আমডাঙায় বিক্ষোভ সামাল দিতে পার্থ ভৌমিকরা। — নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের দাপুটে নেতাকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে। তার প্রতিবাদে আগুন জ্বলল উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙায়। প্রতিবাদে নেতার অনুগামীরা থানা ঘেরাও করেন, দীর্ঘ ক্ষণ অবরোধ করে রাখেন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক-সহ এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব গিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত আহত নেতাকে নিয়ে এসে অনুগামীদের শান্ত করাতে হয়।
দলেরই কয়েক জনের সঙ্গে চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলেন আমডাঙা ব্লকে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ মণ্ডল। আচমকাই গোলমালের শব্দ পেয়ে দোকানের বাইরে এসে তিনি দেখেন, তাঁর পরিচিত এক ব্যক্তিকে মারধর করছে পুলিশ। বাঁচাতে গেলে মোস্তাকও পড়ে যান পুলিশের নজরে। অভিযোগ, তখনই মোস্তাককে রাস্তায় ফেলে লাঠিপেটা করে পুলিশ। মারের চোটে হাত ভেঙে যায় মোস্তাকের। নেতার অনুগামীদের দাবি, সেই অবস্থায় মোস্তাককে তুলে আমডাঙা থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
অন্য দিকে, মোস্তাকের মার খাওয়ার কথা রটে যেতেই এলাকায় চলে আসেন বহু তৃণমূল সমর্থক। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। মুহূর্তে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় আমডাঙা। থানাতেও বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন মোস্তাকের অনুগামীরা। গোলমালের খবর পেয়ে আমডাঙা থানার সামনে হাজির হন পার্থ, জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম, বীজপুরের বিধায়ক সুবোধ অধিকারী, আমডাঙার বিধায়ক রফিকুর রহমান প্রমুখ। পার্থ মোস্তাকের অনুগামীদের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অবরোধ তুলে নিতে বলেন। কিন্তু মোস্তাকের অনুগামীরা তা মানতে চাননি। শেষ পর্যন্ত মোস্তাককে হাসপাতালে থেকে অকুস্থলে নিয়ে আসা হয়। হাতে প্লাস্টার বাঁধা অবস্থায় মোস্তাক নিজের অনুগামীদের কাছে অবরোধ তুলে নেওয়ার আর্জি জানান। তাতে কাজ হয়। ঘণ্টা দুয়েক চলার পর রাত ১২টা নাগাদ অবরোধ উঠে যায়। আবার যানচলাচল শুরু হয় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে আহত তৃণমূল নেতা মোস্তাক বলেন, ‘‘পার্থ ভৌমিকের লোকেদের সঙ্গে চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম আর আলোচনা করছিলাম। বাইরে গোলমালের আওয়াজ শুনে পার্থ-ঘনিষ্ঠ এক জন দোকান থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখতে যান। তখন পুলিশ ওঁকে মারধর করতে শুরু করে। আমি বাঁচাতে গেলে আমাকেও ফেলে মারধর শুরু হয়। আমাকে গোটা শরীরে রুল দিয়ে মেরেছে। মেরে হাত ভেঙে দিয়েছে। যারা আমাকে মারল, তাদের অনেককেই আমি চিনি। তাদের কাছে জানতে চাইব, কেন আমাকে মারা হল! আমি তো কোনও অন্যায় করিনি। আমডাঙা থানার আইসির মনোভাব ভাল লাগল না।’’
যদিও এর নেপথ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আছে বলেই দাবি মোস্তাকের অনুগামীদের। মোস্তাক অনুগামীদের দাবি, স্থানীয় বিধায়ক রফিকুর রহমান পুলিশকে দিয়ে মোস্তাককে মার খাইয়েছেন। এর কারণ হিসাবে তাঁরা বলছেন, ইদানীং রফিকুর ব্যারাকপুরের বিদায়ী সাংসদ অর্জুন সিংহের ‘ঘনিষ্ঠ’ হয়েছেন। তাই তিনি চাইছেন, তৃণমূলে অন্তর্ঘাত করতে। মোস্তাকের জন্য তা করতে না পারায় রাগ। সেই রাগ থেকেই পরিকল্পনা করে তাঁকে পুলিশকে দিয়ে পিটিয়ে দেওয়া হল। রবিপুরের বাসিন্দা কিসমত আলি মোস্তাকের অনুগামী। হাসপাতালে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘মানুষ মোস্তাকের পক্ষে আর আমাদের বিধায়ক রফিকুর রহমান অর্জুন সিংহের পিছন পিছন ঘুরছেন। আজ বিধায়ক নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পুলিশকে দিয়ে মোস্তাক সাহেবকে মার খাইয়েছেন। ওর অর্জুনের সঙ্গে লাইন, অর্জুনকে ভালবাসেন। পরশু দিনই দেখলাম, অর্জুন আগে যাচ্ছেন, পিছনে রফিকুর। মোস্তাক সাহেবকে মারার ঘটনায় দায়ী আমাদেরই বিধায়ক।’’
অর্জুন পাল্টা দায় চাপিয়েছেন পার্থের উপর। মোস্তাককে ‘ভাল সংগঠক’ হিসাবে অভিহিত করে বিজেপি প্রার্থী অর্জুন বলেন, ‘‘পার্থ ভৌমিক মোস্তাককে মার খাইয়েছেন। মোস্তাকের মতো ছেলে, অত ভাল সংগঠক, তাঁকে পুলিশ এমনি এমনি মারবে, এটা কে বিশ্বাস করবে? পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে মোস্তাককে মার খাইয়েছে। তার পর মলম লাগাতে হাসপাতালে গিয়েছে! মোস্তাকদের এ বার বোঝা উচিত, পার্থ ভৌমিক কারও না।’’
যদিও গোটা ঘটনায় সংবাদমাধ্যমকে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি নৈহাটির বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী এবং ব্যারাকপুর লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী পার্থ।