Lok Sabha Election 2024 Result

জয়ের ব্যবধান বেড়েছে মেমারি শহরে, রয়েছে কাঁটাও

তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, গত লোকসভা নির্বাচনে মেমারি শহরে তৃণমূল ১০৫৮ ভোটে এগিয়েছিল বিজেপির থেকে। বিধানসভায় বিজেপির সঙ্গে ব্যবধান ছিল ৫২৩৪ ভোটের।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

মেমারি শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৪ ০৯:০৩
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

গত বারের থেকে ব্যবধান বাড়িয়ে এ বারও বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল প্রার্থী। ওই কেন্দ্রের আওতায় থাকা প্রতিটি বিধানসভা থেকেই জয় পেয়েছেন বিজয়ী প্রার্থী শর্মিলা সরকার। যদিও ফলাফলের তুল চেরা বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, ওই সব বিধানসভার অন্তর্গত ছোট শহরগুলিতে তৃণমূলের ফল ভাল হয়নি। বর্ধমান ও গুসকরা পুরসভাতেও হোঁচট খেয়েছে তৃণমূল। সেই নিরিখে ব্যতিক্রম শুধু মেমারি পুরসভা। তবে ‘কাঁটা’ কিন্তু রয়েই গিয়েছে। যেমন, পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ী নিজের ওয়ার্ডের দু’টি বুথে ও শহর সভাপতি স্বপন ঘোষালের বুথে প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির থেকে পিছিয়ে থেকে দৌড় শেষ করেছে তৃণমূল। তার পরেও কোন জাদুতে গত লোকসভা নির্বাচনের চেয়ে এ বার বেশি ভোটে এবং গত বিধানসভার মতোই শহরে তৃণমূলের এগিয়ে থাকার ব্যবধান প্রায় সমান থেকে গেল, তা চর্চার বিষয়।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, গত লোকসভা নির্বাচনে মেমারি শহরে তৃণমূল ১০৫৮ ভোটে এগিয়েছিল বিজেপির থেকে। বিধানসভায় বিজেপির সঙ্গে ব্যবধান ছিল ৫২৩৪ ভোটের। গত কয়েক বছরে মেমারি শহরে তৃণমূলের অন্দরে নানা কাণ্ড ঘটেছে। দুই স্বপনের অনুগামীদের ‘লড়াই’ দেখেছে শহর। মেমারি বাসস্ট্যান্ডের দখল নিয়েও প্রকাশ্যে এসেছে ‘দ্বন্দ্ব’। পুর-পরিষেবা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে ‘কোন্দল’ দেখা গিয়েছে। শহর সভাপতি প্রত্যেকটি বুথে সংগঠন তৈরি করতে পারেননি বলে দলের কাছে রিপোর্ট গিয়েছিল। এমনকি, পুর-প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তাঁর ‘সদ্ভাব’ ছিল না বলেও কানাঘুষো শোনা যায়। তৃণমূলের পরামর্শদাতা সংস্থা দলের কাছে রিপোর্ট দিয়েছিল, শহর সভাপতিকে সামনে রেখে লোকসভা নির্বাচন লড়লে দলের অধিকাংশ পুর-প্রতিনিধি ‘মন দিয়ে’ ভোটের কাজে নামবেন না। তাতে দলের ফল ভাল হবে না।

প্রসঙ্গত, গত বিধানসভা ভোটের পরে নিয়োগ করা হয়েছিল মেমারি শহর সভাপতিকে। পরামর্শদাতা সংস্থার রিপোর্ট পাওয়ার পরে, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালনায় দলীয় বৈঠক করেন। তার পরেই শহর সভাপতিকে ভোটের কাজ থেকে সরিয়ে দেয় তৃণমূল। তাঁর জায়গায় ভোট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া প্রাক্তন শহর সভাপতি তথা বাম আমল থেকে টানা ১৪ বছর মেমারির পুরপ্রধান থাকা স্বপন বিষয়ীকে।

Advertisement

ভোটের ফল বলছে, মেমারি শহরে তৃণমূল ৫১৩২ ভোটে এগিয়ে রয়েছে বিজেপির থেকে। শহরের ১৬টির মধ্যে ৪, ১২ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল হেরেছে। ৪৩টি বুথের মধ্যে ১৪টিতে পিছিয়ে রয়েছে তারা। ১২ নম্বর ওয়ার্ড পুরপ্রধানের। সেখানে তৃণমূল দু’টি বুথেই পিছিয়ে। সামগ্রিক ভাবে ওই ওয়ার্ডে তৃণমূল পিছিয়ে ২১ ভোটে। পুরপ্রধানের দাবি, “গত লোকসভা নির্বাচনের চেয়ে দল অনেক বেশি ভোটে জিতেছে। গতবার পাঁচটি ওয়ার্ডে হার ছিল। এ বার তিনটিতে হেরেছি। আমার ওয়ার্ডে গত বছর ১০৫ ভোটে হেরেছিলাম। এ বার ব্যবধান অনেকটাই কমেছে।’’

জেলায় ছ’টি পুরসভার মধ্যে তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে একমাত্র মেমারি পুরসভায়। কেমন করে তা সম্ভব হল?

তৃণমূলের নেতাদের মতে, মেমারিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চিন্তার বিষয় ছিল। কালনার বৈঠকেও তা টের পেয়েছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এমনকি ‘চোরাস্রোত’ বইতে পারে, সে রিপোর্ট-ও ছিল। সে কারণে ভোটের কাজ থেকে এক স্বপনকে সরিয়ে তা দেওয়া হয় আর এক স্বপনকে। এক সিদ্ধান্তেই পরিস্থিতি বদলে যায়। কাউন্সিলররা একজোট হয়ে ভোটের ময়দানে নেমে পড়েন। এ ছাড়া, পুর-পরিষেবাও জয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

মেমারির উপ-পুরপ্রধান সুপ্রিয় সামন্তের দাবি, “শহরের সার্বিক উন্নয়ন ও মানুষের পাশে থাকার ফল মিলেছে।” পুরপ্রধানের দাবি, “আমরা শহরবাসীকে যে পরিষেবা দিয়েছি, তাতে অন্তত ৬৫০০ ভোটে জেতা উচিত ছিল। কেন হল না, তা দেখতে হবে।” শহর সভাপতির দাবি, “কারও ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় নয়, লক্ষ্মীর ভান্ডার আর শহরের মানুষ তৃণমূলের পক্ষে থাকায় জয় এসেছে। তবে আশানুরূপ ফল হল না কেন, তা দেখতে হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement