Lok Sabha Election 2024

দুর্বলতাকে শক্তি বানাতে চায় ঘাসফুল, কলকাতা উত্তরে সুদীপকে জেতাতে তাপসের ‘ভরকেন্দ্র’ চিহ্নিত তৃণমূলের

২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহ উত্তর কলকাতার ২০টি ওয়ার্ড থেকে বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েই নিজের ভোটব্যাঙ্কে শান দিতে শুরু করেছেন তাপস।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৪ ১২:৩৫
Share:

(বাঁ দিকে) তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপি প্রার্থী তাপস রায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আগামী পয়লা জুন উত্তর কলকাতায় ভোট। তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের ভোটযুদ্ধকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে তৃণমূল বিজেপি দুই শিবিরে। সেই যুদ্ধে যাতে বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়কে এক ইঞ্চিও জমি না ছাড়া হয়, সেই বিষয়ে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহ উত্তর কলকাতার ২০টি ওয়ার্ড থেকে বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের পরেই নিজের সেই ভোটব্যাঙ্কে শান দিতে শুরু করেছেন অভিজ্ঞ রাজনীতিক তাপস। বিজেপির এই কৌশল আঁচ করে পাল্টা রণনীতি তৈরি করছে শাসক তৃণমূল। যে ২০টি ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়েছিল, সেগুলি থেকে এ বারও ভাল ব্যবধান পাওয়ার আশা করছে তারা।

Advertisement

বস্তুত, এই ২০টি ওয়ার্ডই পদ্মের ‘ভরকেন্দ্র’। গত লোকসভা নির্বাচনে এই ২০টি ওয়ার্ডে এগিয়ে যাওয়ার ভিত্তিতে শ্যামপুকুর এবং জোড়াসাঁকো বিধানসভায় এগিয়ে গিয়েছিল পদ্মশিবির। তাই সেই দুর্বল ওয়ার্ডগুলিতেই বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে শাসকদল। উত্তর কলকাতার মতো ‘সহজ’ আসন জিততে যাতে কোনও রকমের বেগ না পেতে হয়, আপাতত সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে চান তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই তাপসের ‘ভরকেন্দ্র’ চিহ্নিত করেছে তাঁর পুরনো দল।

শ্যামপুকুর বিধানসভার যে পাঁচটি ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে গিয়েছিল সেগুলি হল ১৮, ২০, ২১, ২৪ এবং ২৬ নম্বর ওয়ার্ড। জোড়াসাঁকো বিধানসভার ২২, ২৩, ২৫, ২৭, ৩৮, ৪১ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের ফলাফল গিয়েছিল বিজেপির পক্ষে। চৌরঙ্গি বিধানসভার ৪৫, ৪৭, ৫০ এবং ৫১ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়েছিল বিজেপি প্রার্থী। মানিকতলা বিধানসভার ১৩ এবং ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ফলাফল ছিল বিজেপির পক্ষে। এ ছাড়াও এন্টালির ৫৮ নম্বর ওয়ার্ড এবং কাশীপুর বেলগাছিয়ার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে গিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী রাহুল। যে হেতু এ বারে বিজেপি প্রার্থী সদ্য তৃণমূল ছেড়ে যাওয়া তাপস, তাই একটু সাবধানেই পা ফেলতে চায় তৃণমূলের উত্তর কলকাতা জেলা নেতৃত্ব। কারণ, তাপসের কাছে উত্তর কলকাতা হাতের তালুর মতো চেনা। এই লোকসভা এলাকার মানুষের সঙ্গে তাপসের যোগাযোগ দীর্ঘ ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে। সেই যোগাযোগের প্রভাব খাটিয়ে এই ২০টি ওয়ার্ড তো বটেই, আরও বেশি সংখ্যক ওয়ার্ড থেকে ব্যবধান পেয়ে জিততে চাইবেন তিনি। তাই মে মাসের প্রথম দিকে কলকাতার এক হোটেলে কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

Advertisement

যদিও উত্তর কলকাতার এক কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘গত লোকসভা নির্বাচনের পর অনেক ঘটনা ঘটেছে। কলকাতা পুরসভায় আগে যেখানে বিজেপির সাত জন কাউন্সিলর ছিল, এখন সেই সংখ্যা নেমে তিনে এসে ঠেকেছে। কিন্তু যে হেতু লোকসভা নির্বাচন, তাই আমরা সব ওয়ার্ডের জন্যই পৃথক ভাবে রণনীতি সাজাচ্ছি। বিশেষ করে যে তিনটি ওয়ার্ডে বিজেপি কাউন্সিলর রয়েছেন, সেগুলিতে পৃথক ভাবে নজর দিচ্ছেন জেলার নেতারা।’’ কলকাতা পুরসভার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ। যিনি বরাহনগর বিধানসভার উপনির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে লড়াই করতে গিয়েছেন। তাই এই নির্বাচনে ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের ভোট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্য তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সৌম্য বক্সীকে। এ ছাড়াও ২২ এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিজেপির। সেই ওয়ার্ডে সরাসরি নজরদারি করছেন জোড়াসাঁকোর বিধায়ক বিবেক গুপ্ত। এ ছাড়াও উত্তর কলকাতা জেলা নেতৃত্ব সরাসরি ওই ২০টি ওয়ার্ডের প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সঙ্গে মতামত বিনিময় করছেন। যে হেতু প্রার্থী সুদীপ স্বয়ং উত্তর কলকাতা জেলা তৃণমূলের সভাপতি, তাই এ ক্ষেত্রে তাঁর সরাসরি নজর রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রাক্তন সতীর্থ তাপস যাতে কোনও ভাবেই তৃণমূলের ভোটের সিঁধ না কাটতে পারেন, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করেই পদক্ষেপ করতে চাইছেন উত্তর কলকাতা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement