প্রতীকী চিত্র।
এলাকা সংঘর্ষপ্রবণ। নির্বাচন কমিশনের নজরে স্পর্শকাতর। ভোটের আগে সেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও চলছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল। পূর্ব মেদিনীপুরের এমন এলাকা ময়নার বাকচায় ভোটের আগে সংঘর্ষ এড়াতে সতর্ক শাসকদল তৃণমূল। দলীয় কর্মী-সমর্থকরা যাতে বিরোধী দলের হাতে হামলার শিকার না হন, সে জন্য মিছিল-সভার মতো প্রকাশ্য প্রচার কর্মসূচি না করার কৌশল নেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে দলীয় কর্মীদের নিয়ে ছোট ছোট বৈঠক এবং সমাজ মাধ্যমে প্রচার চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব।
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে বাকচা পঞ্চায়েত এলাকা অশান্ত। তৃণমূল এবং বিজেপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, বোমাবাজি, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটতেই থাকে। ২০১৯ সালের অক্টোবর বাকচা এলাকার তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন পঞ্চায়েতের সদস্য বসুদেব মণ্ডলকে প্রকাশ্যে খুনের অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ময়নায় বিজেপি প্রার্থী অশোক ডিন্ডা জয়ী হন। এরপর বাকচায় কোণঠাসা হয়ে পড়ে তৃণমূল। একাংশ তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ঘড়ছাড়া হন। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূল ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। ২০২৩ সালের মে মাসে গোড়ামহলের বিজেপির বুথ সভাপতি বিজয় ভুঁইয়াকে অপহরণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তবে পঞ্চায়েতে বাকচা এলাকায় ২৮টি আসনের মধ্যে ২৪টিতেই বিজেপি জেতে। একটি জেলা পরিষদ আসনও পায়।
এবারের লোকসভার নির্বাচনের আবহে বাকচা এলাকার আড়ংকিয়ারানা গ্রামে তৃণমূলের বুথ অফিসে ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। তমলুকে তৃণমূলের প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যর সমর্থনে দেওয়া প্রচারমূলক ব্যানার ছেঁড়া হয়। পরে বাকচার ঘরছাড়া তৃণমূল কর্মীরা দেবাংশুর গাড়ি আটকে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও জানিয়েছিলেন। এমন অবস্থায় এলাকার গুরুত্ব বুঝে বাকচায় দেবাংশুর সমর্থনে প্রকাশ্যে প্রচার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলীয় নেতৃত্ব চান না, এই ধরনের প্রচার ঘিরে ফের এলাকায় উত্তেজনা ছড়াক বা কর্মীরা আক্রান্ত হোক।
ময়না ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সন্দীপব্রত দাস বলেন, ‘‘বাকচায় আমাদের দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সমর্থকেরা হামলার আশঙ্কায় রয়েছেন। ওখানে প্রকাশ্যে মিছিল-সভা হলে সেই সভায় যাওয়া দলের কর্মী-সমর্থকদের চিহ্নিত করে মারধর করার সম্ভবনা রয়েছে। তাই বাকচায় প্রকাশ্য প্রচার কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছেনা।’’ আপাতত কিছু জায়গায় ছোট ছোট কর্মী বৈঠক ও সমাজ মাধ্যমেই দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তৃণমূলের তরফে।
তৃণমূলের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে বাকচার বিজেপি নেতা তথা দলে তমলুক সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক চন্দন মণ্ডল বলেন, ‘‘বাকচা এলাকায় তৃণমূলের কোনও নেতা-কর্মীরা ঘরছাড়া নেই। আসলে বাকচায় তৃণমূল সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। জনসমর্থন নেই। তাই হয়তো এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বাকচায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে। যে কোনও দলের প্রার্থী প্রচার করতে পারেন।’’