অধীর চৌধুরী এবং হুমায়ুন কবীর। —ফাইল চিত্র।
অধীর চৌধুরীর মতো প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই করার জন্য তাঁর মতো ‘অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদের’ প্রয়োজন। কিন্তু তৃণমূল তাঁকে ‘পদে পদে ছোট’ করছে। প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে বহরমপুরে প্রার্থী করা নিয়ে তৃণমূলকে এ ভাবেই একহাত নিলেন ভরতপুরের দলীয় বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। তাঁর দাবি, ইউসুফকে প্রার্থী করে আদতে অধীরকে সুবিধা করে দেওয়া হল।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রতীকে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন হুমায়ুন। পরে দল বদলে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের টিকিটে ভরতপুরের বিধায়ক হন। তবে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী ছিলেন বলেও দাবি করেছেন। বাংলার ৪২ লোকসভা আসনে তৃণমূল প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করে দেওয়ার পর সাংবাদিক বৈঠক করে দলের রাজ্য এবং জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, বহরমপুরের বিদায়ী সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার ভুয়সী প্রশংসা করেন তৃণমূল বিধায়ক। তাঁর দাবি, বহরমপুর আসনে প্রার্থীপদ থেকে ইউসুফ পাঠানের নাম প্রত্যাহার না করলে অধীরের জয় প্রায় নিশ্চিত।
এখানেই শেষ নয়। লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ওই তৃণমূল বিধায়ক। অন্য দিকে, দলের বিধায়কের এই ‘বিস্ফোরক বক্তব্যের’ প্রেক্ষিতে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব জানান, তাঁরা সবটাই নজরে রাখছেন। এ নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বকেও ওয়াকিবহাল করা হয়েছে।
রবিবার বহরমপুর আসনের প্রার্থী হিসাবে প্রাক্তন ক্রিকেটার ইরফানের নাম ঘোষণা করে চমক দিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু তৃণমূল বিধায়ক মনে করেন, অধীরের মতো দুঁদে রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য তাঁর মতো নেতাকে প্রয়োজন ছিল। সাংবাদিক বৈঠকে হুমায়ুন বলেন, ‘‘তৃণমূলের প্রায় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যাঁরা দলের সঙ্গে রয়েছেন, দলে তাঁদের আজ আর কোনও অস্তিত্ব নেই! মুর্শিদাবাদের যে দু’জন জেলা সভাপতি আছেন, তাঁরা দু’জনে ২০১৬ এবং ’১৯ সালে তৃণমূলে এসেছেন। আর আমাকে যে ভাবে দল ও দলের রাজ্য নেতৃত্ব পদে পদে অসম্মান এবং খাটো করছে, তার যোগ্য জবাব দেব।’’
বহরমপুরে দলের প্রার্থী প্রসঙ্গে হুমায়ুনের বক্তব্য, ‘‘ইউসুফ পাঠান এক জন ভাল ক্রিকেটার। সে দিক থেকে আমার কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু আমার বক্তব্য হচ্ছে, বহরমপুরের মতো জায়গায় অধীর চৌধুরীর মতো প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়তে গেলে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং সাংগঠনিক দক্ষতা প্রয়োজন। তাই অধীরবাবুর বিরুদ্ধে মোকাবিলার জন্য উনি যথেষ্ট নন। প্রার্থী পরিবর্তন না-হলে অধীরবাবুর জয়ের সম্ভাবনাই বাড়বে।’’
এ নিয়ে কি তাঁর সঙ্গে দলের আরও কোনও বিধায়ক বা নেতা কি একই মত পোষণ করেন? হুমায়ুনের জবাব, ‘‘অন্য বিধায়কদের কে কী করবেন, বলতে পারব না। তবে নিয়ামত ভাই (হরিহরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক) এবং আমি এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করব।’’ হুমায়ুনের এই অভিযোগ এবং বক্তব্য প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি উচ্চ নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। উচ্চ নেতৃত্ব বিষয়টির উপরে নজর রাখছেন।’’