অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
অভিষেক বলেন, ‘‘তিন লক্ষ ভোটে আমাদের জেতান। ৪ তারিখ ফল ঘোষণা। জুন মাসে এখানে আসব। আপনাদের সঙ্গে উদ্যাপন করব। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিজয় মিছিল করব। কথা দিলাম। সকলকে বলে গেলাম। কিন্তু সবাই ঠিক করে নিন, গরম বেশি পড়লেও ভোট দিন।’’ শেষে হিন্দিতে স্বরচিত কবিতাও বলেন অভিষেক।
অভিষেক বলেন, ‘‘আমাদের কম ভয় দেখায়নি। ইডি, সিবিআই। ঘর, পরিবার, মা-বাবা, বাচ্চা কাউকে ছাড়েনি। তবু মাথা উঁচু করে লড়ছি। দিল্লির কুকুর হয়ে থাকার থেকে বাংলার রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার হয়ে বাঁচব। ২৬ তারিখ মাথা উঁচু করে ভোট দিন। আমাদের প্রার্থী জেতার পর আপনাদের সেবা করবেন। কথা দিলাম। ’’
অভিষেক বলেন, ‘‘২০২১ সালের বিধানসভা দেখুন। রায়গঞ্জের ৯টি আসনের মধ্যে সাতটিতে জিতেছে তৃণমূল। পরে কৃষ্ণ কল্যাণীও সঙ্গে যোগ দেন। এখন আট। এ সব আসনে বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম জিতলে কার লাভ হত? কংগ্রেস গত পাঁচ বছরে কী করেছে? যেখানে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের লড়াই, তারা কি জবাব দিতে পারছে? গত পাঁচ বছরে এক জন বিজেপি কর্মীও কি দল ছেড়ে সিপিএম, কংগ্রেসে গিয়েছেন? ’’
অভিষেক বলেন, ‘‘এনআরসি নিয়ে বিজেপি যখন ধমকাচ্ছিল, তখন এক মাত্র দিদি এসে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কোনও কংগ্রেস নেতা আসেননি। আপনারা ধমকানো বন্ধ করুন। বাংলাকে উত্তরপ্রদেশ ভাববেন না। গুজরাত ভাববেন না। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ভাববেন না। ২০২১ সালেও একই ভুল করেছিলেন। আপনাদের একটা ভোটই কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে ফেলে নতুন সরকার বসাতে পারে। আপনার একটা ভোটের অনেক দাম।’’
অভিষেক মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি জানান, ১০ বছর আগে খাদ্য, জরুরি পণ্যের কী দাম ছিল, আর এখন কী হয়েছে। ১১০ টাকার চা পাতা এখন ২৮০ টাকা। এই হল ‘অচ্ছে দিন’।
অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপি বলেছে, এখানে জিতলে লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করে দেবে। আপনারা কি তা-ই চান? বিজেপির কোচবিহারের এক নেত্রী তাই বলেছেন। আপনাদের কী মত? তাঁদের জবাব দেওয়া উচিত নয় কি?’’
অভিষেক বলেন, ‘‘আবাসের জন্য তিন বছর ধরে আবেদন করেছেন আপনারা। শিলিগুড়িতে মোদী বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন আবাসের জন্য। হাতজোড় করে বলছি, পরের বার এলে কাগজ নিয়ে আসবেন যে, গত তিন বছরে কত টাকা দিয়েছেন। ৩৬ দিন হয়ে গেছে, বিজেপির কোনও নেতা ১০ পয়সার হিসাব দিতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী কি কাগজ দেখাতে পেরেছেন, যে আপনাদের থেকে কাগজ চাইছেন? নিজে পারেননি। পারলে দেখান। তিনি শুধুই সাধারণ মানুষকে ভুল পথে চালনা করছেন।’’
অভিষেকের কথায়, ‘‘পাঁচ বছরের গদ্দারির জবাব দিন। জনজোয়ার যাত্রার সময়ও উত্তর দিনাজপুরে তিন দিন ছিলাম। আপনারা যাঁদের বলেছিলেন, তাঁদের পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড় করিয়েছিলাম। তাঁরা জিতেছেন। এ বার তিন লক্ষ ভোটে কৃষ্ণ কল্যাণীকে জেতাতে হবে।’’
শুক্রবার হয়েছে প্রথম দফার লোকসভা ভোট। তাতে তৃণমূল প্রার্থীরাই জিতছেন, দাবি অভিষেকের।
অভিষেক বলেন, ‘‘আমরা থাকতে এনআরসি হবে না। আমরা ভাড়াটে। জনতাই মালিক। তেমন গোটা দেশেই মালিক জনতা।’’ এর পর হিন্দিতে কবিতাও বলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘কিরায়েদার হ্যায়, যাতি মকান থোড়ি হ্যায়, হিন্দুস্তান সভি কা, কিসি কে বাপ কা থোড়ি হ্যায়।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপি ছেড়ে কৃষ্ণ তৃণমূলে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বাড়িতে আয়কর দফতর পৌঁছে গেল। যাঁদের ক্যামেরায় টাকা নিতে দেখা গেছে, তাঁরা ঘরে বসে রয়েছেন। ২৬ তারিখ এঁদের জবাব দিন। বিজেপিকে শিক্ষা দিন।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘ওঁরা (বিজেপি) যে ভাষা বোঝে, সেটাই বলুন। আপনারা দল ভাঙার রাজনীতি জানলে, তৃণমূলও জানে। কৃষ্ণ কল্যাণী বিজেপি ছেড়ে আসার পরেই ওঁর বাড়িতে আয়কর দফতরের হানা। দু’দিন ধরে চলেছিল। তাও তিনি নত হননি। লড়াই করেছেন। যে নিজের ভালবাসা নিয়ে এঁদের সঙ্গে লড়াই করে, তার জনতার প্রতিনিধি হওয়া উচিত কি না, আপনারাই বলুন?’’
অভিষেক বলেন, ‘‘অন্য যে সব রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির লড়াই, সেখানে কংগ্রেসের লোক বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। এখানে উল্টো গঙ্গা। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন বিধায়কেরা।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘তৃণমূল শুধু ঈশ্বর, আল্লার সামনে নত হয়। দিল্লির সামনে নয়।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান করেন। গত পাঁচ বছরে বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের কেউ এসে কি এখানে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কিছু প্রয়োজন কি না! কী খাবেন আপনারা? অনেক লোক বাইরে আটকে ছিলেন লকডাউনে। তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য কেউ কোনও পদক্ষেপ করেছিলেন?’’
অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপির স্থানীয় সাংসদ দু’বছর কেন্দ্রের মন্ত্রী ছিলেন। একটাও প্রকল্প কি এনেছিলেন? ’’
অভিষেক বলেন, ‘‘ভূমিকম্প দিল্লিতে আসা চাই। যারা ভাগাভাগির কথা বলে, হিন্দু-মুসলমানকে লড়াই করায়, দাঙ্গা করায়, তাদের সরাতে হবে। মোদী বলেন ৪০০ পার। আমি বলি, ওঁদের ৪০৪ ভোল্টের ঝটকা দেওয়া উচিত। যাঁরা আপনার ভোট নিয়ে আপনার উপর জুলুম করে, তাঁদের জবাব দেওয়া উচিত।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘এখানকার বিজেপি সাংসদ এ বার দক্ষিণ কলকাতায় গিয়েছেন লড়তে। এখানকার সাধারণ মানুষ, এমনকি বিজেপি নেতারাও তাঁকে গত পাঁচ বছরে দেখেননি। তিনি এ বার দক্ষিণ কলকাতায় কড়া জবাব পাবেন।’’ এ ভাবেই নাম না করে বিদায়ী সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীকে খোঁচা দেন অভিষেক।
অভিষেক বলেন, ‘‘২০১৪ সাল পর্যন্ত এখানে কংগ্রেসের সাংসদ ছিলেন। তার পরের বার সিপিএমের। গত বার তৃণমূলের প্রার্থী হেরে যান। কারণ, মানুষকে ভুল পথে চালিত করেছেন সিপিএমের মহম্মদ সেলিম এবং কংগ্রেসের দীপা দাশমুন্সি। তাঁদের দু’জনের ভোট তৃণমূল পেলে আমাদের প্রার্থী জয়ী হতেন। ২০১৯ সালে আসলে বিজেপির হাত মজবুত করেছেন ওঁরা।’’