—প্রতীকী চিত্র।
একই সঙ্গে ছিল দু’টি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। পাশাপাশি রাখা দু’টি ইভিএমের বোতাম টিপে ভোট দিতে হয়েছে লোকসভা ও বিধানসভা উপনির্বাচনের। এই ব্যবস্থায় দু’টি নির্বাচনেই প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা এক হওয়ার কথা। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, বরাহনগরে লোকসভার তুলনায় বিধানসভায় ০.০৫ শতাংশ ভোট কম পড়েছে!
এমন অদ্ভুত ঘটনা কী ভাবে ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ডান-বাম, সব পক্ষেরই। কেউ কেউ যুক্তি দিচ্ছেন, লোকসভার জন্য থাকা ইভিএমের বোতামে চাপ দিয়েই হয়তো অনেকে বেরিয়ে এসেছেন। তাতে বাদ পড়ে গিয়েছে বিধানসভার ভোট। অন্য অনেকের আবার যুক্তি, বিষয়টির মধ্যে কোনও গাণিতিক ভুল থাকলেও থাকতে পারে। যদিও প্রকৃত রহস্যটা কী, সেই প্রশ্ন নিয়েই আজ, মঙ্গলবার খোলা হবে ভোট বাক্স।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যাচ্ছে, বরাহনগর বিধানসভা কেন্দ্রে (দমদম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত) লোকসভার জন্য ভোট পড়েছে ৭৩.২৩ শতাংশ। আর, বিধানসভা উপনির্বাচনের জন্য ভোট পড়েছে ৭৩.১৮ শতাংশ। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, একই সঙ্গে যেখানে দু’টি ভোট দিতে হয়েছে, সেখানে এমন পার্থক্য হওয়ার কথা নয়। আর, লোকসভার ইভিএমে বোতাম টিপে ভোট দেওয়ার পরে পাশেই থাকা বিধানসভা উপনির্বাচনের ইভিএমের বোতাম না টিপে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা কম। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, অতীতেও দেখা গিয়েছে, হার-জিতের ক্ষেত্রে এই সামান্য শতাংশ ভোটও অনেক বড় ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে দিনহাটায় তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহকে মাত্র ৫৭ ভোটে হারিয়েছিলেন বিজেপির নিশীথ প্রামাণিক। ২০১৯-এর লোকসভায় আরামবাগ কেন্দ্রে বিজেপির তপন রায়ের থেকে মাত্র ০.০৭ শতাংশ বেশি ভোট পেয়ে জিতেছিলেন তৃণমূলের অপরূপা পোদ্দার। সেই সূত্র ধরেই বরাহনগরে লোকসভা এবং বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ০.০৫ শতাংশের পার্থক্য কোন দলের সুবিধা করে দেবে, তা ফলাফল বেরোনোর পরেই জানা যাবে বলে অভিমত রাজনৈতিক শিবিরের।
বরাহনগরে মোট ভোটারের ৫২ শতাংশ মহিলা। সেই কারণে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের ‘সুবিধা’ তাঁদের ঝুলিতে আসতে পারে বলে আশা করছেন তৃণমূল নেতারা। কিন্তু প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, বরাহনগরে পুরুষদের থেকে ২৯৮৬ জন মহিলা কম ভোট দিয়েছেন। যদিও এই সমস্ত পরিসংখ্যান নিয়ে ‘চিন্তা’ করতে নারাজ বিধানসভা উপনির্বাচনের তিন প্রার্থীই। বরং তিন জনই যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। যেমন, জোড়া ফুলের সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ভোট দেওয়াটা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। সেখানে কেউ লোকসভায় ভোট দিলেও বিধানসভায় কেন দিলেন না, তা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারি না। তবে, মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের সুফলের জোরেই আমি জিতব বলে আশা করছি।’’ দুই নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের ক্ষেত্রে শতাংশের পার্থক্য নিয়ে বিজেপির সজল ঘোষের দাবি, ‘‘ভোটের দিন সকালে শুনেছিলাম, বিধানসভার থেকে লোকসভায় প্রায় চার হাজার ভোট কম পড়েছে। নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি জানানোর পরে তারা তথ্য সংশোধন করে। তার পরে আবার দুই ভোটের যে পার্থক্য সামনে এসেছে, সেটা গাণিতিক ভুল বলেই মনে হচ্ছে।’’
সিপিএমের তন্ময় ভট্টাচার্যের দাবি, বরাহনগরের ৪০-৪৫টি বুথে লোকসভার ভোট পড়লেও বিধানসভার ভোট পড়েনি। তিনি বলেন, ‘‘ভিক্টোরিয়া স্কুলের একটি বুথে এমন সংখ্যা প্রায় ১৮। বাকিগুলিতে দু’-চারটি করে এমন হয়েছে।’’ পোস্টাল ব্যালটের ক্ষেত্রে বরাহনগরের অনেকে লোকসভার ব্যালট পেলেও বিধানসভার ব্যালট পাননি বলে অভিযোগ করেছেন তন্ময়। তিনি বলেন, ‘‘দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভোটের ডিউটিতে যাওয়া, বরাহনগরের নবীন দাশ রোডের বাসিন্দা বিপ্লব তিলক এবং বেলঘরিয়ার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তাপস প্রহরাজ বিধানসভার ব্যালট পাননি বলে আমি জানি। বিষয়টি নিয়ে বিপ্লব নির্বাচন কমিশনে অভিযোগও জানিয়েছেন। এটিও প্রদত্ত ভোটের ক্ষেত্রে শতাংশের পার্থক্যের একটি কারণ বলে মনে হয়।’’