—প্রতীকী চিত্র।
ভোটের আকাশ কখনও মেঘলা, কখনও ঝকঝকে! ক্ষণে ক্ষণে পরিস্থিতি পাল্টায়। তাই জঙ্গলহলে জনজাতি ও কুড়মি ভোটের সমীকরণে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে তৃণমূল। ঝাড়গ্রাম জেলার কুড়মি ও জনজাতি এলাকায় প্রচারের ভিন্ন রণকৌশলও স্থির করে দিয়েছে তৃণমূলের পরামর্শদাতা কমিটি।
প্রচারে বিজেপির ‘সাংস্কৃতিক আগ্রাসন’কে হাতিয়ার করছে তৃণমূল। সূত্রের খবর, জনজাতি ও কুড়মিদের দাবিগুলির ক্ষেত্রে কেন্দ্রের উদাসীনতাও সামনে আনা হবে। জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মুর কথায়, ‘‘বিজেপি উগ্র হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। বিজেপিকে ক্ষমতায় আনলে জঙ্গলমহলের জনজাতি-মূলবাসীদের সংস্কৃতিই সঙ্কটে পড়বে। ‘সবার জন্য উন্নয়ন’ স্লোগানকে সামনে রেখে প্রচার হবে। কুড়মি ও জনজাতি এলাকায় রাজ্য সরকারের উন্নয়ন ও পদক্ষেপগুলি সম্পর্কে ভোটারদের সচেতনওকরা হবে।’’
আজ, শনিবার লোকসভা ভোটের নির্ঘন্ট প্রকাশ হবে। আর আজ থেকেই কুড়মি ও জনজাতি এলাকায় শুরু হচ্ছে তৃণমূলের প্রচার। ঝাড়গ্রাম লোকসভায় ইতিমধ্যে দু’টি কুড়মি সংগঠন যৌথভাবে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এতে তৃণমূলেরই সুবিধা হবে, পর্যবেক্ষণ রাজনৈতিক মহলের। তবে শেষ পর্যন্ত নির্দল কুড়মি প্রার্থী ভোটের ময়দানে না থাকলে তখন জোড়াফুল আর পদ্মফুলে জব্বর লড়াইয়ের সম্ভাবনা থাকছে। ফলে, কুড়মি ও জনজাতি এলাকায় প্রচারে আগে ভাগেই তৃণমূলের রণকৌশল স্থির করা হয়েছে। সূত্রের খবর, এই এলাকায় প্রচারের মুখ্য দায়িত্বে থাকবেন দল ও দলের শাখা সংগঠনের কুড়মি ও জনজাতি নেতা-কর্মীরা। প্রচারে জনজাতি-কুড়মি উন্নয়নে ভারসাম্যের বার্তাও দেওয়া হবে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী ঝাড়গ্রাম জেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৯.৩৭ শতাংশ জনজাতি। জনজাতিদের মধ্যে সাঁওতালরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এছাড়া মোট জনসংখ্যার ২০.১১ শতাংশ তফসিলি জাতির এবং ২৩.২৭ শতাংশ কুড়মি সম্প্রদায়ের। ঝাড়গ্রাম সংসদীয় এলাকায় জনজাতি ও কুড়মিদের সংখ্যাটা প্রায় সমান-সমান।
জাতিসত্তার দাবিতেই কুড়মি সামাজিক সংগঠনগুলির আন্দোলন। তা নিয়ে রাজ্য সরকারের সদর্থক ভূমিকা প্রচারে তুলে ধরতে উদ্যোগী হচ্ছে তৃণমূল। ২০১৭ সালে কুড়মিদের বিষয়ে রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের অধীন ‘কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর রিপোর্ট কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। তৃণমূল শিবিরের ব্যাখ্যা, সেই রিপোর্ট বিবেচনা না করেই স্রেফ রাজনৈতিক কারণে সমস্যা জিইয়ে রাখছে কেন্দ্র। কুড়মি ও জনজাতিদের সারনা ও সারি ধর্মের কোড চালুর জন্য গত বছর বিধানসভায় প্রস্তাব পাস করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সে বিষয়ে কেন্দ্র কোনও পদক্ষেপ না করার বিষয়টিকেও প্রচারে আনা হচ্ছে।
বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে জঙ্গলমহলের বহু মানুষ উপকৃত হওয়ার তথ্যের পাশাপাশি করম পরবে এবং বিরসা মুন্ডার জন্মদিনে পূর্ণদিবস ছুটি , লালগড় সেতু চুয়াড় বিদ্রোহের শহিদ রঘুনাথ মাহাতোর নামাঙ্কিত করার মতো বিষয়গুলিও প্রচারে থাকছে।
সেই সঙ্গে সাঁওতালি শিক্ষক নিয়োগ, সাঁওতালি শিক্ষা পরিকাঠামোর উন্নতি, জাহের থানের সংস্কার, মুন্ডাদের অ্যাকাডেমি, ভূমিজদের উন্নয়ন পর্ষদ, লোধা-শবর সেল গঠনের মাধ্যমে জনজাতিদের জন্য রাজ্যের পদক্ষেপগুলিও প্রচারে তুলে ধরা হবে।
জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অজিত মাহাতো ছড়া কেটে বলছেন, ‘‘২০১৯-এর আর নয় ভুল/ উন্নয়নের ভরসা কেবল জোড়াফুল।’’ বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুর পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘ভোট এলে তৃণমূলের মিথ্যা প্রচার শুরু হয়। লোকসভা ভোটে জনজাতি ও কুড়মি সহ ভোটাররা ভোটযন্ত্রের সঠিক বোতামে চাপ দিয়ে জবাব দেবেন।’’