Kunal Ghosh Tamoghna Ghosh

ঘোষে-ঘোষে লড়াই উত্তর কলকাতায়, সুদীপ-তাপস যুদ্ধে ‘বিভীষণবৃত্তি’র তোপ দাগছেন কুণাল-তমোঘ্ন

রাজনীতিতে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে এই ধরনের কথা বলা নতুন কোনও কৌশল নয়। এর উদ্দেশ্য একটাই— প্রতিপক্ষের মধ্যে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি করে দেওয়া। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একতরফা থাকেনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:২১
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ঘোষ বনাম ঘোষ। এক দিকে তৃণমূলের কুণাল। অন্য দিকে বিজেপির তমোঘ্ন। কুরুক্ষেত্রের নাম উত্তর কলকাতা।

Advertisement

দুই ঘোষই পরস্পরের বিরুদ্ধে ‘বিভীষণবৃত্তি’র অভিযোগ তুলেছেন। কুণালের দাবি, উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেতাতে ‘সাহায্য’ করছেন বিজেপির উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তমোঘ্ন। পাল্টা তমোঘ্নের দাবি, সুদীপকে হারাতে কুণালই বিজেপির কাছে বিভিন্ন ‘ইনপুট’ পাঠাচ্ছেন। ‘টিপ্‌স’ও দিচ্ছেন। কুণাল এ-ও বলেছেন, তমোঘ্ন যখন তৃণমূলকে এত সাহায্য করছেন, তখন ভোটের পর তমোঘ্নকে দলে ফেরানো যায় কি না, তা নিয়ে নিশ্চয়ই নেতৃত্ব ভাবনাচিন্তা করবেন। পাল্টা বিজেপিকে সাহায্য করার জন্য কুণালকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়েছেন তমোঘ্ন। দু’জনেই দু’জনকে ‘ঘরশত্রু’ হিসাবে তোপ দেগেছেন।

মাস দেড়েক আগে কুণাল যখন সুদীপের বিষয়ে ফোঁস করেছিলেন, তখনও ঘুরিয়ে তমোঘ্ন-প্রসঙ্গ এনেছিলেন। সেই সময়ে কুণাল বলেছিলেন, ‘‘সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির লোক। ওঁকে প্রার্থী করা মানে ৪১টি আসনে তৃণমূল লড়লেও একটি আসনে জোড়াফুল চিহ্নে বিজেপি লড়বে।’’ সুদীপের সঙ্গে বিজেপির সুসম্পর্ক এবং নিয়মিত যোগাযোগ বোঝাতে গিয়ে কুণাল বলেছিলেন, ‘‘উনি নিজের আপ্ত সহায়কের ছেলেকে (তমোঘ্ন) বিজেপিতে রেখে দিয়েছেন।’’ যদিও দলের বার্তা, সুদীপের ফোন, তার পর তাঁর বাড়িতে ফিশফ্রাই, জলভরা সন্দেশ খাওয়ার পর কুণালের সুর বদলাতে থাকে। এখনও যেমন তিনি পরোক্ষে খানিকটা সন্দেহের বীজ বপন করে দিয়েও বলছেন, সুদীপ তৃণমূলেরই প্রার্থী। সুদীপ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী। সেই সঙ্গে বিঁধেছেন তমোঘ্নকে।

Advertisement

রাজনীতিতে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে এই ধরনের কথা বলা নতুন কোনও কৌশল নয়। এর উদ্দেশ্য একটাই— প্রতিপক্ষের মধ্যে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি করে দেওয়া। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একতরফা থাকেনি। কুণাল যেমন বলেছেন, পাল্টা তমোঘ্নও বলেছেন।

কুণালের কথায়, ‘‘আমাদের ছেলেরা তো বিজেপির সভাপতির প্রশংসা করছে। ও নাকি সাহায্য-টাহায্য করছে। দেওয়াল ছেড়ে দিচ্ছে। তাপস রায়কে হারানোর জন্য কাজ করছে। ওদের কোন একটা হল-এ সভা না কী হয়েছিল, সেখান থেকেই খবর এসেছে। কিছু লোককে বসিয়ে দিয়েছে শুনলাম। আমি অবশ্য সব দলকেই বলব, ভোটটা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দিন।’’ পাল্টা তমোঘ্ন বলেন, ‘‘তাপস রায়কে জেতাতে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আমায় দায়িত্ব দিয়েছেন। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হারবেন। তাপস রায়কে জিতিয়ে দেখাব। বাজি ধরে রাখলাম!’’ উত্তর কলকাতার বিজেপি জেলা সভাপতি আরও বলেন, ‘‘বরাহনগর উপনির্বাচন এবং উত্তর কলকাতার নির্বাচনে তৃণমূলকে হারানোর জন্য কুণাল ঘোষই আমাদের কাছে ইনপুট পাঠাচ্ছেন। ওঁকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।’’ সেখানেই থামেননি তমোঘ্ন। তাঁর দাবি, কুণাল জেলে যাওয়ার আগে এবং জেল থেকে বেরিয়ে বিজেপির কার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, দক্ষিণ দিল্লিতে কার ফ্ল্যাটে যেতেন, প্রয়োজন হলে তা ফাঁস করে দেবেন। কুণালের সেই সমস্ত বৈঠকের সিসিটিভি ফুটেজও পদ্মশিবিরের কাছে রয়েছে বলে দাবি তমোঘ্নের।

গোটা বিষয়টি নিয়ে সুদীপ বলেন, ‘‘উত্তর কলকাতার মধ্যে ৬০টি ওয়ার্ড পড়ে। তার মধ্যে ৫৬টি তৃণমূলের জেতা। তিনটি বিজেপির, একটি কংগ্রেসের। আমাদের সব কাউন্সিলর সক্রিয়। কোথায় হারাবে আমায়?’’ বলে হাসতে শুরু করেন প্রবীণ রাজনীতিক। সেই সঙ্গে উত্তর কলকাতার তিন বারের সাংসদ তথা এ বারের তৃণমূল প্রার্থী বলেন, ‘‘আমার বাইরের কারও সাহায্য লাগবে না। আমার কর্মীদের পরিপূর্ণ সাহায্য আমি পাচ্ছি।’’

বিজেপি প্রার্থী তাপস রায় আবার বলেছেন, ‘‘তমোঘ্ন আমাদের জেলা সভাপতি। বিজেপি আর পাঁচটা রাজনৈতিক দলের মতো নয়। এখানে প্রত্যেক স্তরের নেতাদের নজরদারির মধ্যে থাকতে হয়। আমার মনে হয় না কুণালের কথা সঠিক।’’ তাপস আরও বলেন, ‘‘আমি তো শুনেছি আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী নাকি অনেক চেষ্টা করেছেন, যাতে আমি উত্তর কলকাতায় না দাঁড়াতে পারি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement