সৌমেন মহাপাত্র। —ফাইল চিত্র।
তিনি দলের পোড় খাওয়া অভিজ্ঞ নেতা। দলের অন্দরে ক্ষমতার লড়াইয়ে কোণঠাসা হয়ে তাঁর গলায় ক্রমশ তীব্র হচ্ছিল ক্ষোভ আর অভিমানের সুর। লোকসভা ভোটে এতে দলের ক্ষতি হতে পারে আঁচ করছিলেন দলীয় নেতৃত্ব। ফলে ফের সৌমেন মহাপাত্রের কিছুটা ক্ষমতায়ণ করে ভোটের মুখে তাঁর ক্ষোভে প্রলেপ দিয়ে আপাতত বিদ্রোহ আটকানোর চেষ্টা করলেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
সোমবার তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের নির্বাচনী কোর কমিটির ‘অবজার্ভার’ হিসেবে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও চেয়ারপার্সন পদে সৌমেন মহাপাত্রের নাম ঘোষণা করা হয়। তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়কে কোর কমিটির সভাপতি ও দলের জেলা চেয়ারপার্সন চিত্তরঞ্জন মাইতিকে সহ-আহ্বায়ক করা হয়েছে। এ ভাবে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে দলীয় কোন্দল ও ক্ষমতার লড়াই সামলানোর চেষ্টা করেছেন দলীয় নেতৃত্ব।
প্রথমে রাজ্যের মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া, তার পর গত বছর নভেম্বরের মাঝামাঝি তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পদ থেকে অপসারণ। প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক ক্ষমতা হ্রাসের জেরে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন তমলুকের বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। এমন অবস্থায় ‘অভিমানী’ সৌমেন তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যর উপস্থিতিতে জেলা নেতৃত্বকে বৈঠকে জানিয়েছিলেন, নিজের বিধানসভা এলাকার মধ্যেই তিনি প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে সীমাবদ্ধ থাকবেন। নন্দীগ্রামে গত ১৪ মার্চ জমিরক্ষা আন্দোলনের শহিদ স্মরণ সভায় সৌমেন যাননি। ওই দিনই তমলুকে তিনি নিজের বিধানসভা এলাকার নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা করেন। ভোটের মুখে দলের অন্দরে সৌমেনের ক্ষোভ নিয়ে চর্চা শুরু হয়। এর পর আর ঝুঁকি নেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। কিছুটা দায়িত্ব সৌমেনকে দিয়ে দলের পুরনো সৈনিককে তাঁরা নিজেদের পক্ষে টেনে রাখতে চেয়েছেন।
দলীয় সূত্রের খবর, দলের অভিজ্ঞ নেতা সৌমেন মহাপাত্র। ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রেও তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। সব দিক বিবেচনা করে বিশেষ গুরুত্ব দিতেই ওই পদে আনা হয়েছে। এতে কি তাঁর ক্ষোভ প্রশমন হল? ক্ষোভের কথা অস্বীকার করে সৌমেন বলেন, ‘‘দল যখন যা দায়িত্ব দিয়েছে আমি তা পালন করেছি। আমার কোনও ক্ষোভ ছিল না। আমি আমার এক্তিয়ারের বাইরে যাই না। এখন দল আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তা যথাযথ ভাবে পালন করব। আমাদের এখন লক্ষ্য, দলীয় প্রার্থীকে জেতানো।’’সৌমেনেরপদপ্রাপ্তি নিয়ে তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা চেয়ারপার্সন চিত্তরঞ্জন মাইতি বলেন,’’কাউকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার বিষয় এটা নয়। আমাদের সকলেরই দায়িত্ব, দলের প্রার্থীকে জেতানো।’’