ্চয়ই মনে রাখবেন।’’ যদিও ট্যাক্সি এবং অ্যাপ-ক্যাব শিল্পের সঙ্কটের জন্য রাজ্যকে বিঁধতে ছাড়ছে না বামেরা। বাস ও মিনিবাসের কর্মীদের মধ্যেও পুলিশি তৎপরতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। ক্ষোভের তালিকায় রয়েছে বাসের ভাড়া বৃদ্ধি না হওয়ার বিষয়টিও।
তবে লোকসভা নির্বাচনে শাসকদলের বড় ভরসা অটোচালকদের সংগঠন। অটোর ভাড়া সরকার নির্ধারণ করে না। ফলে চালকদের বড় অংশ শাসকদলের ইউনিয়নের উপরে আনুগত্য রাখে। গড়িয়াহাট এলাকায় শাসকদলের অটো ইউনিয়নের নেতা দেবরাজ ঘোষের মতে, ‘‘রাস্তায় নামা চালকদের সারা বছরই পুলিশের সঙ্গে কিছু না কিছু বিষয়ে সমস্যা হয়। আবার তা মিটেও যায়। চালকদের পরিবার রয়েছে। তাঁরা বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধাও পান। ভোট দেওয়ার সময়ে সে কথা তাঁরা ভুলে যাবেন না।’’
পরিবহণ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় শাসকদলের সংগঠনের অস্তিত্ব নেই। তবে বিজেপির সমর্থকদের আশা, ডিজিটাল ব্যবস্থা ও সড়ক যোগাযোগের উন্নতির কারণে চালকেরা তাঁদের প্রতি আস্থা রাখবেন।