—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
গত বছর ১ মে ময়নার বাকচার গোড়ামহল গ্রামে বিজেপি নেতা বিজয় ভুঁইয়াকে অপহরণ করে খুনের মামলার তদন্ত করতে গত শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-কে। হাইকোর্টের ওই নির্দেশের পরেই বাকচা-র ওই খুনের মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের পাশাপাশি দলের ময়না ব্লক নেতৃত্বর উদ্বেগ বেড়েছে।
লোকসভা ভোটের মুখে এনআইএ তদন্তে নামলে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের যে কোনও সময় নোটিস দিয়ে ডাকা হতে পারে। এমনকি গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। আতঙ্কের জেরে বাকচা এলাকায় আপাতত লোকসভা ভোটের প্রচারের কর্মসূচি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ময়নার ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব।
বাকচার খুনের ঘটনায় তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি মনোরঞ্জন হাজরা, প্রাক্তন গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান সুখলাল মণ্ডল সহ মোট ৩৪ জন তৃণমূল নেতা-কর্মী অভিযুক্ত। এঁদের বেশির ভাগ বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। অভিযুক্তদের মধ্যে ৯ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। ময়না থানার পুলিশ মামলার তদন্ত করলেও অভিযুক্তদের অধিকাংশ জামিন পেয়েই এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ বিজয়ের পরিবারের। তাঁদের তরফে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের আবেদন জানানো হয়েছিল হাইকোর্টে। সেই আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত গত শুক্রবার মামলার তদন্তভার ১৫ দিনের মধ্যে এনআইএ-কে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক সংঘর্ষের জেরে উত্তপ্ত বাকচায় গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রামপঞ্চায়েতে বিজেপি দখল করেছে। ফলে বাকচায় সাংগঠনিকভাবে কোণঠাসা অবস্থা তৃণমূলের। বাকচার অধিকাংশ এলাকায় লোকসভার ভোটে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে শাসক দল এখনও প্রচার শুরু করতে পারেনি। সম্প্রতি স্থানীয় নেতৃত্ব তমলুক লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যের সমর্থনে এলাকায় ছোট-ছোট বৈঠক করে প্রচারের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। কিন্তু বিজয় ভূঁইয়া খুনের মামলায় এনআইএকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পর মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মনোরঞ্জন হাজরা-সহ প্রথম সারির নেতারা গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কায় সিঁটিয়ে রয়েছেন। উদ্বেগ বেড়েছে তৃণমূল ব্লক নেতৃত্বের।
২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে শুধুমাত্র বাকচা গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপির প্রার্থী অশোক দিন্ডা প্রায় ১২ হাজার ভোট ‘লিড’ পেয়েছিলেন। ময়নার অন্য অঞ্চলে তৃণমূল এগিয়ে থাকা সত্বেও তৃণমূল প্রার্থী সংগ্রাম দোলুই হেরে যান। গতবছর পঞ্চায়েত ভোটে বাকচা গ্রামপঞ্চায়েতের ২৮ টি আসনের মধ্যে ২৪টিতে জেতে বিজেপি। তৃণমূল জেতে মাত্র চারটি আসনে। এই অবস্থায় লোকসভা ভোটের আগে এখানে প্রচারে জোর দেওয়ার কথা তৃণমূলের। কিন্তু তার বদলে এখন এনআইএ-র তদন্তের চাপে বাকচা এলাকায় আপাতত লোকসভা ভোটের প্রচারের কর্মসূচি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব।
ময়না ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সন্দীপব্রত দাস বলেন, ’’বাকচার ঘটনা নিয়ে হাইকোর্ট এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় আমাদের স্থানীয় নেতৃত্বরা উদ্বিগ্ন। এনআইএ-র তরফে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের যে কোনও সময় ডাকা হতেও পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাকচায় লোকসভা ভোটের প্রচারের পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। এনআইএ-র তদন্তের নির্দেশ স্থগিত করার জন্য হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করা হবে।’’
আর বিজেপি’র তমলুক সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি আশিস মণ্ডলের কথায়,’’বিজয় ভূঁইয়াকে অপহরণ করে গুলি করে ও বোমা মেরে নৃশংস ভাবে খুন করেছিল তৃণমূলের লোকজন। ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছিল পুলিশ। কিন্তু অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশ উপযুক্ত পদক্ষেপ না করায় অনেকেই জামিন পেয়ে যান। এরপর তাঁরা বিজয় ভূঁইয়ার পরিবারের লোকদের হুমকি দিচ্ছিলেন। হাইকোর্ট এ বার এনআইএ-কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এ বার যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে ধরে নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব আতঙ্কিত। তাই তাঁরা এমন আশঙ্কা করছেন।’’